কোরবানির চামড়ার দাম এত কম!

ঢাকায় এবার কোরবানি হওয়া গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়া ৪৫-৫০ টাকা, ঢাকার বাইরের চামড়া ৪০-৪৫ টাকায় কিনবেন বলে ঠিক করেছেন চামড়াসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। আর প্রতি বর্গফুট মহিষের চামড়া ৩৫ টাকা, খাসির চামড়া ২০-২৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ১৫-২০ টাকা ঠিক করা হয়েছে।
কয়েক দিন আগে বৈঠকে বসে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে ট্যানারি মালিকদের দুই সংগঠন বাংলাদেশ প্রস্তুত চামড়া, চামড়া পণ্য ও জুতা রপ্তানিকারক সমিতি (বিএফএলএলএফইএ) ও বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) এবং কাঁচা চামড়ার আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ব্যবসায়ী যদিও বলেছেন, এই দামটা প্রায় চূড়ান্ত, তবে কেউই নাম প্রকাশ করে বলতে রাজি হননি। এ নিয়ে আজ রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হওয়ার
কথা রয়েছে। এর পরই দাম চূড়ান্ত করে জানাবেন ব্যবসায়ীরা।

চামড়ার দাম প্রতিটি ক্ষেত্রেই গতবারের চেয়ে ৩০-৪০ শতাংশ কম নির্ধারণ করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে কোরবানিদাতার লোকসান না হলেও গরিবের কপাল পুড়বে

চামড়ার দাম নির্ধারণ নিয়ে কেন এই রাখঢাক, তা সহজেই বুঝতে পারবেন, যদি গত বছরের দাম কত নির্ধারণ করা হয়েছিল, সে সম্পর্কে ধারণা দিই। ঢাকার কাঁচা চামড়ার বড় আড়ত পোস্তায় এখন গরুর ভালো মানের চামড়া প্রতি বর্গফুট ৭০-৭৫ এবং মাঝারি মানের চামড়া ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, গত বছর ঢাকার গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭০-৭৫ টাকা। কিন্তু এবার ঠিক করা হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা। মানে, গত বছরের চেয়ে এবার গরুর চামড়ার দাম ৩৩-৩৫ শতাংশ কমিয়ে নির্ধারণ করছেন ব্যবসায়ীরা।
একইভাবে গত বছর ঢাকার বাইরের গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ৬০-৬৫, মহিষের চামড়া ৩৫-৪০, খাসির চামড়া ৩০-৩৫
এবং বকরির চামড়ার দাম ২৫-৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই চামড়ার দাম গত বছরের চেয়ে ৩০-৪০ শতাংশ কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। কোরবানিদাতার এতে কোনো লোকসান নেই, কিন্তু গরিবের কপাল পুড়বে এই যা।
এসব বিষয়ে বাংলাদেশ প্রস্তুত চামড়া, চামড়াপণ্য ও জুতা রপ্তানিকারক সমিতির (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি আবু তাহের প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঠিক করেছি বিশ্ববাজারে এক বছরে ফিনিশড লেদারের দাম যত শতাংশ কমেছে, এবার আমরা তত শতাংশ কমিয়ে কোরবানির চামড়া সংগ্রহের দাম নির্ধারণ করব।’ তিনি জানান, এক বছরে বিশ্বে চামড়ার দাম ৩০ শতাংশ কমেছে।
ট্যানারির মালিকদের বড় সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববাজারে যেভাবে ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদারের দাম কমেছে, তাতে এবার চামড়ার দাম গত বছরের চেয়ে ৩২-৩৫ শতাংশ কমা উচিত।’ শাহীন আহমেদের তথ্য অনুযায়ী, ভালো ও মাঝারি মানের ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদারের দাম গত বছর ছিল গড়ে দুই ডলার। এখন তা নেমেছে দেড় ডলারে।
একাধিক আড়তদার ও ট্যানারির মালিক জানিয়েছেন, প্রতিবছরই কোরবানিতে বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বাজারে ৫-১০ টাকা বেশি দামে চামড়া বেচাকেনা হয়। সে কারণে ওই পরিমাণ টাকা হাতে রেখেই দামটা নির্ধারণ করেছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ বেশি দাম নির্ধারণ করলে তা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না।
বিশ্ববাজারের দোহাই দিয়ে গত বছরও চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। গত বছর যে দাম ঘোষণা করা হয়, তাতে আগের বছরের চেয়ে গরুর চামড়া ১৫ টাকা, মহিষের চামড়া ৫ টাকা, খাসির চামড়া ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছিল।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে চামড়ার চাহিদার ৪৮ শতাংশ সংগ্রহ হয় কোরবানির ঈদে। গত বছর কোরবানিতে ৭০-৭৫ লাখ চামড়া সংগ্রহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্যানারির মালিকেরা।