বিনিয়োগে বড় বাধা দুর্নীতি আমলাতন্ত্র ও অবকাঠামো

বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ডেভিড মিলি বলেছেন, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, অর্থের সীমাবদ্ধতা, দুর্নীতি ও আমলাতন্ত্রই হচ্ছে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসার ক্ষেত্রে বড় বাধা।
মার্কিন এই কূটনীতিক আরও বলেছেন, ধীর গতির বিচারব্যবস্থার পাশাপাশি কার্যকর বিকল্প নিষ্পত্তির ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবসা-সংক্রান্ত বিরোধ-মীমাংসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশও বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাধা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশের (অ্যামচেম) মধ্যাহ্নভোজ সভায় মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এ কথা বলেছেন। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে গতকাল বুধবার এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান বক্তাই ছিলেন তিনি। এ ছাড়া বক্তব্য দেন অ্যামচেমের সহসভাপতি কেভিন লায়ন ও নির্বাহী পরিচালক এ গফুর। অনুষ্ঠানে মার্কিন দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠন ও চেম্বার নেতা এবং কয়েকজন ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে ‘ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট স্টেটমেন্ট ২০১৫’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে ইউএস কমার্স ডিপার্টমেন্ট ও ফরেন এগ্রিকালচার সার্ভিসের করা প্রতিবেদনটি গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। এতে উঠে আসা ফলাফলের সূত্র ধরেই ডেভিড মিলি বিনিয়োগের বাধাগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই প্রতিবেদনটি ব্যবসা ও বিনিয়োগের বাধাগুলো দূর করতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র—উভয় দেশের সরকারকেই সহায়তা করবে।
মার্কিন কূটনীতিক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বাড়ানোর সম্ভাবনা দেখছে ও সেটি নিয়ে কাজ করছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানি ১১ শতাংশ বেড়েছে। তার মানে প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ পণ্য কিনেছে যুক্তরাষ্ট্র।’
বাংলাদেশের সম্ভাবনার বিষয়টি তুলে ধরেন মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স। বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। আছে কর্মঠ ও তরুণ এক বিরাট কর্মী বাহিনী। বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে আছে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা। দেশটিতে বিনিয়োগের সুযোগ আছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ, ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন। এ ছাড়া শ্রমনিবিড় খাত যেমন তৈরি পোশাক, গৃহস্থালি বস্ত্র ও চামড়া প্রক্রিয়াকরণে বিনিয়োগের সম্ভাবনা আছে।
পরে ডেভিড মিলি প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোক্তাদের প্রথম আগ্রহ অবশ্যই বিদ্যুৎ ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ। অন্যদিকে ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা মেটাতে মার্কিন প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ আছে। মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছালে এই চাহিদা বাড়বে। পাশাপাশি অন্যান্য খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহ আছে মার্কিন উদ্যোক্তাদের। যেমন তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়াশিল্প, যেখানে বিনিয়োগ সুযোগ আছে।