অধ্যায় ৪
প্রশ্ন: বাংলা ভাষায় প্রত্যয়ের প্রয়োজনীয়তা
আছে কি?
উত্তর
বাংলা ভাষায় প্রত্যয়ের প্রয়োজনীয়তা: মানুষের ভাব প্রকাশের প্রধান ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে ভাষা। একমাত্র ভাষাই তার মনের কথাকে সুন্দর ও সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করতে সক্ষম। আর এ কাজে ভাষাকে সাহায্য করে তার শব্দসম্ভার। সে জন্য যে ভাষার শব্দভান্ডার যত সমৃদ্ধ, সেই ভাষার প্রকাশক্ষমতাও তত বেশি।
বাংলা ভাষার শব্দ গঠনের যেসব পদ্ধতি বা নিয়ম আছে, প্রত্যয় তার মধ্যে অন্যতম। প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রত্যয় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শব্দ সৃষ্টি করে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করে চলেছে। যেমন: মিশ্-এর সঙ্গে ‘উক’ প্রত্যয় যুক্ত করলে গঠিত হবে ‘মিশুক’—এই নতুন শব্দটি, মেঘ শব্দের সঙ্গে ‘লা’ প্রত্যয় যোগ করলে পাওয়া যাবে ‘মেঘলা’ শব্দটি।
এমনিভাবে কৃৎ ও তদ্ধিত প্রত্যয় দ্বারা নতুন নতুন শব্দ সৃষ্টি হয়ে বাংলা শব্দভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে চলেছে। সুতরাং, বাংলা ভাষায় প্রত্যয়ের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: ‘উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে’—আলোচনা করো।
উত্তর
উক্তিটি বিশ্লেষণ: যেসব অব্যয় মূল শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে মিলে বা ধাতুকে অবলম্বন করে ওই ধাতুর নানা অর্থের সৃষ্টি করে, তাদের উপসর্গ বলা হয়। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত উপসর্গগুলোর কোন অর্থবাচকতা নেই, শুধু মূল শব্দ বা ধাতুর আগে এরা ব্যবহৃত হলেই এদের অর্থদ্যোতকতা শক্তি দৃষ্ট হয়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়: ‘অনা’ একটি উপসর্গ। এর নিজের কোনো অর্থ নেই।
কিন্তু ‘আবাদ’ শব্দের আগে ‘অনা’ শব্দটি
ব্যবহৃত হয়ে ‘অনাবাদ’, অর্থাৎ ‘আবাদ নেই যার’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তেমনকি এটা আচারের
পূর্বে ব্যবহৃত হয়ে অনাচার (আচারবহির্ভূত অর্থে) এবং সৃষ্টির আগে ব্যবহৃত হয়ে অনাসৃষ্টি
(অদ্ভুত অর্থে) হয়েছে। এরূপে ভিন্ন ভিন্ন অর্থদ্যোতকতা
সৃষ্টি করেছে। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে যে উপসর্গসমূহের নিজস্ব কোনো বিশেষ অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অন্য শব্দের আগে যুক্ত হলেই এদের অর্থদ্যোতকতা বা সংশ্লিষ্ট শব্দের নতুন অর্থ সৃজনের ক্ষমতা সৃষ্টি হয়।