খুলে গেল বেগুন রপ্তানির দ্বার

কয়েক ধরনের পোকা পাওয়ায় বাংলাদেশের বেগুন নিয়ে বিভিন্ন দেশ অভিযোগ জানিয়েছিল। এমনকি পণ্যটি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপও হতে পারত। এমন এক অবস্থায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) বেগুন রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তাই এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশের বেগুন রপ্তানি হচ্ছিল না।

সেই নিষেধাজ্ঞা গত শনিবার উঠে গেছে। এদিনই যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হয়েছে ৫০ কেজি বেগুন। এটি সম্ভব হয়েছে চুক্তিতে বেগুন
চাষ (কন্ট্রাক্ট ফার্মিং) হওয়ার ফলে। টাঙ্গাইলের মধুপুরের কুড়াগাছা গ্রামে এভাবে চাষ হচ্ছে বেগুন।

এ প্রসঙ্গে গতকাল কুড়াগাছায় এক অনুষ্ঠানে ডিএইর মহাপরিচালক হামিদুর রহমান বলেছেন, সিদ্ধান্ত হয়েছিল কন্ট্রাক্ট ফার্মিং ছাড়া কোনো বেগুন রপ্তানি হবে না। এখন কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে রোগ ও পোকামুক্ত বেগুন উৎপাদিত হচ্ছে। সে কারণে এটির রপ্তানিও শুরু হচ্ছে।

বেগুন রপ্তানির বন্ধ দুয়ার খুলে যাওয়ায় খুশি রপ্তানিকারকেরাও। সবজি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস এলাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ মো. ইকতাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সবজি ও ফলের রপ্তানি ক্রমেই কমে যাচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের কারণে রপ্তানি কিছুটা বাড়বে। আরও যেসব সবজির ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে সেগুলোর ওপর থেকে তা উঠে গেলে রপ্তানি অনেক বেড়ে যাবে।’

শুধু বেগুন নয়, আরও ছয়টি সবজি রপ্তানিও সরকার নিজে থেকে বন্ধ রেখেছে। এগুলো হলো: অ্যামারেনথাস প্রজাতি (লালশাক ও ডাঁটাশাক), সাইট্রাস প্রজাতি (জারা লেবু ছাড়া অন্যান্য লেবু) এবং ত্রিকোসানথেস প্রজাতি (করলা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল ও পটোল)। এসব সবজিকে মারাত্মক সমস্যাযুক্ত পণ্য (ক্রিটিক্যাল কমোডিটি) ঘোষণা করেছিল ইইউ। ‘ক্রিটিক্যাল কমোডিটি’ হিসেবে ইইউ সেসব সবজি-ফলকে চিহ্নিত করে, যেগুলো তাদের দেশে প্রবেশ করলে সেখানকার স্থানীয় ফসল ওই রোগ কিংবা পোকায় সংক্রমিত হতে পারে।

অবশ্য ইউরোপের বাইরে এসব সবজি-ফল রপ্তানি করছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা।

নানা ধরনের সমস্যা চিহ্নিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করে ঠিক করে যে ক্রিটিক্যাল কমোডিটি হিসেবে চিহ্নিত সবজি-ফল চুক্তিতে চাষ না করা পর্যন্ত রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হবে না।

এর পরিপ্রেক্ষিতেই চুক্তিতে চাষ শুরু করার জন্য নেওয়া হয় ‘এগ্রিবিজনেস ফর ট্রেড কমপিটিটিভনেস প্রজেক্ট (এটিসিপি)’ নামে একটি প্রকল্প। ইউকেএইড, ডিএফআইডি এবং সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশনের (এসডিসি) অর্থায়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (বিপিসি) এবং রপ্তানিকারক সমিতি এটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে ডিএই।

প্রাথমিকভাবে টাঙ্গাইলের মধুপুরের কুড়াগাছা গ্রামে সাত একর জায়গায় চুক্তিতে বেগুন চাষ শুরু হয় গত ১৪ আগস্ট। ১২ জন কৃষক তাঁদের জমি একত্র করে বেগুন চাষ করেছেন। এখানেই উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় পোকামুক্ত বেগুন। সামান্য কিছু বেগুনে অবশ্য পোকা হয়েছে। তবে সেসব বেগুন রপ্তানি হচ্ছে না। চাষিদের কাছ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে এসব বেগুন কিনছেন রপ্তানিকারকেরা।

প্রকল্পের পরিচালক মনজুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চারটি পোকার (সাদা পোকা, ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা প্রভৃতি) আক্রমণের কারণে বেগুনের রপ্তানি বন্ধ ছিল। বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে ইইউ বলে আসছে গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস (মানসম্মতভাবে চাষাবাদ) না করলে তারা বাংলাদেশ থেকে সবজি নেবে না। তাদের শর্ত পূরণ করতেই আমরা কন্ট্রাক্ট ফার্মিং শুরু করেছি। উৎপাদিত বেগুন গতকাল থেকে রপ্তানি শুরু হয়েছে। এটা আমাদের সাফল্য। আগামী দিনে অন্যান্য সবজিও এভাবে উৎপাদন করা হবে।’