গুজব, হুজুগ ও মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবে বড় দরপতন!

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে গতকাল রোববার দেশের শেয়ারবাজারে আবারও বড় দরপতন ঘটেছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১১ শতাংশ কমেছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১৮১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৩ শতাংশ। গুজব, হুজুগ এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবে বড় দরপতন হয়েছে বলে বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।

এমনিতেই কয়েক দিন ধরে বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা ছিল। তার মধ্যে গতকাল এসে মন্দ বাজারে বড় দরপতন ঘটে। তবে লেনদেনে দুই বাজারে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থা ছিল। ঢাকার বাজারে এদিন লেনদেন কমলেও বেড়েছে চট্টগ্রামের বাজারে।

সিএসই-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার চট্টগ্রামের সিএসইর আয়োজনে দুই দিনব্যাপী পুঁজিবাজার মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে লেনদেনে তার কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বাজারের পতনের পেছনে মৌলিক কারণের চেয়ে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবই বেশি। গতকাল লেনদেনের একপর্যায়ে গ্রামীণফোনসহ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের দরপতনের কারণে সূচক কমতে শুরু করে। আর তখনই ভীত হয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অনেকে হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেন। এতে পতনটা আরও ত্বরান্বিত হয়। অথচ পরে দেখা গেল গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম ঘুরে গেল। ভয়ে যাঁরা শেয়ার বিক্রি করেছেন, পরে তাঁদের অনেকে আবার বাড়তি দামে তা কিনেছেন।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, এক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম কমেছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর—এই সময়ে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ৪৮ টাকা কমেছে। গতকাল লেনদেনের একপর্যায়ে এটির দাম এক মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ২৫৪ টাকায় নেমে আসে। পরে অবশ্য লেনদেন শেষ হয়েছে ২৬৭ টাকা দামে।

গ্রামীণফোনের শেয়ারের এমন দরপতনের কারণ সম্পর্কে শাকিল রিজভী বলেন, বহুজাতিক এ কোম্পানিটির শেয়ারের এমন দরপতনের যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। কারণ এ সময়ে কোম্পানিটির আর্থিক মৌলভিত্তিতে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। তাই মৌলিক কারণের চেয়ে হুজুগে বা গুজবেই বেশি আক্রান্ত হয়েছে এই শেয়ারের দাম।

আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, বেশ কয়েক দিন ধরে বড় মূলধনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দরপতন ঘটছিল। এর ফলে সূচকেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কিছুটা ভীত হয়ে পড়েন।

ঢাকার বাজারে গতকাল ৩১৮টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়। এর মধ্যে ২৩১টিরই দাম কমেছে, বেড়েছে ৬০টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২৭টির দাম। দিন শেষে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৩৮ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ২৩ কোটি টাকা কম।

চট্টগ্রামের বাজারে গতকাল ২৩৯টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়। এর মধ্যে ১৭৮টিরই দাম কমেছে, বেড়েছে ৩৮টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২৩টির দাম। দিন শেষে সিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৪ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে তিন কোটি টাকা বেশি।

ঢাকার বাজারে রোববার লেনদেনের শীর্ষে ছিল লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট। গতকাল এক দিনে এককভাবে কোম্পানিটির ২৩ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। লেনদেনে শীর্ষে থাকলেও দীর্ঘদিন পর গতকাল এটির শেয়ারের দাম কমে ১০০ টাকার নিচে আসে। রোববার এক দিনে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ৪ টাকা ৬০ পয়সা বা প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ কমে নেমে আসে ৯৫ টাকা ৭০ পয়সায়। এর আগে দীর্ঘদিন ধরে এই শেয়ারের দাম ১০০ টাকার ওপরে অবস্থান করছিল।