সঞ্চয়পত্রে মুনাফা বেশি

হাতে জমানো টাকা আছে, কিন্তু লম্বা সময়ের জন্য কোথায় খাটাবেন ভেবে পাচ্ছেন না। ফিক্সড ডিপোজিট রেটে (এফডিআর) এই টাকা রাখতে পারেন বিভিন্ন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। আবার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানি ভালো লভ্যাংশ দেয়, সেগুলোর শেয়ারও কিনে রাখতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। আপনার অর্থ বিনিয়োগের নির্ঝঞ্ঝাট বিকল্পও আছে দেশে। আর সেটি হলো, সঞ্চয়পত্র কেনা।
বাজারে বর্তমানে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের চালু করা চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। মেয়াদ শেষে এগুলো থেকে ভালো অঙ্কের মুনাফা পাওয়া যায়। মুনাফার হার এফডিআরের সুদ থেকেও বেশি। জরুরি প্রয়োজনে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেও ভাঙানো যায় এসব সঞ্চয়পত্র। সে ক্ষেত্রে মুনাফার হার কিছুটা কম হয়। অর্থাৎ বছরওয়ারি মুনাফার পরিমাণে হেরফের হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ডাকঘর থেকে সব সঞ্চয়পত্র কেনা ও নগদায়ন করা যায়। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রায় ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ডাকঘর থেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ব্যাংকগুলো বর্তমানে এফডিআরে সুদ দেয় সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। এর মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো তুলনামূলক কম সুদ দেয়।
জানতে চাইলে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের পরিচালক আয়েজউদ্দিন আহমেদ গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষের মধ্যে সঞ্চয়পত্র কেনার আগ্রহ বাড়ছে। একটাই কারণ, এফডিআরের সুদের চেয়েও সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বেশি। আমি শুধু এটুকুই বলব, ভালো মুনাফা দিয়ে সরকার জনগণের সেবা করে যাচ্ছে।’
পরিবার সঞ্চয়পত্র: এটি ৫ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র এবং মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। সঞ্চয়পত্রটি বিক্রি হয় ১০ হাজার, ২০ হাজার, ৫০ হাজার, ১ লাখ, ২ লাখ, ৫ লাখ ও ১০ লাখ টাকা মূল্যমানে। ২০০৯ সালে চালু হওয়া এ সঞ্চয়পত্র থেকে মাসিক মুনাফা নেওয়ারও সুযোগ রয়েছে। এক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কেনা যায়।
তবে সবাই এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন না। কেবল ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সের যেকোনো নারী, শারীরিক প্রতিবন্ধী যেকোনো বয়সী নারী-পুরুষ এবং ৬৫ বা তার চেয়ে বেশি বয়সী নারী-পুরুষ এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন।
পেনশনার সঞ্চয়পত্র: এটিও ৫ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র ও মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এই শ্রেণিতে ৫০ হাজার, ১ লাখ, ৫ লাখ ও ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের পাঁচ ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। ২০০৪ সালে চালু হওয়া এ সঞ্চয়পত্র থেকে তিন মাস পরপরও মুনাফা তোলা যায়।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানেরাই শুধু এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন।
বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র: এটি দেশের সবচেয়ে পুরোনো সঞ্চয়পত্র। চালু হয় ১৯৭৭ সালে। পাঁচ বছর মেয়াদি এ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। বাজারে ১০, ৫০, ১০০ ও ৫০০ টাকা; ১, ৫, ১০, ২৫ ও ৫০ হাজার টাকা এবং ১, ৫ ও ১০ লাখ টাকা মূল্যমানে পাওয়া যায় এই সঞ্চয়পত্র। এটি কিনতে কোনো শ্রেণি-পেশার বাধ্যবাধকতা নেই, অর্থাৎ যেকোনো নাগরিকই কিনতে পারেন।
ব্যক্তির ক্ষেত্রে একক নামে ৩০ লাখ ও যৌথ নামে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। তবে প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কেনার কোনো সর্বোচ্চ সীমা নেই।
মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র: এটি তিন বছর মেয়াদি ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র। চালু হয় ১৯৯৮ সালে। পাওয়া যায় ১, ২, ৫ ও ১০ লাখ টাকা মূল্যমানে। মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ। বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মতো এটিও সবাই কিনতে পারবেন। এই সঞ্চয়পত্র একক নামে ৩০ লাখ টাকা ও যৌথ নামে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত কেনা যায়।