অনলাইনে বেচাকেনা অর্ধেকে নেমেছে

অনলাইনে পণ্য বেচাকেনার জনপ্রিয় মাধ্যম কেইমু বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে প্রতি মাসে অন্তত পাঁচ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ঢুঁ মারেন। এর একটি বড় অংশই আসেন কেইমুর ফেসবুক পেজ হয়ে। পণ্যের জন্য অর্ডারও দেন। গত পাঁচ দিন ধরে তা পুরোপুরিই বন্ধ।
কেইমুর এ দেশীয় ব্যবস্থাপক কাজী জুলকার নায়েন ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফেসবুক বন্ধ থাকায় গত পাঁচ দিনে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিটর কমেছে ৫০ শতাংশ, আর অর্ডার কমেছে ৩০ শতাংশ। অনেক জায়গায় ওয়েবসাইটই ওপেন হচ্ছে না বলে গ্রাহকেরা অভিযোগ করছেন। সব মিলিয়ে ব্যবসার এ পরিস্থিতি আমাদের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ দেশে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে যত পণ্য কেনাবেচা হয়, তার একটি বড় অংশই এখন হয় কেইমুর মাধ্যমে।
‘লা ফারিসা’ নামের ফেসবুকভিত্তিক একটি ফ্যাশন হাউস চালান নাসরীন চৌধুরী। দেশের ভেতরে তো বটেই যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালিরা তাঁর ফেসবুক পেজ থেকে পছন্দ করে পোশাক কেনেন। আবার ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের গ্রাহকদের কাছে পোশাকের নকশাও পাঠান তিনি। কিন্তু পাঁচ দিন ধরে কোনো কাজই হয়নি। নাসরীন চৌধুরী বলেন, ফেসবুক, ভাইবার বন্ধ থাকায় কোনো ব্যবসা হচ্ছে না।
জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে—এমন আশঙ্কায় গত বুধবার হঠাৎ করেই দেশে ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটঅ্যাপের মতো সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেয় সরকার। সরকারের এই সিদ্ধান্ত দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অনলাইনে ব্যবসা পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠানগুলোর। ইতিমধ্যে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা কমে গেছে। একদিকে ফেসবুক বন্ধ থাকায় গ্রাহকদের কাছে পণ্যের বিজ্ঞাপন পৌঁছাচ্ছে না, বিক্রিও হচ্ছে না। অন্যদিকে ইন্টারনেটের গতি কম হওয়ায় অনলাইনে পণ্য সরবরাহব্যবস্থাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সফটওয়্যার খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখন প্রতি সপ্তাহে অনলাইনে আনুমানিক দুই কোটি টাকার পণ্যসেবা লেনদেন হয়। আর ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের দাবি, গত পাঁচ দিনে তাঁদের ব্যবসা কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কমে গেছে। শুধু ফেসবুকনির্ভর ব্যবসাও কমেছে ৮০-৯০ শতাংশ। এক সপ্তাহে আনুমানিক এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তাঁরা।
বেসিসের হিসাবে ৬০টির বেশি ই-কমার্স সাইট দেশে নিয়মিত অনলাইনে পণ্য কেনাবেচা করে। এর বাইরেও হাজার খানেক অনলাইন ওয়েবসাইট (ওয়েব পেজ) আছে, যেগুলো ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমকে ঘিরেই ব্যবসা করে।
বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, ফেসবুকের ওপর অতি নির্ভরশীল ব্যবসায়ীদের জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা। শুধু ফেসবুকে নির্ভরশীল না থেকে ই-কমার্স সাইটগুলোকে নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গ্রাহক আকর্ষণে বেশি জোর দিতে হবে।
অনলাইনভিত্তিক কৃষি পণ্যের ওয়েবসাইট ‘আমার দেশ আমার গ্রাম’-এর অনলাইন অর্ডার গত এক সপ্তাহে ৭০ শতাংশ কমেছে। কারণ গ্রাহকদের বেশির ভাগই ফেসুবকের মাধ্যমে তাদের ওয়েবসাইটে আসেন।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, ফেসবুক বন্ধ থাকায় ব্যবসা হচ্ছে না। আবার ইন্টারনেটের গতি কম হওয়ায় ডিজিটাল পণ্য সরবরাহব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
একই সমস্যার কথা জানালেন অনলাইনে চামড়াজাত পণ্য কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান ‘ভাইপারের’ স্বত্বাধিকারী মোস্তাফিজুর রহমান। তার দাবি, গত পাঁচ দিনে ভাইপারের বেচাকেনা ৯০ শতাংশ কমে গেছে।
ইলেকট্রনিকস পণ্য বিক্রির ওয়েবসাইট ‘আমার গ্যাজেট’-এর পণ্য নিজেদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই বিক্রি হয়। কিন্তু এই বিক্রি পুরোপুরি নির্ভরশীল ফেসবুকে দেওয়া বিজ্ঞাপনের ওপর। বিজ্ঞাপন নেই, তাই প্রতিদিনই বিক্রি কমছে বলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে।