গণিত ইশকুল | স্লিপিং বিউটি প্যারাডক্স

আজ আমরা আলোচনা করব Sleeping Beauty Problem বা ঘুমন্ত সুন্দরীর সমস্যা নিয়ে, যার আসল সমাধান নিয়েই চলে নানান বিতর্ক।

সমস্যাটা অনেকটা এ রকম:

মনে করো, তুমি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্লিপিং বিউটিকে শুক্রবারে ঘুম পাড়িয়ে দিলে। এরপর একটা মুদ্রা টস করলে। এখন মুদ্রা টসে যদি হেড পড়ে, তাহলে তুমি একেবারে রবিবারেই স্লিপিং বিউটিকে ঘুম থেকে তুলবে। আর যদি টেইল পড়ে, তাহলে তুমি শনিবারে স্লিপিং বিউটিকে ঘুম থেকে তুলবে। তারপর আবার ওষুধ খাইয়ে আবার ঘুম পাড়িয়ে দেবে। তারপর রবিবারে আবার ঘুম থেকে তুলে দেবে। তবে এই ওষুধ এতই শক্তিশালী, সে যে মাঝখানে একবার ঘুম থেকে উঠেছে, তা তার মনে থাকবে না। অর্থাৎ শনিবার না রবিবারে ঘুম ভেঙেছে, সে বিষয়ে তার কোনো ধারণা থাকবে না।

এখন, যখনই স্লিপিং বিউটি ঘুম থেকে ওঠে, তুমি তাকে জিজ্ঞেস করো, আজ কী শনিবার না রবিবার? সে কী উত্তর দেবে? শনিবার হওয়ার সম্ভাবনা কত? আর রবিবার হওয়ারই বা সম্ভাবনা কত? বা আরও নির্দিষ্টভাবে তাকে জিজ্ঞেস করা যায়, মুদ্রা টসে কী হেড উঠেছিল না টেইল? তার আসলে কী বলা উচিত?

এখানেই ভিন্নমত আছে বিজ্ঞানী ও গণিতবিদদের মধ্যে।

এক দল বলে, যেহেতু ঘুম থেকে প্রথমবার উঠেছি নাকি দ্বিতীয়বার, এটা বোঝার উপায় নেই। তাই মুদ্রা টস সম্পর্কে ঘুম থেকে উঠলে আমাদের কোনো নতুন তথ্য নেই। সুতরাং মুদ্রা টসের সম্ভাব্যতা আদতে যা ছিল, তা–ই আছে। হেড-টেইল ফিফটি-ফিফটি। অর্থাৎ দুটোরই সম্ভাব্যতা ১/২। এদের নাম অর্ধেকবাদী(halfers)।

অন্যদের যুক্তিটা আরেকটু জটিল। ধরা যাক, স্লিপিং বিউটির সঙ্গে এই অমানুষিক পরীক্ষা আমরা একবার না, করেছি ১০০ বার। তাহলে ১০০ বারের মধ্যে প্রায় ৫০ বারের মতো পড়বে টেইল। এই ৫০ বার সে একবারই ঘুম থেকে রবিবারে উঠবে। আর বাকি ৫০ বারের মতো পড়বে হেড। সে ক্ষেত্রে সে ৫০ বারের প্রতিবারই শনিবারে এবং রবিবারে দুইবারই ঘুম থেকে উঠবে। তার মানে এই হেড পড়ার জন্য ৫০ বারের ক্ষেত্রে সে মোট ঘুম থেকে উঠেছে ৫০+৫০=১০০ বার। সুতরাং মোট ১০০+৫০ = ১৫০ বারের মধ্যে ১০০ বার কয়েনে ছিল টেইল। ৫০ বার কয়েনে ছিল হেড। এই অর্থে চিন্তা করলে, কয়েনের রেজাল্ট হেড হওয়ার সম্ভাবনা টেইল হওয়ার অর্ধেক। অর্থাৎ হেডের সম্ভাবনা ১/৩। এ রকম চিন্তা করা বিজ্ঞানী ও গণিতবিদদের বলে তৃতীয়াংশবাদী(thirders)।

বলাই বাহুল্য, এ রকম ওষুধ খাওয়ানো পরীক্ষা আসলে কেউ করেনি। কিন্তু তাহলে এটা কেন আলোচনা করছি?
চলো, তাহলে নজর দিই বাস্তব দুনিয়ার আধুনিক কিছু সমস্যার দিকে, যেটা ভবিষ্যতের জন্য বিপুল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে বলে ধারণা করা হয়। টেসলা, গুগলের মতো কোম্পানিগুলো অনেক দিন ধরে সেলফ-ড্রাইভিং গাড়ি বানানোর ব্যাপারে কাজ করছে। এখানে একটা সমস্যা হচ্ছে, মানুষ তো এখনো নিজেই গাড়ি চালায়। এখন কোনো সেলফ-ড্রাইভিং গাড়ি যদি বোঝে যে একটা দুর্ঘটনা ঘটাতে যাচ্ছে তার মানুষ, তাহলে সে কিছুক্ষণের জন্য নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নিতে পারে, দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য। এখন ধরে নাও, মানুষ দুই রকম। এক দল জীবনে একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটাবে। আরেক দল জীবনে একটা দুর্ঘটনা করার পর আবার আরেকটা দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। অর্থাৎ জীবনে মোট দুটি বড় দুর্ঘটনা ঘটবে। এখন এই প্রশ্ন মাথায় রেখে সেলফ-ড্রাইভিং গাড়ি চিন্তা করবে, তার মানুষ চালকটা আসলে কোন দলের? এক দুর্ঘটনা নাকি দুই দুর্ঘটনা? এক দুর্ঘটনা করার দলের হলে ওকে আবার গাড়ি চালানোর নিয়ন্ত্রণ ফেরত দেওয়া যায়। কিন্তু দুই দুর্ঘটনা হলে কি ওকে আর সুযোগ দেওয়া উচিত হবে?
এবার ভেবে দেখো, মানুষের এক দুর্ঘটনা দলের হওয়ার সম্ভাব্যতা কেমন? বেশি নাকি কম? ১/২ নাকি ১/৩? অনেকেই হয়তো ধরে ফেলেছ, এটাই স্লিপিং বিউটি প্রবলেম। আর সেলফ-ড্রাইভিং কারের বুদ্ধিমত্তা ডিজাইন করার জন্য এই সমস্যা বেশ কৌতূহল জাগানো ধারণা হতে পারে।

এবার তোমার চিন্তা করার পালা, তুমি কোন দলের? অর্ধেকবাদী নাকি তৃতীয়াংশবাদী? উপরের পোলে (ভোটাভুটিতে) মতামত জানিয়ে না থাকলে জলদি তোমার মতামত জানিয়ে দাও। আজ থেকে ১০ বছর পর যদি তোমাকে একটা সেলফ-ড্রাইভিং গাড়ির ডিজাইন করতে বলা হয়, তাহলে তুমি কেমন আচরণ চাইবে গাড়ির কাছে? এখনই ভাবনা শুরু করো ভবিষ্যতের জন্য।