ঢালাওভাবে আর ঋণ পুনঃ তফসিল নয়

ঢালাওভাবে ব্যাংকঋণ পুনঃ তফসিল না করতে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান। ঋণ পুনঃ তফসিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে গভর্নর বলেছেন, দেশে এখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। তাই বিশেষ বিবেচনায় ঋণ পুনঃ তফসিলের সুযোগ বন্ধ করার এটাই ভালো সময়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলনকক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় গভর্নর এসব কথা বলেন। সভায় দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় জানানো হয়, গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ৬০০ থেকে ৭০০ প্রতিষ্ঠানের ঋণ পুনঃ তফসিলের অনাপত্তি দিয়েছে। কিন্তু এখন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে পুনঃ তফসিলের সিদ্ধান্ত না নিয়ে নির্ধারিত নীতিমালা অনুসরণের কথা বলেন গভর্নর।

গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয় ও কলেজগামী ছাত্রীদের সাইকেল কেনা এবং অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি করার জন্য স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণপণ্য চালুর জন্যও ব্যাংকারদের বলা হয়। সরকারি, আধা সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতার ভিত্তিতে কিস্তি পরিশোধে সক্ষম ব্যক্তিদের ফ্ল্যাট কেনার ঋণ দেওয়া যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতেও আহ্বান জানানো হয় ব্যাংকারদের।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআরের আওতায় সম্মিলিত উদ্যোগে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আধুনিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে উপস্থিত ব্যাংকারদের আহ্বান জানান গভর্নর। যাতে ওই হাসপাতালে আর্থিক খাতের কর্মী ও তাঁদের পোষ্যরা কম খরচে চিকিৎসাসেবা নিতে পারেন। এ জন্য প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে কমিটি গঠনের কথাও বলা হয়।

ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে এখন থেকে সতর্ক হওয়ার জন্য ব্যাংকারদের পরামর্শ দেওয়া হয় গতকালের সভায়। মঞ্জুর হওয়া ঋণ একবারে বা এক চেকে না দিয়ে ধাপে ধাপে দেওয়ার পরামর্শ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সে ক্ষেত্রে বিতরণ করা ঋণের ব্যবহার নিশ্চিত হয়ে পরবর্তী কিস্তি পরিশোধের কথা বলা হয়। এ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেছেন, ঝুঁকি নিয়ে আয় ও মুনাফা বাড়ানোর দিকে নজর না দিয়ে ঋণ বিতরণে যথাযথ নিয়মকানুন মেনে গুণগত মানসম্পন্ন ঋণ বিতরণে মনোযোগ দিতে হবে।

পাশাপাশি ব্যাংকের লোকসানি শাখাগুলোকে লাভজনক করার জন্য ব্যাংকের নির্বাহীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয় সভায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় ব্যাংকিং উৎসব আয়োজনের পরিকল্পনার কথাও জানানো হয়।

প্রবাসী-আয় নিম্নমুখী: সর্বশেষ গত আগস্ট মাসের যে তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশ করেছে, তাতে প্রবাসী-আয় বা রেমিট্যান্স নিম্নমুখী ধারায় রয়েছে। গত জুলাইয়ের চেয়ে আগস্টে প্রবাসী-আয় প্রায় ২০ কোটি মার্কিন ডলার কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, আগস্ট মাসে প্রবাসী-আয় এসেছে প্রায় ১১৯ কোটি ডলার। গত জুলাইয়ে এ পরিমাণ ছিল প্রায় ১৩৯ কোটি ডলার। সেই হিসাবে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে দেশে প্রায় ২৫৮ কোটি ডলার প্রবাসী-আয় এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবাসী-আয়সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, গত জুলাই অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহে নিম্নমুখী ধারা রয়েছে। জুলাই মাসে প্রবাসী-আয় জুনের চেয়ে প্রায় পাঁচ কোটি ডলার কমেছিল। আগস্টে তা আগের মাসের চেয়ে ২০ কোটি টাকা কমে গেছে। তবে ২০১৪ সালের আগস্টের সঙ্গে তুলনা করলে এ আয় সামান্য বেড়েছে। ২০১৪ সালের আগস্টে দেশে প্রবাসী-আয় এসেছিল প্রায় ১১৭ কোটি ডলার।