অবকাঠামোতে বিশ্বের সেরা ১১ দেশ

>যোগাযোগমাধ্যম, টেলিযোগাযোগব্যবস্থা, রাস্তাঘাটের মান, বিদ্যুৎ-সুবিধা, বিমানে আসন পাওয়া এবং নাগরিকদের শারীরিক সুস্থতার মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সেরা ১১টি দেশের এই তালিকা প্রকাশ করা হয়

একটি দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো অবকাঠামো। যে দেশের অবকাঠামো যত মজবুত, সে দেশের অর্থনীতিও তত শক্তিশালী। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) অর্থনৈতিক পার্থক্যের বড় কারণ এই অবকাঠামো।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচক’ প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার অবকাঠামোতে সেরা ১১টি দেশের একটি তালিকা তৈরি করেছে। তালিকাটি তৈরিতে দেশগুলোর যোগাযোগমাধ্যম, টেলিযোগাযোগব্যবস্থা, রাস্তা-ঘাটের মান, বিদ্যুৎ-সুবিধা ইত্যাদির পাশাপাশি বিমানে আসন পাওয়া এবং নাগরিকদের শারীরিক সুস্থতার মতো বিষয়ও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এ তালিকার শীর্ষ দুটি স্থান দখল করেছে এশিয়ার হংকং ও সিঙ্গাপুর।

তালিকাটি তৈরি করতে গিয়ে বিজনেস ইনসাইডার-এর পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ২০০৭-০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো উন্নত দেশগুলোতে অবকাঠামোর মান আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে। আর তাদের স্থানগুলো দখলে নিয়েছে এশিয়ার কয়েকটি দেশ। বিজনেস ইনসাইডার-এর তৈরি অবকাঠামোয় বিশ্বসেরা ১১ দেশের তালিকাটি এমন—

হংকং: টেলিযোগাযোগ ও বিদ্যুৎ সরবরাহের মানে অন্যান্য দেশের চেয়ে এগিয়ে থাকায় অবকাঠামোর দিক থেকে সেরা দেশের মর্যাদা পেয়েছে হংকং। অবকাঠামোগত অন্যান্য সুবিধার প্রতিটি ক্ষেত্রেই সেরা দশে রয়েছে দেশটি। তবে বিমান ভ্রমণে আসন পাওয়ার দিক থেকে এ দেশের অবস্থান ১৭তম।

সিঙ্গাপুর: বিমান যোগাযোগ ও বন্দর-সুবিধা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিশ্বের সব দেশের চেয়ে এগিয়ে আছে সিঙ্গাপুর। ফিক্সড টেলিফোন সংযোগ ও মুঠোফোন ব্যবহারে দেশটি যথাক্রমে ২৯ ও ১৪ নম্বরে আছে। দেশটি সম্পর্কে ডব্লিউইএফ বলছে, উচ্চমানের অবকাঠামো, স্থিতিশীল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি আদর্শ দেশ সিঙ্গাপুর।

নেদারল্যান্ডস: বন্দর-সুবিধা ও রাস্তাঘাটের মানের দিক থেকে ইউরোপের নেদারল্যান্ডস সবচেয়ে উন্নত দেশ। সেই সঙ্গে শিক্ষা, অবকাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক স্থিতিশীলতা থাকায় দেশটি উন্নত অবকাঠামোর তালিকায় প্রথম দিকে স্থান করে নিয়েছে। তবে বিমানভ্রমণে আসন পাওয়ার ক্ষেত্রে দেশটি আছে ২৩ নম্বরে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত: সড়ক ও আকাশপথে যোগাযোগের অবকাঠামোয় বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। বিদ্যুতের মানের দিক দিয়ে দেশটি অবশ্য কিছুটা পিছিয়ে আছে। তবে সার্বিকভাবে উন্নত আর্থিক ব্যবস্থাপনার ফলে দেশটি অবকাঠামোতে অনেক এগিয়ে গেছে।

জাপান: রেল যোগাযোগ অবকাঠামোয় বিশ্বে সবচেয়ে উন্নত হচ্ছে জাপান। বিমানে আসন পাওয়ার ক্ষেত্রেও চতুর্থ স্থানে আছে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশ। তবে বন্দর অবকাঠামোয় ২২ নম্বরে আছে দেশটি। শারীরিক সুস্থতা বিবেচনায় কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর এই দেশ আছে বিশ্বের শীর্ষস্থানে।

সুইজারল্যান্ড: বিদ্যুৎ সরবরাহ ও রেল যোগাযোগ অবকাঠামোতে যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে সুইজারল্যান্ড। তবে বন্দর অবকাঠামো-সুবিধায় ৪৭ ও সড়কপথ অবকাঠামোতে নবম স্থানে আছে দেশটি। ২০০৭ সালের বিশ্ব আর্থিক মন্দায় দেশটির অবকাঠামোর মান আগের চেয়ে কিছুটা দুর্বল হয়েছে বলেও জানিয়েছে ডব্লিউইএফ।

জার্মানি: বিমানে আসন পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বে ৬ নম্বর দেশ জার্মানি। রেলপথ অবকাঠামোতেও শীর্ষ দশে আছে দেশটি। আর বন্দর-সুবিধায় ১৪তম এবং বিদ্যুতের মানের ক্ষেত্রে ২০ নম্বরে আছে জার্মানি।

ফ্রান্স: ফ্রান্সের রেল ও সড়ক অবকাঠামো মানের দিক থেকে বিশ্বে যথাক্রমে ৬ ও ৭ নম্বর স্থানে আছে। বন্দর-সুবিধার ক্ষেত্রে দেশটি অনেকটা পেছনে রয়েছে, অবস্থান ২৬তম। আর বিদ্যুতের মানের দিক দিয়ে দেশটির অবস্থান ১৪ নম্বরে। গত কয়েক বছরে অবকাঠামো-সুবিধা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কিছুটা পেছালেও সার্বিক অবকাঠামোগত মান দেশটিকে এগিয়ে দিয়েছে।

যুক্তরাজ্য: বিমানে আসন পাওয়ার দিক থেকে যুক্তরাজ্যের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়, আর বিদ্যুৎ সরবরাহের মানে নবম। তবে সড়ক ও আকাশপথের অবকাঠামোয় দেশটির অবস্থান যথাক্রমে ২৯ ও ১৯। তবে এ দেশে রেলপথে যাতায়াত খরচ ইউরোপের অন্য দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি, আবার সময়মতো রেল গন্তব্যে না পৌঁছানোর বদনামও রয়েছে।

১০ স্পেন: কয়েক বছর আগে অবকাঠামো খাতে অপব্যয়ের কারণে স্পেন পিছিয়ে পড়েছে। তা সত্ত্বেও দেশটি রেল অবকাঠামোয় বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে আছে। বিমানে আসন প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও এ দেশের অবস্থান শীর্ষ দশে। এ ছাড়া স্থলবন্দর ও বিমানবন্দর অবকাঠামো—এ দুটি ক্ষেত্রে দেশটির অবস্থান ১২তম এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের মানে ২৪তম।

১১ যুক্তরাষ্ট্র: বিমানে আসন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিশ্বে প্রথম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। বিমানবন্দর অবকাঠামোতে দেশটির অবস্থান পঞ্চম। তবে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র অনেক পেছনে, ৯৯তম স্থানে আছে। আর সড়ক ও রেলপথ অবকাঠামোতে দেশটির অবস্থান যথাক্রমে ১৪তম ও ১৫তম।