বাংলাদেশে ব্যবসার ব্যয় বেশি

এসকাপের প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সবুর খান ও মজিবুর রহমান
এসকাপের প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সবুর খান ও মজিবুর রহমান

স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ার পরও বাংলাদেশে ব্যবসা করার ব্যয় বিশ্বের উন্নত অনেক দেশের চেয়ে বেশি। এমনকি মালয়েশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে একজন ব্যবসায়ীর ব্যবসা করতে যে ব্যয় হয়, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ব্যয় হয় তার দ্বিগুণ।
জাতিসংঘের এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (এসকাপ) ‘এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট ২০১৩’-তে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ১৮ নভেম্বর প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। গতকাল শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) কার্যালয়ে এ দেশে প্রতিবেদনটি যৌথভাবে প্রকাশ করেছে এসকাপ, ঢাকা চেম্বার ও বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই)।
অনুষ্ঠানে বিএফটিআইয়ের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেছেন, এসকাপের প্রতিবেদনে ব্যবসার আনুষ্ঠানিকতার ক্ষেত্রে কাগজহীন প্রক্রিয়ায় যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এটি করা গেলে ব্যবসার ব্যয় ৬ থেকে ৭ শতাংশ কমানো সম্ভব। এখন ব্যবসায়ীদের ঋণের সুদ দিতে হয় ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত হারে। এটি এক অঙ্কের ঘরে নামিয়ে আনতে পারলে ব্যয় আরও ৫ থেকে ৬ শতাংশ কমবে।
এ সময় মজিবুর রহমান বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড এলাকার ৩২ কিলোমিটার রাস্তা পার হওয়া আর প্রশান্ত মহাসাগর পার হওয়া একই রকম হয়ে গেছে। রাস্তা ভালো না, যানজট লেগেই থাকে।
অনুষ্ঠানে এসকাপের প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন বিএফটিআইয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ। আলোচনা বাংলাদেশ ইনিশিয়েটিভ ফর লিডিং ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী ফেরদৌস আরা বেগম।
এসকাপের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশ শুল্কবহির্ভূত ব্যবসার ব্যয় কমানোর ব্যাপারে এশিয়ার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রতিবেশী দেশগুলোর ক্ষেত্রে তেমন অগ্রগতি করতে পারেনি। আন্ত-আঞ্চলিক বাণিজ্য সহজীকরণে বাংলাদেশের আরও উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
আমদানি-রপ্তানিসংশ্লিষ্ট কাজের প্রতিবন্ধকতা এবং সমুদ্রবন্দরসংক্রান্ত সেবার মানদণ্ড তুলনার জন্য ‘ইন্টারন্যাশনাল সাপ্লাই চেইন কানেকটিভিটি ইনডেক্স’ নামে একটি সূচকের উল্লেখ করেছে এসকাপ। এই সূচকে বিশ্বের ১৭৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৭। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রীলঙ্কা, ভুটান, ভারত, পাকিস্তান, নেপালও বাংলাদেশের চেয়ে এ ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া এবং পাপুয়া নিউগিনির সমুদ্রপথের যোগাযোগব্যবস্থার আরও উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। এসকাপ বলছে, এই তিনটি দেশের আমদানি ও রপ্তানি প্রক্রিয়া আরও সহজ করারও সুযোগ রয়েছে।
বিএফটিআই চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে দেশের অর্থনীতি কোনোভাবেই এগিয়ে যেতে পারবে না। সে কারণে অনুগ্রহ করে আপনারা (রাজনৈতিক দলগুলো) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক যোগাযোগের (কানেকটিভিটি) সঙ্গে জড়িত যেসব সড়ক রয়েছে সেগুলোকে হরতালের আওতামুক্ত রাখুন।’
এসকাপের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি ও আমদানির প্রবৃদ্ধি অর্ধেকে নেমে এসেছে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি সবুর খান বলেন, এখন রপ্তানিকেন্দ্রিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এ অবস্থা সব সময় থাকবে না। সে জন্য এখন বাণিজ্য ও বিনিয়োগকেন্দ্রিক প্রবৃদ্ধির দিকে যেতে হবে। তাহলে অনেক বেশি কর্মসংস্থান হবে।