এখন আর কোচিং–প্রাইভেট পড়ছি না: অনুপমা শারমীন

মাধ্যমিক পর্যায়ে দেশসেরা অনুপমা শারমীন
ছবি: প্রথম আলো

প্রতিবছর জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক, শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষার বিভিন্ন শ্রেণিতে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে দেশসেরাদের বাছাই করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরীক্ষার ফলাফল, উপস্থিতির হার, নেতৃত্ব, ছবি আঁকা, খেলাধুলা, সংগীতের দক্ষতা এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির দক্ষতা, স্কাউট, গার্লস গাইড, বিএনসিসি ইত্যাদিতে সম্পৃক্ততা, সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ের ভিত্তিতে এ বছর চারজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হয়েছে।

এরা হলো বিদ্যালয়ে পর্যায়ে (মাধ্যমিক) ময়মনসিংহে বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী অনুপমা শারমীন অনন্যা, কলেজ পর্যায়ে রাজবাড়ী সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী কুইন, মাদ্রাসায় চট্টগ্রামের ষোলশহরের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসার স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মুহাম্মদ ফয়সাল আহমদ এবং কারিগরি শিক্ষায় দেশসেরা হয়েছে লালমনিরহাটের সরকারি আদিতমারী গিরিজা শংকর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষার্থী মো. রাগীব ইয়াসির রোহান। ২১ জুন ঢাকায় তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পুরস্কার হিসেবে সেরা শিক্ষার্থীরা পেয়েছে প্রত্যেকে ১০ হাজার টাকার সঙ্গে ক্রেস্ট, মেডেল ও সনদ। অনুপমা শারমীন কথা বলেছে প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিবেদক মোশতাক আহমেদ।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: সারা দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে তুমি শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়েছ, এ জন্য তোমাকে অভিনন্দন।

অনুপমা শারমীন: অনেক ধন্যবাদ।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: তুমি কেমন আছ?

অনুপমা শারমীন: পরম স্রষ্টার আশীর্বাদে ভালো আছি।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: তুমি ঢাকায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর হাত থেকে পুরস্কার নিয়ে ময়মনসিংহে পরিবার ও বিদ্যালয়ে যাওয়ার পরের পরিস্থিতিটি কেমন ছিল?

অনুপমা শারমীন: আমাদের পরিবার, আত্মীয়স্বজন সবাই খুবই খুশি। প্রতিযোগিতার মুহূর্তেও সবাই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন, অভিনন্দন জানিয়েছেন যখনই সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছি। আর আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আমাকে নিয়ে খুবই গর্বিত। স্কুলের জন্য এত বড় সম্মান আনায় তাঁরা আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক ম্যাডাম যাওয়া মাত্রই জড়িয়ে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, তুমি শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হয়ে এসেছ। এটি আমাদের জন্য খুবই বড় অর্জন। আর আমার বন্ধুরাও খুবই আনন্দিত।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর কাছ থেকে দেশসেরা মাধ্যমিক শিক্ষার্থীর পুরস্কার নিচ্ছে অনুপমা শারমীন
ছবি: খালেদ সরকার

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: তুমি কোন কোন যোগ্যতায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হয়েছ?

অনুপমা শারমীন: শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হয়ে থাকে মূলত গত বার্ষিক ও পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল, শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি, সংগীতের পারদর্শিতা, খেলাধুলা, লেখালেখি, চিত্রাঙ্কন, নৈতিকতা, নেতৃত্বের গুণাবলি, আইসিটির দক্ষতা ইত্যাদি মানদণ্ডের ভিত্তিতে। এগুলো প্রতিযোগিতার সময় উপস্থাপন করতে হয়েছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: তোমার ফলাফল বা অন্যান্য যেসব যোগ্যতার কথা বললে, সেগুলোর বিষয়ে যদি বলতে?

অনুপমা শারমীন: আমি গত সব কটি বার্ষিক পরীক্ষায় ভালো ফল অর্জন করেছি। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলাম। তবে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা হয়নি। নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষাতেও ভালো ফল করেছি। এসব নম্বরপত্র জমা দিয়েছি। আর আমি ছোটবেলা থেকেই গান করি। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমিতে মোট সাত বছর সংগীতের ওপর কোর্স করেছি। ২০১৮ সালে শুদ্ধসুরে জাতীয় সংগীত প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে স্বর্ণপদক পেয়েছি। ২০১৯ সালে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় উপস্থিত বক্তৃতায় সারা দেশে প্রথম হয়েছিলাম।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: তোমার বন্ধুদের সঙ্গে তোমার সম্পর্কটি কেমন?

অনুপমা শারমীন: বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা, পড়াশোনা, আড্ডা, পড়াশোনা সবকিছুতেই অংশীদারত্বের সম্পর্ক। এটি বিদ্যালয়ে ভালোভাবে অনুভব করতে পারি। বন্ধুদের সঙ্গে টিফিনসহ বিভিন্ন বিষয় ভাগাভাগির মাধ্যমে একটি আনন্দমুখর পরিবেশ তৈরি হয়।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: তুমি তো দেশসেরা। পড়াশোনাও কর ময়মনসিংহের অন্যতম সেরা একটি বিদ্যালয়ে? তোমার কি বিদ্যালয়ের পাঠদানের পরও কোচিং-প্রাইভেট পড়তে হয়?

অনুপমা শারমীন: আমি বিজ্ঞান বিভাগে পড়ি। বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে চমৎকার ক্লাস হয়। শিক্ষকেরা খুবই যত্ন ও আন্তরিকতার সঙ্গে ক্লাস নেন। বিদ্যালয়ে ক্লাসের পর মনে হয় না বাইরে পড়ার দরকার আছে। বিজ্ঞানের বাইরের বিষয়গুলোতেও খুবই ভালো ক্লাস হয়।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: তুমি কি কোচিং-প্রাইভেট পড়?

অনুপমা শারমীন: এখন পড়ছি না। তবে আগে কোচিং ও পরীক্ষা দেওয়া হতো। এখন আর পড়ছি না। এখন বিদ্যালয়েই চমৎকার ক্লাস হয়।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কিছু বলবে?

অনুপমা শারমীন: আমার মনে হয় আমাদের দেশের পড়াশোনার বিষয়টি সৃজনশীলতার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার না করে, হয়তো বড় চাকরি পাওয়া বা একঘেয়ে লক্ষ্য দিয়ে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী করার চেষ্টা করা হয়। ফলে আগ্রহের বদলে বরং আমরা পড়াশোনার প্রতি বিমুখ হয়ে যাই। যদি বিভিন্ন খেলার ছলে, বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে আনন্দদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করে যদি শিক্ষাদান করা হতো, তাহলে হয়তো আরও ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করি।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: তুমি আমাদের প্রিয় দেশটি কেমন দেখতে চাও?

অনুপমা শারমীন: প্রথমেই বলতে চাই দেশের সব মানুষকে সুখী দেখতে চাই। সব মানুষ ভালো থাকবে, কারও কোনো দারিদ্র্য থাকবে না। মানুষের জীবনমান উন্নয়ন হচ্ছে, এটি যেন আরও উন্নত হয়। প্রযুক্তি, অবকাঠামোসহ সব ক্ষেত্রেই যেন দেশ একটি উন্নত দেশ হবে—এ রকম একটি দেশ হিসেবে দেখতে চাই।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: তোমাদের পরিবারের কথা যদি বলতে?

অনুপমা শারমীন: আমার মা ও বাবা দুজনই সরকারি চাকরিজীবী। আমার ভাই রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ছে। ভাইয়াকে দেখতাম ছোটবেলা থেকেই, খুব পড়াশোনা করত। অন্যান্য চাচাতো, খালাতো ভাইবোনেরাও পড়ুয়া। তাদের দেখতে দেখতে আমিও কিছুটা এ রকম হয়ে গেছি।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: তোমার স্বপ্ন নিয়ে যদি কিছু বলতে?

অনুপমা শারমীন: আমার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন হলো বড় হয়ে একজন প্রকৌশলী হতে চাই। চিন্তা ও মননশক্তির বিকাশ ঘটিয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন করতে চাই, যা মানুষের জীবনকে আরও সহজ করে তুলবে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: তোমাকে ধন্যবাদ।

অনুপমা শারমীন: আপনাকেও ধন্যবাদ।