'জিএসপি স্থগিত রাজনৈতিক নয়'

১০ দেশের কূটনীতিকেরা বিজিএমইএর আমন্ত্রণে গতকাল গাজীপুরে তিনটি তৈরি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করেন। ইপিলিয়ন নিটেক্স কারখানা পরিদর্শনের আগে বিজিএমইএর নেতারাসহ অন্যদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন কূটনীতিকেরা l ছবি বিজিএমইএর সৌজন্যে
১০ দেশের কূটনীতিকেরা বিজিএমইএর আমন্ত্রণে গতকাল গাজীপুরে তিনটি তৈরি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করেন। ইপিলিয়ন নিটেক্স কারখানা পরিদর্শনের আগে বিজিএমইএর নেতারাসহ অন্যদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন কূটনীতিকেরা l ছবি বিজিএমইএর সৌজন্যে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপি রাজনৈতিক কারণে স্থগিত হয়নি বলে দাবি করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাট।‘
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর শ্রমিক অধিকার ও নিরাপত্তা ইস্যুতে জিএসপি স্থগিত করা হয়েছে। তবে সুবিধাটি ফিরে পেতে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া কর্মপরিকল্পনার ১৬টি শর্ত পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ জিএসপি ফিরে পাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

>গাজীপুরে তিনটি তৈরি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করে অভিভূত বিদেশি ১০ কূটনীতিক

গাজীপুরে দুটি গ্রুপের তিনটি কমপ্লায়েন্ট বা উন্নত কর্মপরিবেশসম্পন্ন তৈরি পোশাক কারখানা পরিদর্শন শেষে গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মার্শিয়া বার্নিকাট। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর আমন্ত্রণে এই পরিদর্শনে আরও ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), কানাডা, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ব্রাজিল ও ফ্রান্সের ১০ রাষ্ট্রদূত ও চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত জিএসপি স্থগিতের পেছনে রাজনৈতিক কারণ যুক্ত নয় এমন দাবি করলেও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক কারণ ছাড়া আর কিছু দেখছি না।’
গত রাতে যোগাযোগ করলে তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (মার্শিয়া বার্নিকাট) তাঁর কথা বলেছেন, আমি আমার কথা বলেছি।’ বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘১২২ দেশের জিএসপি স্থগিত ছিল, তাদেরটা ফিরিয়ে দেওয়া হলো। আর আমাদেরটা স্থগিত ছিল, বাতিলও হয়নি। গত দুই বছরে আমরা যথেষ্ট উন্নতি করেছি। তাদের দেওয়া শর্ত পূরণ করেছি। এই সময়ে কোনো দুর্ঘটনাও ঘটেনি। তারপরও আমাদের জিএসপি দেওয়া হলো না। এটিকে তাহলে কী বলব? রাজনৈতিক বলব না?’
এদিকে গাজীপুরে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বার্নিকাট আরও বলেন, ‘গত দুই বছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো জিএসপি ফিরে পেতে কর্মপরিবেশ ও শ্রমিক অধিকারের বিষয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছায়নি। আমি আশা করি, বাংলাদেশ এটি অর্জন করতে পারবে এবং সে জন্য তারা কাজ করছে।’
কোন কোন জায়গায় উন্নতি করতে হবে, সে বিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, কারখানা পর্যায়ে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন হলেও সেটি ধীরগতিতে হচ্ছে। অনেক শ্রমিকই অধিকার আদায়ে কথা বললে চাকরিচ্যুতির শিকার হচ্ছেন। তথ্যভান্ডারে সব ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে কি না, সেটিও দেখতে হবে। সব মিলিয়ে জিএসপি ফিরে পেতে শ্রমিকদের উচ্চ কণ্ঠস্বর থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন কারখানার নিরাপত্তা মান উন্নত করা।
কূটনীতিকেরা গতকাল বেলা ১১টার দিকে গাজীপুরের দক্ষিণ শালনায় ইউটাহ ফ্যাশন নামের কারখানায় পৌঁছান। এ সময় তাঁদের স্বাগত জানান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজ্জাক সাত্তার। কূটনীতিকেরা পুরো এক ঘণ্টা ধরে কারখানাটির সেলাই ও প্রিন্টিং বিভাগ, শ্রমিকদের খাবার ঘর ও চিকিৎসাকেন্দ্র ঘুরে দেখেন।
রাজ্জাক সাত্তার প্রথম আলোকে জানান, ইউটাহ ফ্যাশনে চার হাজার শ্রমিক কাজ করেন। বছরে তাঁদের রপ্তানির পরিমাণ সাড়ে তিন কোটি মার্কিন ডলার। তাঁরা এইচ অ্যান্ড এম, জেসি পেনি, টেসকো, নেক্সটসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত ব্র্যান্ডের জন্য পোশাক তৈরি করেন। আমদানি করা তুলা দিয়ে সুতা, কাপড় ও পোশাক তৈরি করায় ইউটাহর মূল্য সংযোজন (ভ্যালু এডিশন) বেশি হয় বলে জানান তিনি।
কূটনৈতিকেরা পরে জেলার ভাওয়াল মির্জাপুর এলাকার ইপিলিয়ন গ্রুপের ইপিলিয়ন নিটেক্স কারখানায় যান। গ্রুপের এমডি রিয়াজ উদ্দিন আল-মামুন কূটনীতিকদের স্পিনিং, নিটিং, ওয়াশিং ও ইটিপি ঘুরিয়ে দেখান। পরে ওই এলাকাতেই গ্রুপের পরিবেশবান্ধব কারখানা ‘ইপিলিয়ন স্টাইল’ ঘুরে দেখেন কূটনীতিকেরা।
গ্রুপের পরিচালক জুনাইদ আবু সালেহ মুসা প্রথম আলোকে জানান, কারখানা দুটিতে সাড়ে পাঁচ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এতে বিশ্বের প্রথম সারির বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের জন্য প্রতিদিন ৫০ হাজার পিস পোশাক তৈরি হয়। বার্ষিক রপ্তানির পরিমাণ ১০ কোটি ডলার।
পরিবেশবান্ধব এই কারখানাতেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন কূটনীতিকেরা। ইইউর রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন বলেন, ‘কারখানাগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থা খুবই প্রশংসনীয়। সত্যিই আমরা সবাই খুশি।’
অন্যদিকে মার্শিয়া বার্নিকাট বলেন, ‘বাংলাদেশের পোশাক কারখানা সম্পর্কে আমার উচ্চমানের ধারণা ছিল। আজকে (কাল) এই তিন কারখানা পরিদর্শনের পর সেটি আরও স্পষ্ট হলো। প্রত্যেক শ্রমিকই চান ভালো পরিবেশে কাজ করতে। এই কারখানাগুলো অন্যদের জন্য
আদর্শ হয়ে থাকবে। একই সঙ্গে অন্য পোশাকমালিকদেরও আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে উৎসাহ জোগাবে এই কারখানাগুলো।’
এ সময় কূটনীতিকেরা ছাড়াও বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম, সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম, পরিচালক মোহাম্মদ নাসির, সাবেক সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।