পশুর সংকট হবে না, বাড়বে না পণ্যমূল্যও

চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত মজুত থাকায় পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর সংকট হবে না। পশুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও স্বাভাবিক থাকবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী দেশে ৩০ লাখ গরু-মহিষ ও ৬৯ লাখ ছাগল-ভেড়া আছে। ফলে ভারত থেকে গরু না এলেও কোরবানির পশুর সংকট হবে না, দামও স্বাভাবিক থাকবে। সরকার গবাদিপশুর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। দেশেই এখন প্রচুর পশু উৎপাদন হচ্ছে। ভবিষ্যতে চাহিদা পূরণের পর এসব পশু রপ্তানি করতে সক্ষম হবে বাংলাদেশ।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে অনুষ্ঠিত এক সভায় এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সম্মেলনকক্ষে গতকাল সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সভাটির আয়োজন করে। সভায় সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা, উৎপাদনকারী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের নেতা এবং আমদানিকারকেরা উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। সরবরাহব্যবস্থায় যাতে কোনো সমস্যার সৃষ্টি না হয়, সে জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত রমজানে বাজার যেমন স্থিতিশীল ছিল, কোরবানির ঈদেও তা বজায় থাকবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী দেশে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার কারণে দেশে দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি হওয়ায় ইতিমধ্যে দাম কমেছে। পেঁয়াজ আমদানির জন্য ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমিয়ে ১১ শতাংশ করা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে মূল্য স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
ঢাকার শ্যামবাজারের পেঁয়াজ আমদানিকারক হাফিজুর রহমান বলেন, তিন দিন ধরে পেঁয়াজের দাম কমেছে। গতকাল (রোববার) পাইকারিতে পাকিস্তান ও মিয়ানমারের পেঁয়াজের কেজি ৫০ থেকে ৫২ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে এর প্রতিবাদ করে মোহাম্মদপুরের টাউন হল খুচরা বাজারের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব একটি চালান দেখিয়ে বলেন, গত রোববার ৭০ টাকায় দেশি পেঁয়াজ কিনেছেন। তিনি বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীদের আগে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারণ তাঁদের কারণেই দাম বাড়ে, কিন্তু দায় বর্তায় খুচরা ব্যবসায়ীদের ওপর।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমদ বলেন, ঈদের বাজারে পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসায়ীরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা রক্ষা করবেন। তিনি পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের প্রণোদনা ও কাঁচামরিচের ওপর বাজার পরিস্থিতি বুঝে শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেন।
পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, সরবরাহব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতার কারণে ভোজ্যতেলের কিছুটা ঘাটতি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তিনি সরকারের সহযোগিতা চান। বাণিজ্যমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
বাণিজ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত রমজানের ঈদের অনেক পণ্য আমদানি করা হয়েছে। সেসব পণ্য এখনো বিক্রি শেষ হয়নি। পরে আরও পণ্য এসেছে। এমন অবস্থায় দাম স্বাভাবিক থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে কেউ কারসাজি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের সমস্যা হলে সহযোগিতা করা হবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অমিতাভ চক্রবর্তী, নাজনীন বেগম, শওকত আলী ওয়ারেসি ও জহির উদ্দিন আহমেদ, টিসিবির চেয়ারম্যান এ কে এম ইকবাল, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসু, সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, টিকে গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কামাল, মেঘনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল প্রমুখ।