মৌসুমের শুরুতেই চড়া 'হালি' পেঁয়াজের দর

বাজারে আসতে না আসতেই বেড়ে গেছে দেশি পেঁয়াজের দাম। বছরের এ সময়টায় যে পেঁয়াজ সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়, তা এবার কেজিপ্রতি ৪৫ টাকায় উঠেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত চৈত্র মাসের বৃষ্টিতে পেঁয়াজ উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি দাম বাড়ার আশায় একশ্রেণির ব্যবসায়ী পেঁয়াজ কিনে মজুত করছেন। এতে সরবরাহে চাপ পড়ে দাম বেড়ে গেছে। তবে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের প্রচুর সরবরাহ থাকায় আসন্ন রমজান মাসে দাম অস্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ নেই বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
দেশে পেঁয়াজের মৌসুম শুরু হয় ডিসেম্বরে। প্রথম বাজারে আসে কন্দ থেকে উৎপাদিত পেঁয়াজ। ‘মুড়িকাটা’ নামে পরিচিত ওই পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায় না, কয়েক দিনের মধ্যেই পচে যায়। ঘরে রেখে দেওয়ার মতো পেঁয়াজ আসে মার্চের মাঝামাঝিতে। বীজ থেকে উৎপাদিত ওই পেঁয়াজকে ব্যবসায়ীরা ‘হালি’ পেঁয়াজ নামে ডাকেন। সাধারণ মানুষের কাছে তা ‘রাখী’ পেঁয়াজ নামেও পরিচিত।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গতকাল শনিবার প্রতি কেজি দেশি ‘হালি’ পেঁয়াজ ৪৫ টাকা চেয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। শেওড়াপাড়া ও মহাখালী বাজারেও একই দরে ওই পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ বিকোচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে।
কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া এলাকার ভাসমান ব্যবসায়ী মো. সাহির গতকাল প্রথম আলোকে জানান, তিনি বেশ কয়েকজন ক্রেতার কাছ থেকে সরবরাহ আদেশ নিয়েও পেঁয়াজ দিতে পারেননি। কারণ, তিনি দর চেয়েছিলেন কেজিপ্রতি ৩৫ টাকা, বাজারে গিয়ে দেখেন তাঁর নিজেরই কেনা পড়ছে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের লাকসাম বাণিজ্যালয় নামের একটি পেঁয়াজের আড়তের বিক্রয়কর্মী বাবু শেখ প্রথম আলোকে জানান, হালি পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে মাসখানেক হলো। প্রথমে কিছুদিন তা ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু কয়েক দিন পরেই দাম বাড়তে শুরু করে। তিনি বলেন, ‘দুই দিন আগে হালি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৩০ টাকা (পাইকারি) কেজি দরে বিক্রি করেছি, এখন সেটা ৩৫ টাকা।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৭ থেকে ১৮ লাখ টন দেশে উৎপাদিত হয়। পেঁয়াজ বেশি চাষ হয় ফরিদপুর অঞ্চলে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফরিদপুর জেলার উপপরিচালক আবদুর রউফ জানান, জেলার নয়টি ইউনিয়নে শিলাবৃষ্টি হয়েছিল। এতে মোট উৎপাদনের ৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া কিছু পেঁয়াজের মান খারাপ হয়ে গেছে।
রাজধানীর শ্যামবাজারের নবীন ট্রেডার্সের মালিক নারায়ণ সাহা বলেন, বৃষ্টিতে পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেকে মনে করছেন পেঁয়াজের দাম বাড়বে। এ কারণে মফস্বলের স্টক পার্টিরা (মজুতদার) প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ কিনে মজুত করছেন। এতে দাম বেড়ে গেছে।
নারায়ণ সাহা বলেন, এখন ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো। তাই দাম অস্বাভাবিক হওয়ার আশঙ্কা নেই।
কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে: রাজধানীর বাজারগুলোতে গত সপ্তাহে ছোলা, মসুর ডাল, পাম তেল ও দেশি রসুনের দাম বেড়েছে। কমেছে ডিমের দাম।
কারওয়ান বাজারে ছোলার কেজি ৮০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা। শেওড়াপাড়া বাজারের নূর জেনারেল স্টোরে তা ৮৫ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। ওই দোকানের বিক্রেতা মো. সুজন বলেন, গত সপ্তাহে তাঁর দোকানেও ছোলা ৮০ টাকাই ছিল। কিন্তু গত শুক্রবার তিনি বাড়তি দরে কিনেছেন। এ কারণে কেজিপ্রতি ৫ টাকা বাড়াতে হয়েছে।
মো. সুজন জানান, গত এক সপ্তাহে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে সরু দানার মসুর ডালের দাম ১৬০ টাকা ও মোটা দানার মসুর ডালের দাম ১১০ টাকায় উঠেছে। খোলা চিনির দাম কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা বেড়ে ৫৫ টাকা হয়েছে। দেশি রসুনের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা।