ফ্রিজের বেচাকেনা জমজমাট

ঈদ উপলক্ষে চাহিদা বেড়েছে বিভিন্ন ধরনের রেফ্রিজারেটরের৷ ছবিটি গতকাল বুধবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে তোলা l সাইফুল ইসলাম
ঈদ উপলক্ষে চাহিদা বেড়েছে বিভিন্ন ধরনের রেফ্রিজারেটরের৷ ছবিটি গতকাল বুধবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে তোলা l সাইফুল ইসলাম

আগামীকাল কোরবানির ঈদ। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে সব সময়ই বেড়ে যায় ফ্রিজ ও ডিপ ফ্রিজের বেচাকেনা। কোরবানির পশুর মাংস সংরক্ষণের জন্য মূলত এ সময়ে ফ্রিজের বাড়তি চাহিদা দেখা দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
রাজধানী ঢাকায় ফ্রিজ কেনাবেচার প্রধান বাজার স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে শুরু করে মিরপুর, কারওয়ান বাজার, বিজয় সরণিতে সরেজমিনে ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে। ফ্রিজের আমদানিকারক, দেশীয় প্রস্তুতকারক এবং খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফ্রিজের বিক্রি বেশ ভালো। তবে বরাবরের মতোই বেশি বিক্রি হচ্ছে ডিপ ফ্রিজ।
দেশীয় ফ্রিজ নির্মাতাদের সংগঠন বাংলাদেশ রেফ্রিজারেটরস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব অনুযায়ী, সারা বছর দেশে এখন ১২ লাখ ফ্রিজ বিক্রি হয়। এর প্রায় ৩০ শতাংশই বিক্রি হয় কোরবানির ঈদের আগে। দেশীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ড যেমন: ওয়ালটন, মার্সেল, র্যাংগস, ইকো প্লাস, যমুনা, মাইওয়ান, মিনিস্টার, বসের পাশাপাশি হিটাচি, সিঙ্গার, এলজি, তোশিবা, ওয়ার্লপুল, অ্যারিস্টন, সামস্যাং, হায়েস, হায়ার, শার্পসহ আমদানি করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফ্রিজও বেশ বিক্রি হচ্ছে।
দেশে ১০০ লিটার ওজন থেকে ৪০০ লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন পর্যন্ত ওজনের ফ্রিজ পাওয়া যায়। তবে বিক্রি বেশি হয় ১৫০ লিটার থেকে ২০০ লিটার ধারণক্ষমতার ফ্রিজ। এ ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ফ্রিজগুলোই মধ্যম আয়ের মানুষের বেশি পছন্দ।
কোরবানির ঈদ সামনে রেখে স্টেডিয়াম মার্কেটের ওয়ালটনের একটি বিক্রয়কেন্দ্রে কথা বলে জানা গেল, এবার তাদের বিক্রয়কেন্দ্র ৪০০টি ফ্রিজ বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। বিক্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক জানালেন, বেচাকেনা যেভাবে চলছে, তাতে এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত কয়েক দিনের সারা দেশে অতিবৃষ্টির ফলে যেসব এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে, সেখানে বেচা-বিক্রিতে একটু সমস্যা দেখা গেলেও দেশে সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল পরিবেশ থাকায় এবার ফ্রিজের বিক্রি গতবারের চেয়ে বেশ ভালো।
ওয়ালটনের অপারেটিভ ডিরেক্টর উদয় হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোরবানিতে সাড়ে তিন লাখ ফ্রিজ বিক্রির লক্ষ্য ঠিক করেছি আমরা। গতবারের বিক্রি ছিল দুই লাখ।’ সারা দেশে তিন হাজারের বেশি বিক্রয়কেন্দ্রে তাঁদের ফ্রিজ বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
শাহজাহানপুর থেকে বুধবার স্টেডিয়াম মার্কেটে ফ্রিজ কিনতে আসেন ব্যাংকার শাহীন আহমেদ। সিঙ্গাপুর ইলেকট্রনিকস নামের একটি শোরুম থেকে ৩২ হাজার টাকায় কেনেন একটি ডিপ ফ্রিজ। দোকানটির বিক্রয় ব্যবস্থাপক মিল্টন মজুমদার বলেন, এবার তাঁদের ব্যবসা বেশ ভালো। কোরবানির ঈদের জন্য দোকানে ১ হাজার ৫০০টি ফ্রিজ ও ডিপ ফ্রিজ মজুত করেছেন। জাপানের হিটাচিসহ পাঁচটি ব্র্যান্ডের ফ্রিজ বিক্রি হয় তাঁর শোরুমে।
কারওয়ান বাজারের ট্রান্সকম ডিজিটালের বিক্রয়কেন্দ্রেও পাওয়া গেল একই চিত্র। বিক্রেতা জানালেন, ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে ফ্রিজের মজুত গড়ে তোলা হয়েছে। নিজস্ব ব্র্যান্ড ট্রান্সটেক ছাড়াও হিটাচি, স্যামসাং, ওয়ার্লপুল ব্র্যান্ডের ফ্রিজ-ডিপ ফ্রিজ বিক্রি হচ্ছে এখানে। যেকোনো ব্র্যান্ডের পুরোনো ফ্রিজের সঙ্গে নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে নতুন হিটাচি ফ্রিজ কেনা যাচ্ছে ট্রান্সকমে। এই সুযোগটি ক্রেতাদের মাঝে ভালো সাড়া ফেলেছে বলে জানা গেল।
কোরবানির ঈদ উপলক্ষে সিঙ্গারের বিক্রিও বেশ ভালো। দেশব্যাপী প্রায় ৪০০ বিক্রয়কেন্দ্রে নিজস্ব ব্র্যান্ডের পাশাপাশি আরও পাঁচটি ব্র্যান্ডের ফ্রিজে নগদ অর্থ ছাড় দিচ্ছে সিঙ্গার। সব মডেলের ফ্রিজে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ ফেরত-সুবিধা দিচ্ছে এলজি-বাটারফ্লাই। দেশীয় প্রতিষ্ঠান যমুনা ইলেকট্রনিকস সব ফ্রিজে নগদ অর্থ ছাড়সহ গাড়ি, ফ্ল্যাট, সোনা জেতার সুযোগের নাম দিয়েছে ঈদ স্বপ্নপূরণ।