মার্কিন ক্রেতারা ক্ষতিপূরণ দিতে চায় না

আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে ও সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় নিহত ও আহত শ্রমিকদের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এ সদ্য প্রকাশিত ‘ইউএস রিটেইলার্স ডিক্লাইনড টু এইড ফ্যাক্টরি ভিকটিমস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, যেখানে ইউরোপীয় ব্র্যান্ডগুলো অনেক দূর এগিয়ে এসেছে, সেখানে কিছু মার্কিন প্রতিষ্ঠান পিছিয়ে থাকছে।
তাজরীন ফ্যাশনস ও রানা প্লাজা ধসে হতাহতদের ক্ষতিপূরণ প্রদানে একটি তহবিল গঠন করার লক্ষ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বাংলাদেশ সরকার, শ্রমিক স্বার্থ সংরক্ষণকারী গোষ্ঠী ও বাংলাদেশি পোশাকের বিভিন্ন বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে তারা নিহত ১২ শতাধিক শ্রমিকের পরিবারের পাশাপাশি এক হাজার ৮০০ আহত ব্যক্তিকেও ক্ষতিপূরণ দিতে চায়।
হতাহত শ্রমিকদের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদানের লক্ষ্যে এরই মধ্যে ব্রিটিশ-আইরিশ কোম্পানি প্রাইমার্ক, ডাচ-জার্মান কোম্পানি সিঅ্যান্ডএ এবং বেনেটন, লোব ল’ ও এল কোর্তে ইঙ্গলস প্রভৃতি ইউরোপীয় ক্রেতা এগিয়ে এসেছে। তারা বলছে, দুর্ঘটনায় অনেক পরিবারই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়েছে। অনেক শ্রমিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত, অনেকেই আবার পঙ্গু হয়ে গেছেন। তাঁদের সন্তানদের যেন স্কুল ত্যাগ করতে না হয়, সেদিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার। এ ব্যাপারে আরও অধিকসংখ্যক ব্র্যান্ড এগিয়ে না আসায় কানাডীয় ক্রেতা লোব ল’-এর চেয়ারম্যান হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
প্রাইমার্ক রানা প্লাজার পঞ্চমতলার ‘নিউ ওয়েভ বটমস’ নামক কারখানায় পোশাক তৈরি করাচ্ছিল। ওই কারখানার ৫৫০ জন শ্রমিককেই শুধু তারা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না, বরং গোটা রানা প্লাজায় কর্মরত তিন হাজার ৬০০ শ্রমিককেই বেতন দিচ্ছে ছয় মাস ধরে। এ কার্যক্রম তারা অব্যাহত রাখবে আরও তিন মাস। এগিয়ে এসেছে সিঅ্যান্ডএও।
অন্যদিকে মার্কিন ক্রেতা ওয়ালমার্ট, চিয়ারস ও চিলড্রেনস প্লেসের মতো বড় ক্রেতারা এগিয়ে আসেনি। তারা ক্ষতিপূরণ প্রদানে ইতিমধ্যে অপারগতা জানিয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তারকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। যেখানে তিনি বলেছেন, ‘ইউরোপের কয়েকটি ব্র্যান্ডের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো মার্কিন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এক পয়সার সহযোগিতার আশ্বাসও পাওয়া যায়নি।’
প্রতিবেদনটিতে ‘ক্লিন ক্লোদস ক্যাম্পেইন’ নামের একটি শ্রমিক স্বার্থ সংরক্ষণকারী সংগঠনের প্রচার সমন্বয়ক সামান্থা মাহেরকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। যিনি নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো বিস্ময়কর রকমের দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন লাগার দুই মাস আগে সরবরাহকৃত কাপড়ের প্রায় ৫৫ শতাংশ প্রস্তুত হয়েছিল ওয়ালমার্টের জন্য। তাজরীন ফ্যাশনস ও রানা প্লাজায় হতাহত ব্যক্তিদের জন্য ৬০ লাখ ডলারের তহবিল গঠনের যে উদ্যোগ, সেখানে ওয়ালমার্টকেও যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল।
তবে ওয়ালমার্ট জানিয়েছে, তারা দুর্ঘটনা প্রতিরোধের লক্ষ্যে কাজ করবে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক বা তাঁদের পরিবারকে কোনো আর্থিক সহযোগিতা দেবে না। চিয়ারস ও চিলড্রেনস প্লেসও আশ্বাস দেয়নি কোনো রকম সহযোগিতা প্রদানের।
এ নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস কয়েকজন শিল্পকারখানা বিশ্লেষক বলেছেন, ক্ষতিপূরণের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার অর্থ হচ্ছে ভুল বা অন্যায় স্বীকার করে নেওয়া। সে ক্ষেত্রে আইনি জটিলতায় পড়ার শঙ্কা থাকে।