দুই দিনেই এক লাখ টন লবণ আমদানির এলসি!

.
.

সরকার গত রোববার এক লাখ টন অবিচূর্ণ লবণ আমদানির অনুমতি দেয়। আর মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সব ব্যাংককে লবণ আমদানির আর কোনো ঋণপত্র (এলসি) না খুলতে নির্দেশ দেয়। কারণ, এক লাখ টন লবণ আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়ে গেছে।
অর্থাৎ লবণ আমদানিকারকেরা দুই দিনের মধ্যেই এক লাখ টন লবণ আমদানির ঋণপত্র খুলেছেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যারা আমদানি করবে তারা তো এক মাস ধরে প্রস্তুত ছিল। ব্যাংকের সঙ্গে কথাবার্তা বলে রেখেছে, ব্যাংকও তৈরি ছিল। তাই আমদানির অনুমতি দেওয়ার পরপরই এলসি খোলা হয়ে গেছে।’
তবে লবণ আমদানিতে খুশি নন চাষিরা। তাঁরা বলছেন, এমনিতেই তাঁদের লবণ বিক্রি হচ্ছে না। এখন আমদানি হওয়ায় আরও বিপাকে পড়বেন তাঁরা।
দেশে লবণ চাষের বিষয়টি দেখভাল করে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক)। বিসিক বলছে, এবার অপরিশোধিত লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ লাখ টন। তবে উৎপাদিত হয়েছে ১২ লাখ ৮২ হাজার ১০০ টন। টানা ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এবার লবণের উৎপাদন ভালো হয়নি। গত বছর অনুকূল আবহাওয়া থাকায় উৎপাদিত হয় ১৭ লাখ ৫৩ হাজার টন লবণ। সরকারি হিসাবমতে, দেশে লবণের চাহিদা ১৬ লাখ ৫৮ হাজার টন।
কিন্তু অপরিশোধিত লবণ উৎপাদনের যে হাল, তাতে দেশে ভোজ্য লবণের চাহিদা মেটাতে সরকারকে আমদানির অনুমতি দিতেই হতো। বিষয়টি বুঝতে পেরে গত মে মাস থেকেই লবণ আমদানির জন্য চেষ্টা-তদবির শুরু করে লবণ মিল মালিক সমিতি। এ জন্য মিলমালিকেরা শিল্প ও বাণিজ্য—দুই মন্ত্রণালয়েই ধরনা দিতে থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিল্প মন্ত্রণালয় দুই লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়।
অন্যদিকে দেশে লবণের চাহিদা, অপরিশোধিত লবণের উৎপাদন ও উৎপাদন ঘাটতি পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনকে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে বলে মন্ত্রণালয়। গত মাসে জমা দেওয়া ওই প্রতিবেদনে ট্যারিফ কমিশন তিন লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেওয়ার সুপারিশ করে।
এরপরই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে ৬ সেপ্টেম্বর এক লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেয় প্রধান আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তর। তাদের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একজন আমদানিকারক ১০ হাজার টনের বেশি লবণ আমদানি করতে পারবেন না। আমদানির জন্য ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণপত্র খোলা যাবে। আর ঋণপত্র খোলার ৩০ দিনের মধ্যে লবণ জাহাজীকরণ করতে হবে।
আমদানিকারকেরাই স্বীকার করেছেন যে তাঁরা লবণ আমদানির সব প্রস্তুতি শেষ করে অপেক্ষা করছিলেন, কখন সরকার আমদানির অনুমতি দেবে। সে কারণেই মাত্র দুই দিনের মধ্যে তাঁরা এক লাখ টন লবণ আমদানির ঋণপত্র খুলে ফেলেছেন।
কক্সবাজার, টেকনাফসহ লবণ উৎপাদনকারী এলাকাগুলোর মাঠে এখনো ২ লাখ ১৪ হাজার ৫০ টন লবণ পড়ে আছে। এ তথ্য গতকালই বিসিকের কাছ থেকে পাওয়া। এ বছর ৫১ হাজার ৯৭০ একর জমিতে ২৯ হাজার ৫০৮ জন চাষি লবণ চাষ করেছেন।
টেকনাফ লবণচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. শফিক মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, মাঠে এখনো পর্যাপ্ত লবণ মজুত রয়েছে। এই অবস্থায় লবণ আমদানি হলে স্থানীয় চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এবার লোকসানে পড়লে আগামী মৌসুমে অনেক চাষি লবণ চাষ করবেন না।
এর কারণটাও সহজেই অনুমেয়। লবণচাষিদের বড় অংশই বর্গাচাষি। আর বর্গাচাষিরা লোকসান করে বছর বছর কোনো পণ্য উৎপাদন করে না।
{প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন গিয়াস উদ্দিন (টেকনাফ)}