আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন

বিমানের নানা যন্ত্রাংশ সম্পর্কে হাতে–কলমে শেখার সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। ছবি: খালেদ সরকার
বিমানের নানা যন্ত্রাংশ সম্পর্কে হাতে–কলমে শেখার সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। ছবি: খালেদ সরকার

সাভার ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুল ও কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকের পড়া শেষ করেছেন মো. নাঈম হাসান। রোমাঞ্চকর কোনো পেশায় ভবিষ্যৎ গড়ার কথা ভাবছিলেন তিনি। খোঁজ করতে করতে তাঁর মনে হলো—বিমান ব্যবস্থাপনা পেশাটা বেশ আকর্ষণীয়। নাঈম ভর্তি হয়ে যান ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত কলেজ অব অ্যাভিয়েশন টেকনোলজিতে (ক্যাটেক)। 

কলেজ ক্যাম্পাসে কথা হয় নাঈম ও তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে। বিমানের এক প্রকাণ্ড ইঞ্জিনের পাশে বসে চলছিল তাঁদের আড্ডা। নাঈম বলেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখতাম রঙিন কিছু করব। সে জন্য বিমান ব্যবস্থাপনা নিয়ে পড়ছি। একটু কঠিন মনে হলেও ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে পড়ছি বিবিএ অ্যাভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট নিয়ে। তৃতীয় বর্ষে আছি। এরই মধ্যে বিভিন্ন বিমানবন্দরে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের পড়াশোনা খুব বেশিই ব্যবহারিক, মন দিয়ে না পড়লে সমস্যায় পড়তে হয়।’ নাঈমের সঙ্গে ছিলেন পিয়াল মোল্লা, মুনতাসির আহমেদ, আজগর হোসেন, আলিশা, অর্পিতা মাতব্বর ও সাদিয়া ইসলাম। সামনে পরীক্ষা। তাই তাঁদের আলোচনায় ঘুরেফিরে পড়ালেখার কথাই আসছিল।

অর্পিতা বলেন, ‘এখন তো সবাই একটা ভিন্ন পেশার সুযোগ খোঁজে। তাই আমিও অ্যাভিয়েশন নিয়ে পড়তে এসেছি। আমাদের দেশে অ্যাভিয়েশনে প্রতিবছর যে পরিমাণ দক্ষ কর্মী প্রয়োজন হয়, সেই পরিমাণে প্রশিক্ষিত লোকবল নেই। ফলে আমাদের সিনিয়ররা বিভিন্ন নামী এয়ারলাইনস বা বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত আছেন।’ 

বড় অংশই ব্যবহারিক
জানা গেল, নাঈমের মতো শিক্ষার্থীরা আরব আমিরাত, নাইজেরিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দর ও মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইনারে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। ক্লাসরুম থেকে শেখা বিদ্যা তাঁরা কাজে লাগাচ্ছেন হাতে–কলমে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মোজাক্কের হোসেন বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকেরা বিমান প্রকৌশল ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাই তাঁরা তাঁদের নানা অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে পারেন।’ কলেজ কর্তৃপক্ষ জানালেন, আয়ারল্যান্ডের লুফথানসা টেকনিক শ্যানন বিমানবন্দরে শিক্ষানবিশি করছেন এহসানুল হক ও সৈয়দ হাসান। আরাফাত রোমিও নামের আরেক শিক্ষার্থী ক্যাটেক থেকে পড়াশোনা শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের উইচিটা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টার্ন হিসেবে গবেষণা করছেন।

পড়ার বাইরে যত সুযোগ
ব্যবহারিক ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্টের বাইরেও শিক্ষার্থীদের একটা জগৎ আছে এখানে। ক্যাটেকের ছাত্র রোবায়াত হোসেন বলেন, ‘প্রতিবছর বিভিন্ন গবেষণা ও প্রকৌশলবিষয়ক প্রতিযোগিতায় আমরা অংশ নিই। বিভিন্ন প্রকল্প উপস্থাপনের মাধ্যমে ক্লাসে শেখা বিদ্যা কাজে লাগিয়ে আমরা ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করি।’ কলেজের অধ্যক্ষ মলি সরকার শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও কাজের আন্তর্জাতিক সুযোগের বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘সারা পৃথিবীতেই বিমান প্রকৌশলী ও কর্মীদের চাহিদা আছে। আমাদের দেশেও আরও কয়েকটি বিমানবন্দর চালু করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। অনেক দক্ষ জনবল দরকার। তাই আমরা শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক শিক্ষার দিকটিতে জোর দিচ্ছি। আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন বিশ্বের যেকোনো দেশের এয়ারলাইনস, বিমানবন্দর বা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার কাজ করতে পারে।’

যা পড়ানো হয়
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এই কলেজে দুটো বিষয়ে স্নাতক করার সুযোগ আছে। অ্যারোনটিক্যাল অ্যান্ড অ্যাভিয়েশন সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অ্যাভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট (বিবিএ) বিষয়ে পড়তে পারেন। অ্যারোনটিক্যাল অ্যান্ড অ্যাভিয়েশন সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিমানসংক্রান্ত বিজ্ঞান ও প্রকৌশল নিয়ে নানা বিষয় পড়ানো হয়। আর অ্যাভিয়েশন ম্যানেজমেন্টের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচিতে আছে বিমান ব্যবস্থাপনা, বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনাসহ অ্যাকাউন্টিং, ফিন্যান্স, মার্কেটিং ইত্যাদি। এ ছাড়া কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, এই কলেজ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগ আছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ীই শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারেন। দুটি বিষয়েই চার বছরের কোর্স। এখানে অ্যারোনটিক্যাল অ্যান্ড অ্যাভিয়েশন সায়েন্সে বিএসসি পড়তে আট সেমিস্টারের বেতন, ভর্তি ফি, আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ দিতে হবে ৭ লাখ ১০ হাজার ৫০০ টাকা। আর অ্যাভিয়েশন ম্যানেজমেন্টে বিবিএ পড়তে ৮ সেমিস্টারের খরচ মোট ৪ লাখ ৩০ হাজার ৫০০ টাকা। মেধা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা নানা রকম বৃত্তি ও আর্থিক প্রণোদনা পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া কলেজ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অধিবেশন, ইন্টার্নশিপ, প্রশিক্ষণ ও গবেষণার জন্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেয়। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট: www.catechedu.com। ঠিকানা: কলেজ অব অ্যাভিয়েশন টেকনোলজি, বাড়ি ১৪, সড়ক ২, সেক্টর ১১, উত্তরা। ফোন: ০১৯২৬৯৬৩৬৫৩