লিজিং কোম্পানিতেও রাখা যাবে সরকারি আমানত

দেশে প্রথমবারের মতো অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও (লিজিং কোম্পানি) সরকারি অর্থ জমা রাখার সুযোগ তৈরি করল সরকার।
সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি লিজিং কোম্পানিতেও এখন টাকা জমা রাখতে পারবে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো। তবে সুযোগটি দেশের সব লিজিং কোম্পানির জন্য নয়। এ জন্য ১৩টি লিজিং কোম্পানিকে বেছে নিয়েছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গত ২৫ আগস্ট এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। দুই বছরের জন্য করা এই প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার দিন থেকেই কার্যকর।
যোগাযোগ করলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলম গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব লিজিং ও ফিন্যান্স কোম্পানির সার্বিক অবস্থা অন্যদের তুলনায় ভালো, সরকারি আমানত জমা রাখার জন্য তাদেরই চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সংস্থাগুলো তাদের মোট নিজস্ব আমানতের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ অর্থ বেসরকারি ব্যাংক বা লিজিং কোম্পানি অথবা উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানে রাখতে পারবে। আর এসব সংস্থার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় থাকা প্রকল্পের জন্য সরকার যে অর্থ দেবে, বেসরকারি ব্যাংক বা লিজিং কোম্পানি অথবা উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে তারা জমা রাখতে পারবে তহবিলের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকে এসব সংস্থা তাদের মোট আমানত বা এডিপির তহবিলের কত অংশ জমা রাখতে পারবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলা নেই প্রজ্ঞাপনে। তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানির অংশ বাদ দিয়ে যা বাকি থাকবে, তা তারা জমা রাখবে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে। সে হিসেবে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ভাগে পড়ে সংস্থাগুলোর মোট নিজস্ব আমানতের ৭৫ শতাংশ এবং এডিপি তহবিলের ৮০ শতাংশ।
লিজিং খাতকে সরকারি আমানত জমা রাখার জন্য বিবেচনা করায় স্বাগত জানিয়েও কোম্পানি বাছাইয়ের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিএলএফসিএ)। যোগাযোগ করলে বিএলএফসিএর সভাপতি আসাদ খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দুই বছর ধরে লিজিং ও ফিন্যান্স কোম্পানিতে সরকারি সংস্থার আমানত জমা রাখার দাবি জানিয়ে আসছি। সরকার প্রথমবারের মতো এ দাবি আমলে নেওয়ায় ভালো লাগছে। তবে গোটা খাতের জন্য হলো না, এটা হলো হতাশার বিষয়।’
যে ১৩টি লিজিং কোম্পানিতে সরকারি সংস্থাগুলো আমানত জমা রাখতে পারবে, সেগুলো হচ্ছে: বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্স, আইডিএলসি ফিন্যান্স, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স, ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, লংকাবাংলা ফিন্যান্স, ন্যাশনাল ফিন্যান্স, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স ও উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
দেশে বর্তমানে ৩২টি লিজিং কোম্পানি রয়েছে। ব্যাংকের মতো এই কোম্পানিগুলোরও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিএলএফসিএর সভাপতি আসাদ খান আরও বলেন, ১৩টি কোম্পানিকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা হয়েছে, প্রজ্ঞাপনে তা স্পষ্ট নয়। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের হার কম থাকা, আয় প্রবৃদ্ধি বা মূলধন পর্যাপ্ততা যদি বিবেচনায় নেওয়া হয়, তাহলে ১৩টির বাইরেও কিছু কোম্পানি রয়েছে, যারা সরকারি আমানত পাওয়ার যোগ্য।
ছয় মাস বা এক বছর পর কারও অবস্থা তুলনামূলক খারাপ হয়ে গেলে বা কেউ তুলনামূলক ভালো করলে নতুন তালিকা করা উচিত বলে মনে করেন আসাদ খান। এ ব্যাপারে সচিব আসলাম আলম বলেন, ‘ভালো পরামর্শ। সেটি হতেই পারে এবং আমরা চেষ্টা করব। তবে এ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ব্যাংকেরই পরামর্শ নেওয়া হবে।’