রবি-এয়ারটেল এক হতে সময় লাগবে কয়েক মাস

দুই বেসরকারি মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটা ও এয়ারটেল বাংলাদেশের একীভূত হওয়ার পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে কয়েক মাস সময় লাগবে। তবে প্রতিষ্ঠান দুটির একীভূত হওয়ার অনুমতি চেয়ে পাঠানো চিঠি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। 

একীভূত হওয়ার প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পাশাপাশি এর আইনগত দিকগুলোও যাচাই করেছে বিটিআরসি। তবে প্রস্তাব অনুমোদন হওয়ার পর দুই কোম্পানির কর্মীদের চাকরির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
আজ বুধবার রাজধানীর রমনায় বিটিআরসি কার্যালয়ে সংস্থার কমিশন সভায় দুই মোবাইল কোম্পানির একীভূত হওয়ার প্রস্তাবটি গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হয় বলে বিটিআরসির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।
গত ৯ সেপ্টেম্বর ব্যবসা এক করার আলোচনা শুরু করে বাংলাদেশের এই দুই মোবাইল ফোন অপারেটর। এরই ধারাবাহিকতায় একীভূত হওয়ার অনুমতি চেয়ে এয়ারটেল বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত দাস শর্মা এবং রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুপুন বীরাসিংহে স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বিটিআরসিতে পাঠানো হয়।
দুই কোম্পানির যৌথ চিঠিতে বলা হয়, এক হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের ৭৫ শতাংশ শেয়ার থাকবে আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ ও এনটিটি ডোকামোর কাছে, বাকি ২৫ শতাংশ শেয়ার ভারতী এয়ারটেলের কাছে থাকবে। রবির ৭৫ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ৭০ শতাংশ শেয়ার থাকবে আজিয়াটার কাছে আর ৫ শতাংশ থাকবে ডোকোমোর কাছে।
দুটি কোম্পানি একীভূত হলে গ্রাহকদের কোনো ধরনের অসুবিধা হবে না বলে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, এতে গ্রাহকসেবা আরও উন্নত হবে। এয়ারটেলের গ্রাহকদের নম্বর (০১৬ দিয়ে শুরু) অপরিবর্তিত থাকবে। তিন বছর পর ০১৬ দিয়ে নতুন সংযোগ দেওয়া হবে না।
বিটিআরসির বুধবারের সভায় উপস্থিত এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দুই কোম্পানি একীভূত হলে প্রতিষ্ঠান দুটির কর্মীদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরই চাকরির নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সমস্যা হবে কি না তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় বিটিআরসির এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমতি দিলে দুই অপারেটরকে কোম্পানি সম্পর্কিত বিষয় নিষ্পত্তি করে হাইকোর্টের এমন একটি বেঞ্চে যেতে হবে। সেখানে কারও কোনো আপত্তি না থাকলে, আদালতের অনুমতি পাওয়ার পরই বিটিআরসি এ বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে পারবে। সংশ্লিষ্টদের মতে পুরো বিষয়টি নিষ্পত্তি শেষে দুই কোম্পানি একীভূত হওয়ার চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে।
কোম্পানি দুটি এক হলে ৩ কোটি ৭০ লাখ গ্রাহক নিয়ে এটাই হবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুঠোফোন অপারেটর। বর্তমানে ৫ কোটি ৩৯ লাখ গ্রাহক নিয়ে বাংলাদেশে শীর্ষে রয়েছে গ্রামীণফোন। আর ৩ কোটি ২৪ লাখ গ্রাহক নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলালিংক।
একীভূত হলে এয়ারটেল বাংলাদেশের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি ও দেনার দায়িত্ব নেবে রবি। ভারতী এয়ারটেলের প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন ২০১৫ অনুযায়ী, এপ্রিল ২০১৪ থেকে মার্চ ২০১৫ পর্যন্ত এক বছরে এয়ারটেল বাংলাদেশ লোকসান দিয়েছে ৬৭৪ কোটি ৬০ লাখ রুপি বা ৮২২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা (১ টাকা সমান দশমিক ৮০২ রুপি হিসাবে)। এ সময়ে এয়ারটেল বাংলাদেশের মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৬০ কোটি রুপি আর দেনার পরিমাণ ৪ হাজার ৫৫৮ কোটি রুপি।
একইভাবে এয়ারটেলের কাছে থাকা তরঙ্গের মালিকানাও একীভূত হওয়া রবির কাছে চলে যাবে। বর্তমানে এয়ারটেলের কাছে ২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ আছে আর রবির কাছে আছে ১৯ দশমিক ৮০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। দুটি প্রতিষ্ঠানের তরঙ্গ এক হয়ে ৩৯ দশমিক ৮০ মেগাহার্টজ হলে তা সব মুঠোফোন অপারেটরের মধ্যে সর্বোচ্চ হবে। বর্তমানে গ্রামীণফোনের কাছে সর্বোচ্চ ৩২ মেগাহার্টজ তরঙ্গ আছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রবির গ্রাহকসংখ্যা দুই কোটি ৭৯ লাখ আর এয়ারটেলের গ্রাহকসংখ্যা ৯০ লাখ ৮০ হাজার। দুটি কোম্পানি এক হলে তিন কোটি ৭০ লাখ গ্রাহক নিয়ে এটিই হবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর। বর্তমানে পাঁচ কোটি ৩৯ লাখ গ্রাহক নিয়ে বাংলাদেশে শীর্ষে রয়েছে গ্রামীণফোন। তিন কোটি ২৪ লাখ গ্রাহক নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলালিংক।
রবি আজিয়াটা মালয়েশিয়ার আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ ও জাপানের এনটিটি ডোকামোর যৌথ উদ্যোগ। এখানে আজিয়াটার শেয়ারের পরিমাণ ৯২ শতাংশ আর এনটিটি ডোকোমোর শেয়ার ৮ শতাংশ।
১৯৯৭ সালে একটেল নামে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে রবি। বাংলাদেশের শিল্পগোষ্ঠী এ কে খান গ্রুপ ও টেলিকম মালয়েশিয়ার যৌথ অংশীদারি কোম্পানি ছিল একটেল। ২০০৯ সালে এ কে খান গ্রুপ ও টেলিকম মালয়েশিয়া আজিয়াটার কাছে রবির মালিকানা বিক্রি করে দেয়। ২০১০ সালের ২৮ মার্চ ‘রবি’ নামে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে তারা।
রবির পরিশোধিত মূলধনের (পেইড-আপ ক্যাপিটাল) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে কর্মরত আছেন এক হাজার ৬০০ জনের বেশি। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এক হাজার ৫৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে রবি।
ভারতী এয়ারটেল ২০১০ সালে ওয়ারিদ টেলিকমের ৭০ শতাংশ কিনে নিয়ে এয়ারটেল বাংলাদেশ নামে ব্যবসা শুরু করে। ২০১৩ সালে বাকি ৩০ শতাংশ কিনে নেয় ভারতী এয়ারটেল। ভারতী এয়ারটেল এশিয়া, আফ্রিকাসহ বিশ্বের ২১ টির দেশে ৩০ কোটির বেশি গ্রাহক নিয়ে বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মুঠোফোন অপারেটর। এখানে মোট কর্মরত জনবলের সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি। এয়ারটেল বাংলাদেশে কর্মরত জনবলের সংখ্যা ৫০০ জনের বেশি।