চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা

তারুণ্য উৎসবে শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো
তারুণ্য উৎসবে শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো

‘ও পৃথিবী এবার এসে বাংলাদেশ নাও চিনে’ গানের সঙ্গে মঞ্চে তখন নৃত্য পরিবেশন করছিলেন একদল তরুণ। চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীদের কোরিওগ্রাফিতে উঠে এল বাংলাদেশের হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানের সম্প্রীতির আখ্যান। কনফিডেন্স সিমেন্ট-প্রথম আলো তারুণ্য উৎসব ২০১৬-এর পুরো আয়োজনেই ছিল এমন সব চমকপ্রদ পরিবেশনা। ৫ থেকে ৭ অক্টোবর চট্টগ্রামের জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। পঞ্চমবারের মতো বন্দরনগরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটির সহযোগী ছিল প্রথম আলো চট্টগ্রাম বন্ধুসভা।

তিন দিনের তারুণ্য উৎসবের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল ‘বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ’। এ বিষয়ের ওপর নাচ, গান, অভিনয়সহ বিভিন্ন পরিবেশনার মাধ্যমে শিল্পকলার মঞ্চ মাতিয়ে রেখেছিলেন চট্টগ্রামের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের বিভিন্ন পরিবেশনায় উঠে এসেছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতার ইতিহাস, ক্রিকেটের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়সহ দেশের বিভিন্ন অর্জন, যা মুগ্ধ করেছে হাজারো দর্শককে।

সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্বে থাকা আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ ধরনের আয়োজন আগে কখনো চট্টগ্রামে হতো না। পঞ্চমবারের মতো প্রথম আলোর এ আয়োজনে অংশ নিয়ে তরুণেরা যে দেশপ্রেম তুলে ধরল, তা আমাদের আশাবাদী করে তুলেছে। দেশের পতাকার ভার এই তরুণেরাই নিতে পারবেন।’ বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশিদুজ্জামান বলেন, ‘প্রতি বছর পত্রিকায় দেখে এই আয়োজন সম্পর্কে জেনেছি। এ বছর বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক দলের দায়িত্ব নিয়ে এলাম। তারুণ্য উৎসবের বিভিন্ন পর্বের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাটিই আমার কাছে সেরা মনে হয়েছে। স্কুল পর্যায়ের চূড়ান্ত পর্বের বিতর্কটিও বেশ উপভোগ্য ছিল।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনাগুলো অনেক দিন মনে রাখার মতো বলে জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মামুনুল হক। ওদিকে সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহমেদ চিশতীর মতে, ‘পুরস্কার পাওয়ার জন্য নয়। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য। এখানে এসে যা পেলাম, তা বলে বোঝানো যাবে না।’ আগ্রাবাদ এলাকা থেকে ছেলেকে নিয়ে উৎসবে আসা শারমিন হকও ভীষণ খুশি। তিনি বলেন, ‘দেশ নিয়ে তরুণদের ভাবনার প্রতিফলন আমাকে মুগ্ধ করেছে। আশাবাদী করেছে।’

শিল্পকলা একাডেমির মুক্তমঞ্চে বসেছিল আন্তস্কুল ও আন্তকলেজ বিতর্কের চূড়ান্ত পর্বের আসর। বিতর্ক বিভাগে স্কুল পর্যায়ে এবার শ্রেষ্ঠ হয়েছে প্রেসিডেন্সি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। রানারআপ হয়েছে সিলভার বেলস গার্লস হাইস্কুল। কলেজ পর্যায়ে জয়ী হয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী কলেজ। রানারআপ হয়েছে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ। আন্তবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম, পোর্টসিটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় ও চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি তৃতীয় স্থান অধিকার করে। উৎসবে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত আন্তবিদ্যালয় আইডিয়া জেনারেশন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছে ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল। দ্বিতীয় হয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল ও তৃতীয় হয়েছে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ। ৭ অক্টোবর সমাপনী দিনে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সাংসদ ওয়াসিকা আয়েশা খান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (ইউএসটিসি) উপাচার্য প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া ও কনফিডেন্স সিমেন্ট লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক জহির উদ্দিন আহমেদ।

৫ অক্টোবর সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বেলুন উড়িয়ে তিন দিনের এ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরিন আক্তার। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কনফিডেন্স সিমেন্টের নির্বাহী পরিচালক এবং বিক্রয় ও বিপণন প্রধান জহির উদ্দিন আহমেদ এবং প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী।