মূল্যস্ফীতি আরও কমেছে!

>শাকসবজি, পেঁয়াজ, মাছ, ডিমের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব মূল্যস্ফীতিতে নেই, বিবিএসের দাবি, মোটা চালের দাম কমায় মূল্যস্ফীতি কমেছে

আগস্ট মাসে ভোগ্যপণ্যের দামের আগুনে পড়েছে নিম্নবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষ। শাকসবজি, মাছ, পেঁয়াজ, ডিম, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন নিত্য ভোগ্যপণ্যের দাম বেশ বেড়েছে। কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, মাসওয়ারি ভিত্তিতে আগস্ট মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমেছে। এ মাসে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। এর আগের মাসে ছিল ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। 

এ হিসাব বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)। বিবিএসের আরেকটি হিসাবে বলা হয়েছে, ডাল, ডিম, মাছ, মাংস, শাকসবজি, মসলা ও তামাকের দাম গত জুলাই মাসের তুলনায় আগস্ট মাসে ১ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়েছে। আর বাড়িভাড়া, আসবাব ও গৃহস্থালি, চিকিৎসাসেবা, পরিবহন, শিক্ষা উপকরণসহ বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দাম একই সময়ে বেড়েছে দশমিক ০৭ শতাংশ।
গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা দাবি করেন, মোটা চালের দাম আগস্ট মাসে এক টাকা কমে ৩৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর চাল কিনতেই একজন মানুষকে ভোগ্যপণ্যের পেছনে ব্যয়ের ৮০ শতাংশ খরচ করতে হয়। তাই চালের দাম কমায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমেছে।
কিন্তু চালের দাম নিয়ে বিবিএসের সঙ্গে আরেক সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) হিসাবে গরমিল রয়েছে। টিসিবির হিসাবে, গত আগস্ট মাসে চালের দাম কমেনি, স্থিতিশীল ছিল। রাজধানীর বাজারে মোটা চালের দাম ৩০ থেকে ৩৪ টাকার মধ্যে ঘোরাঘুরি করেছে। আগের মাসেও একই দামে মোটা চাল বিক্রি হয়েছে।
বিবিএসের হালনাগাদ পরিস্থিতি থেকে দেখা গেছে, আগস্ট মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে ৬ দশমিক ০৬ শতাংশ হয়েছে। জুলাই মাসে এ হার ছিল ৬ দশমিক ০৭ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। জুলাই মাসে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, চালের দাম বাড়েনি। তাই পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা মরিচের দাম বাড়লেও তা মূল্যস্ফীতিতে খুব বেশি প্রভাব ফেলেনি। কেননা একজন ভোক্তার মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যয় কাঠামোতে এসব ভোগ্যপণ্যের অংশীদারত্ব কম। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছে, যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করেছে। তিনি জানান, সরকারের লক্ষ্য হলো, মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের নিচে যাতে না নামে, আবার সাড়ে ৬ শতাংশের ওপরে যাতে না ওঠে।
বিবিএসের প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি। গত আগস্ট মাসে শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ, আর গ্রামে ছিল এ হার ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
আবার মানুষের আয় কতটা বাড়ল কিংবা কমল, তা জাতীয় মজুরি হার সূচক দিয়ে বোঝানো হয়। বিবিএসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১০-১১ ভিত্তিবছর ধরে গত আগস্ট মাসে জাতীয় মজুরি হার সূচক ছিল ১২৯ দশমিক ৩৩, যা ২০১৪ সালের আগস্ট মাসের তুলনায় ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ, যে হারে মূল্যস্ফীতি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হারে মজুরি বেড়েছে।