নতুন নতুন করদাতার সন্ধানে বাড়ি বাড়ি

.
.

আপনি বাড়িভাড়া পান। ছোটখাটো ব্যবসা করে আয় করেন। আপনি হয়তো জানেনই না, কর দিতে হবে। কিংবা ইচ্ছা করেই কর দিতে গড়িমসি করেন। কোনো চিন্তা করবেন না, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারাই আপনাকে খুঁজে বের করবেন। আপনার বাড়ি গিয়ে আয়-ব্যয় হিসাব করে আপনি করযোগ্য কি না, তা জানিয়ে দেবেন। করযোগ্য হলে আপনাকে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিতে হবে।
নতুন করদাতার সন্ধানে বাড়ি বাড়ি যাওয়া শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি মাস থেকে সীমিত পরিসরে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলগুলো।
কর জরিপ কার্যক্রম ২০১৫-এর আওতায় এ কর্মসূচি নিয়েছে এনবিআর। এ জরিপ চলবে আগামী জুন মাস পর্যন্ত। এবার ৩ লাখ ২০ হাজার নতুন করদাতা খুঁজে বের করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এবারই প্রথম সারা দেশে এ জরিপ অঞ্চল বিস্তৃত করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে জেলা শহর এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেশি এমন উপজেলায় গিয়ে নতুন করদাতা খুঁজবেন কর কর্মকর্তারা।
মূলত বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাড়িওয়ালাদের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) রয়েছে কি না, তা খোঁজ করা হবে। তাঁদের বার্ষিক আয়ের পরিমাণ, জীবনযাত্রা—এসব দেখে তাঁরা করযোগ্য কি না বিবেচনা করা হবে। করযোগ্য হলে তাঁদের টিআইএন নেওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হবে। তবে জরিপকালে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো জরিমানা কিংবা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। এ জরিপটি টিআইএনধারী বা করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এ জরিপের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষেরা করের আওতায় আছেন কি না, সে বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাবে। কোন শ্রেণির মানুষ করের আওতায় বেশি, তা জানা যাবে। করযোগ্য ব্যক্তিকে অবশ্যই করের আওতায় আনা হবে। জরিপে যদি দেখা যায়, যেসব বিত্তশালী করযোগ্য, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কর না দিয়ে রাষ্ট্রকে বঞ্চিত করছেন, তাঁদের করের আওতায় আনা হবে।
অতীতে নতুন করদাতা সন্ধানের নামে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। তবে এবার সেই হয়রানি এড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যে এলাকায় জরিপ করা হবে, প্রথমে সেই এলাকার জনপ্রতিনিধিদের অবহিত করা হবে। এরপর স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকেও জানানো হবে। আর যেসব কর কর্মকর্তা মাঠপর্যায়ে বাড়ি বাড়ি যাবেন, তাঁদের এনবিআরের পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে জরিপ এলাকায় প্রবেশ করতে হবে।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে সামর্থ্যবান ব্যক্তির পাশাপাশি স্থানীয় বণিক সমিতি, বেতনভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী, পেশাজীবী শ্রেণির মধ্যেও নতুন করদাতা খোঁজা হবে। অপেক্ষাকৃত বড় বড় দোকানির ব্যবসায়িক কারণে টিআইএন নেওয়া বাধ্যতামূলক হওয়ায় টিআইএনহীন দোকানদার খুব একটা নেই। স্থানীয় বণিক সমিতি ও দোকান মালিক সমিতির সহায়তা নেওয়া হবে। পেশাজীবীদের মধ্যে জরিপ করার আগে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে তালিকা নেওয়া হবে।
২০১৪ সালের কর জরিপে নতুন দুই লাখ করদাতা শনাক্ত করার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু সে বছর ১ লাখ ৪ হাজার করদাতা পেয়েছিল এনবিআর।