গুণগত ধানবীজে গুরুত্বারোপ

বাংলাদেশের ধানবীজের চাহিদা মেটানোর জন্য বাইরে থেকে আমদানির ক্ষেত্রে গুণগতমান নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলেছেন, ধানবীজের ক্ষেত্রে গুণগত মান রক্ষা করা না গেলে তা খাদ্যনিরাপত্তায় হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয় আয়োজিত এক কর্মশালায় গতকাল শনিবার এসব অভিমত প্রকাশ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ভারতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান কনজুমার ইউনিটি ট্রাস্টের (কাটস) সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ধানবীজ বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিতকরণ ও অপসারণ বিষয়ে যে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তার অংশ হিসেবে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। আলোচনায় গবেষণার একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়, যার ভিত্তিতে আলোচনা এগিয়ে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের সভাপতিত্বে কর্মশালায় মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষক মাহফুজ কবীর। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে ধানবীজের বাণিজ্য ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করছে। একে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসা গেলে উভয় দেশই লাভবান হতে পারে।
তবে আলোচকদের অনেকেই মূল প্রতিবেদনের কিছু বিষয়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। তাঁরা এও বলেন, অনানুষ্ঠানিকভাবে বা অবৈধপথে ভারত থেকে সীমান্তঘেঁষা অঞ্চলগুলোয় অননুমোদিত ধানবীজ আসতে থাকলে তাতে করে জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়। তার বদলে ভারত সরকারের অনুমোদিত ধানবীজ বৈধপথে আনার কথা চিন্তা করা উচিত।
একাধিক আলোচক বলেন, কৃষকেরা সুফল পাচ্ছে বলেই এসব ভারতীয় ধানবীজ ব্যবহার করছেন। তার মানে এখানে চাহিদা আছে। একইভাবে বর্তমানে আমদানিকৃত মোট ধানবীজের সিংহভাগই যে চীন থেকে আসছে, তারও কারণ মূলত চৈনিক বীজের উচ্চমান ও ভালো ফলন।
ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ভারত থেকে বীজ আমদানিতে কোনো সমস্যা নেই। তবে ভারত মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহ করবে কি না, সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে। আবার বাংলাদেশই বা প্রতিযোগিতাসক্ষম দামে রপ্তানি করতে পারবে কি না, সেটাও পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব আসাদুল আমিন দাদন বলেন, প্রতিবছর কৃষিজমি কমে চলে যাচ্ছে শিল্পায়নে, আবার একই সময়ে বাড়ছে খাদ্যের চাহিদা। বাড়তি চাহিদা মেটাতে হলে চালের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো প্রয়োজন, যেন অল্প জমিতে বেশি ধান জন্মে। আর তাই হাইব্রিড ধানের দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ অনুবিভাগের প্রধান বীজ প্রযুক্তিবিদ মো. আজিম উদ্দীন বলেন, শক্তিশালী তদারকব্যবস্থা এবং কঠোর শাস্তির বিধান নিশ্চিত করে বীজ আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।
কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের উপদেষ্টা মনজুর আহমেদ, ইউনাইটেড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এনামুল হক, সিড প্রত্যয়ন বিভাগের পরিচালক ইকবাল আহমেদ, ব্র্যাকের সুধীরচন্দ্র নাথ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কাজী ইকবাল, কাটসের সৌরভ কুমার প্রমুখ।