একীভূত হচ্ছে দুই ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান

বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ড (বিওআই) নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সন্তুষ্টি ছিল না। আর বেসরকারি কমিশন কার্যত অচল। এই দুই ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিগ) গঠন করা হচ্ছে। এর নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এর অনুমোদন দেওয়া হয়। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পরিচালনার জন্য এ-সংক্রান্ত আইনের আওতায় ১৭ সদস্যের একটি পরিচালনা বোর্ড থাকবে। বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন প্রধানমন্ত্রী, আর ভাইস চেয়ারম্যান হবেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া একজন নির্বাহী পরিচালক থাকবেন।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, বেসরকারি কমিশন প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে পারছিল না। এ জন্য আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে এই কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে। নতুন কর্তৃপক্ষ ব্যবসাবান্ধব হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের জমি আর বিক্রি করা হবে না। অব্যবহৃত জমির তালিকা তৈরি করে তা ব্যবহারের নীতিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার থাকবে আইনের আওতায় এবং সেবা নিশ্চিত করতে একটি কমিটি থাকবে। একীভূত হলেও বিনিয়োগ বোর্ডের ২৯৩ জন ও বেসরকারীকরণ কমিশনের ৭০ জন জনবলের সবাই চাকরিতে বহাল থাকবেন। আইনটি কার্যকর হওয়ার পর ওই দুটি বোর্ড ও কমিশন বিলুপ্ত হবে।
দুই সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে পরিচালনা করছেন মূলত প্রেষণে আসা কর্মকর্তারা। বর্তমান সরকারের গত শাসনামল থেকে বিনিয়োগ বোর্ডে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও বেসরকারীকরণ কমিশনে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় একজন চেয়ারম্যানকে নিয়োগ দিয়ে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারীকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন আনা হলেও বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে সৈয়দ আবদুস সামাদ বহাল রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান বর্তমানে বেসরকারীকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান।
বেসরকারীকরণকে উৎসাহিত করতে ১৯৯৩ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের শাসনামলে বেসরকারীকরণ বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০০ সালে এটি কমিশন হয়। গত ১৫ বছরে এই কমিশন ৫৮টি প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারীকরণ ও ২৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বেসরকারি খাতের বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি (অফলোড) করেছে। এর মধ্যে কমিশন গত চার বছরে মাত্র একটি প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরণ ও একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার অফলোড করেছে। মূলত বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই কমিশনের কার্যত কোনো কর্মকাণ্ড ছিল না।
বেসরকারি খাতে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালে বিনিয়োগ বোর্ড গঠন করা হয়। বিনিয়োগ বোর্ডেরও উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মকাণ্ড নেই। একীভূত সেবা বা ওয়ান স্টপ সার্ভিস নামেমাত্রই চালু।

>

অভিমত

এ কে আজাদ, সাবেক সভাপতি, এফবিসিসিআই
এ কে আজাদ, সাবেক সভাপতি, এফবিসিসিআই

বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারি কমিশনের একীভূত করার সরকারি সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। বেসরকারি কমিশন নামে মাত্র ছিল। কোনো কার্যক্রম ছিল না। বিশাল অফিস নিয়ে সরকারের টাকা অপচয় করা ছাড়া কিছুই করেনি কমিশন। চাকরি টিকিয়ে রাখতেই নিয়মিত অফিস করেছেন কর্মকর্তারা। অন্যদিকে নতুন কোম্পানির নিবন্ধন ও কয়েকটি সেমিনার আয়োজন ছাড়া বিনিয়োগ বোর্ডের আর কোনো কাজ নেই।
জানতে চাইলে গতকাল এসব কথা বলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ। বেসরকারি কমিশনের কাছ থেকে টঙ্গীর নিশাত জুটমিল কিনেছিলেন তিনি। হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এই শিল্প উদ্যোক্তা বলেন, সরকার সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বন্ধ কলকারখানা দেশি ও বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করে দেবে। কারণ এ জন্য প্রতিবছর ছয় হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে সরকারকে। এগুলো চালু হলে বহু লোকের কর্মসংস্থান হবে। দেশের জিডিপির আকার বাড়বে।
নতুন বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করলে প্রথমেই উচিত হবে সরকারের বন্ধ কলকারখানার জমির একটি তালিকা করা। পরে এসব জমিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে গ্যাস-বিদ্যুৎ নিশ্চিত করে উদ্যোক্তাদের দিলে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।