ঠকেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী লাভবান ট্যানারি মালিক

ঢাকার পোস্তা এলাকায় কোরবানির পশুর চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণের কাজ করছেন শ্রমিকেরা। ছবিটি গত শনিবার তোলা l ফোকাস বাংলা
ঢাকার পোস্তা এলাকায় কোরবানির পশুর চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণের কাজ করছেন শ্রমিকেরা। ছবিটি গত শনিবার তোলা l ফোকাস বাংলা

কোরবানির পশুর চামড়া এবার বিক্রি হয়েছে খুবই কম দামে। এতে ট্যানারি মালিকেরা লাভবান হলেও ঠকেছেন পাড়া-মহল্লার মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে খুব বেশি দামে চামড়া কেনেননি আড়ত মালিক ও ট্যানারি মালিকেরা। সে কারণে বেশি দাম দিয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনেছেন ঠিকই, কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে হতাশ হয়েছেন। অনেকেই কেনা দামের চেয়ে কম দামে চামড়া বিক্রি করেছেন।
অন্যদিকে ভালো দাম পাওয়ার আশায় চামড়া নিয়ে এ জায়গায়, ও জায়গায় ঘোরাঘুরি করা এবং যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে না পারার কারণে ২০ শতাংশ চামড়ার মান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এবার ঢাকায় কোরবানি হওয়া গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়া ৫০-৫৫ আর ঢাকার বাইরের গরুর চামড়া ৪০-৪৫, খাসির চামড়া ২০-২২ ও বকরির চামড়ার দাম ঠিক করা হয় ১৫-১৭ টাকা।
বিশ্ববাজারে প্রস্তুত চামড়ার দাম কমে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে গত বছরের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কম দাম নির্ধারণ করে ট্যানারি মালিকদের দুই সংগঠন বাংলাদেশ প্রস্তুত চামড়া, চামড়া পণ্য ও জুতা রপ্তানিকারক সমিতি (বিএফএলএলএফইএ) ও বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) এবং কাঁচা চামড়ার আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন।

হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবছরই কোরবানির সময় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়ার বাজারটা অস্থির করে ফেলেন। তাঁরা মনে করেন যে দামেই কিনুক না কেন সেটা তো আমরা কিনবই। কিন্তু এবার আমরা নির্ধারিত দামের বাইরে খুব একটা যাইনি। তাই লাভের কথা ভেবে যাঁরা বেশি দামে চামড়া কিনেছেন, তাঁরা লোকসান দেবেন।’

দাম কম হওয়ায় খুশি ট্যানারি মালিকেরা। বিটিএর সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, এবার যে দামে চামড়ার বেচাকেনা হয়েছে তা ঠিকই আছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা তো লোকসান দিচ্ছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক না। কারণ তাঁরাও কম দামেই কেনেন।’

দাম নিয়ে পাল্টাপাল্টি: ঈদের দিন রাজধানীর গ্রিন রোডের ল্যাবএইড হাসপাতালের মোড়ে কয়েকজন মৌসুমি ব্যবসায়ী জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর চামড়ার দাম ২০০-৩০০ টাকা কম। ব্যবসায়ীরা তাঁদের কাছ থেকে চামড়াও কিনছেন কম।

রাজধানীর গ্রিন রোডের ইকরাম কবির প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘গত বছর একটু বড় গরুর চামড়া ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করেছি। এবার তা ২০০০ টাকাও বলছেন না কেউ। চামড়া ব্যবসায়ীরা মনে হয় সিন্ডিকেট করছেন।’

তবে লালবাগের পোস্তার আড়ত মালিকেরা বলছেন, বিশ্ববাজারে চামড়ার দাম কমে যাওয়ায় এবার চামড়ার দাম কম নির্ধারণ করা হয়েছে এবং সেভাবেই চামড়া কিনতে বলা হয়েছে। বেশি দামে চামড়া কিনলে তাঁদের কাছ থেকে ট্যানারি মালিকেরা এই চামড়া কিনবেন না। তাই তাঁরা হিসাব করে চামড়া কিনছেন।

এতেই কপাল পুড়েছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। তাঁরা যে চামড়া ২০০০ টাকায় কিনেছেন বিকেল থেকে ঘুরে ঘুরে, শেষ পর্যন্ত রাতে ওই চামড়া ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে তাঁদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের দিন দুপুরের দিকে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব ও জিগাতলায় কয়েকজন ব্যবসায়ী মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বেশি দামেই চামড়া কেনেন। কিন্তু বিকেলে ওই একই ব্যবসায়ীর কাছে চামড়া নিয়ে গেলে তিনি আর আগের মতো বেশি দামে চামড়া কিনতে রাজি হননি।

রাজধানীর পোস্তায় গতকাল রোববার গরুর ছোট আকারের চামড়া ৫০০-৮০০, মাঝারি চামড়া ১২০০-১৫০০ ও বড় চামড়া ১৮০০-২২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে বড় আকারের ভালো মানের কিছু চামড়া বিক্রি হয়েছে ২৪০০-২৫০০ টাকায়। ঈদের পরদিন শনিবারও প্রায় একই দামে চামড়ার বেচাকেনা চলেছে।

এবার ৫০-৫৫ লাখ গরুর চামড়া এবং ৩০-৩৫ লাখ মহিষ-ছাগল-খাসির চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। ঢাকা থেকে আসবে ১০-১২ লাখ গরুর চামড়া।

তবে ঢাকা থেকে এবার গত বছরের চেয়ে ৫-৭ শতাংশ কম চামড়া সংগৃহীত হবে বলে ধারণা করছেন আড়তদারদের সংগঠনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। তাঁর মতে, ঢাকায় গরু কম কোরবানি হয়েছে। অবশ্য ঈদের দিন থেকে এ পর্যন্ত পোস্তায় তিন লাখের বেশি চামড়া এসে গেছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে চামড়ার চাহিদার ৪৮ শতাংশ সংগ্রহ হয় কোরবানির ঈদে।