ক্যাম্পাস রেডিও, ক্যাম্পাসের রেডিও

বুয়েট ক্যাম্পাসে এই তরুণেরা চালু করেছেন ‘বুয়েট রেডিও’। স্টুডিও নেই, তাতে কী! প্রবল ইচ্ছেকে পুঁজি করেই চলছে তাঁদের কার্যক্রম। ছবি: তানভীর তমাল
বুয়েট ক্যাম্পাসে এই তরুণেরা চালু করেছেন ‘বুয়েট রেডিও’। স্টুডিও নেই, তাতে কী! প্রবল ইচ্ছেকে পুঁজি করেই চলছে তাঁদের কার্যক্রম। ছবি: তানভীর তমাল

ক্যাম্পাসের ছোট্ট গণ্ডি থেকে একটি উদ্যোগ যে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে, তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ—ফেসবুক! হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির কার্কল্যান্ড হাউসের এইচ-৩৩ ঘরে বসে মার্ক জাকারবার্গ যে প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন, আজ সেই প্রকল্পই তো তাবৎ দুনিয়ার মানুষকে এক ছাদের নিচে এনে দিয়েছে। বাংলাদেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস রেডিও চালু করেছেন, তাঁরা অবশ্য অত বড় পরিসরে পৌঁছানোর কথা ভাবছেন না। স্রেফ আনন্দের জন্য, সাধ্য অনুযায়ী নিজেদের ক্যাম্পাসে তাঁরা রেডিওর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
কীভাবে শুরু হলো রেডিওর এই কার্যক্রম? কেমন করে হয় এর কর্মযজ্ঞ? স্টুডিওই বা কোথায়? সব প্রশ্নের উত্তর জানতে, কথা হয় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে; নিজেদের ক্যাম্পাসে যাঁরা রেডিও চালু করেছেন।

বুয়েট রেডিও
২০১৫ সালের ১৪ অক্টোবর যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের গড়া ‘বুয়েট রেডিও’। এখানে প্রতি বৃহস্পতিবার একটি নিয়মিত অনুষ্ঠান ছাড়াও প্রচারিত হয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কনসার্ট। অনলাইনে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে শোনা যায় বলেই হয়তো বর্তমান ও সাবেক বুয়েটিয়ানদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় এই বুয়েট রেডিও। পেছনের মূল কারিগর, যন্ত্রকৌশলের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী পার্থ প্রতীম দাস। সঙ্গে উৎসাহী আরও একদল সহপাঠী তো আছেনই। যন্ত্রকৌশল বিভাগের হাসিব, সঞ্জীব ও শাইখ আল মাহমুদ, কম্পিউটার-কৌশলের সুমাইয়া আর শাহাদ, পুরকৌশলের ফারজানা ও ফারহান এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সেঁজুতি আছেন বুয়েট রেডিওর সঙ্গে। এলামনাইরাও সাহায্য করছেন সাধ্যমতো। ‘আমাদের নিজেদের কোনো স্টুডিও নেই। তাই শো করার সময় হলের রুমই ভরসা।’ বলছিলেন পার্থ। আর কোনো অনুষ্ঠান থাকলে সব যন্ত্রপাতি নিয়ে অনুষ্ঠানের ভেন্যুতে হাজির হয়ে যান তাঁরা।

রেডিও মেডিটিউন
মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘রেডিও মেডিটিউন’ যাত্রা শুরু করে গত ৪ অক্টোবর। মূল উদ্যোক্তা, ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী প্রিয়ক, ফাহিম ও বিভাস সহযোগিতা পেয়েছেন বুয়েট রেডিও দলের কাছ থেকে। মেডিটিউনে এখন সাঁচি, নিশি, শান্তনু, আবীর, হৃদয়, কান্তাসহ বেশ কয়েকজন কাজ করছেন। এই রেডিওতে প্রতি বৃহস্পতিবার একটি নিয়মিত আয়োজন থাকে। মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের গান, কবিতা, কৌতুক, কুইজ থেকে শুরু করে শ্রুতিনাটকও প্রচারিত হয় এখানে। মুঠোফোনে কথা হলো প্রিয়কের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের মেডিটিউন রেডিও কিন্তু শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের জন্য না। অন্যান্য মেডিকেলের শিক্ষার্থীরাও আমাদের কনটেন্ট পাঠিয়ে দেন।’
স্টুডিও নেই। তাই আপাতত মেডিসিন ক্লাবের রুম ব্যবহার করছেন তাঁরা। তবে প্রথম দিনের ‘লাইভ প্রোগ্রাম’ সম্প্রচারিত হয়েছিল ছেলেদের হলের একটি রুম থেকে। মজার ব্যাপার হলো, বাইরে থেকে যেন শব্দ না আসে, তাই দরজা-জানালা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বন্ধ ছিল ফ্যানও। ওদিকে গরমে সবার সেদ্ধ হওয়ার জোগাড়! তবু প্রথম সম্প্রচার বলে কথা! বাধ্য হয়ে সবাই খালি গায়ে বসেই লাইভ প্রোগ্রামটি করেছিলেন!

আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘​রেডিও অস্ট’ এর কর্মীরা
আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘​রেডিও অস্ট’ এর কর্মীরা

রেডিও অস্ট
রাতারাতি কাজ শুরু হয়েছিল আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রেডিও অস্ট’-এর। এক রাতের পরিকল্পনা, পরদিনের পরিশ্রম; ব্যাস! রাতের মধ্যেই অনলাইনে দাঁড়িয়ে গেল লোগোসহ রেডিও অস্ট। পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী শামীম মাহফুজ ও নাসির উদ্দীন মাহমুদ ছিলেন এই কর্মযজ্ঞের পেছনে। কথা হলো শামীমের সঙ্গে। বললেন, ‘রেডিও অস্ট সম্প্রচার হয় প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার রাত নয়টা থেকে। এখন আরজে হিসেবে কাজ করছেন অম্লান, ফজলে রাব্বি, ইয়াসিন ও ফরহাদ। শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা নিয়মিত প্রোগ্রাম করি। সঙ্গে থাকে কণ্ঠ ও যন্ত্রসংগীত পরিবেশনা; ভালো লাগা ও ভালোবাসার কথাগুলো।’

সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার অনুষ্ঠান প্রচার করে রেডিও কুয়েট
সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার অনুষ্ঠান প্রচার করে রেডিও কুয়েট

রেডিও কুয়েট
সপ্তাহের শুক্রবার ও শনিবার দুদিন অনুষ্ঠান প্রচার করে খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রেডিও কুয়েট’। শিক্ষার্থীদের গান থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো নোটিশ—সবই প্রচার করা হয়। শুরুটা হয়েছিল ইসিই বিভাগের মৃন্ময় তুষার ও বায়োমেডিক্যাল বিভাগের জয় জেমস কস্তার হাত ধরে। বর্তমানে তাঁদের সঙ্গে আরও আছেন বায়োমেডিক্যালের প্রিতম, সিহাব ও স্টিলেরিয়া, কম্পিউটার-কৌশলের মুইজ, যন্ত্রকৌশলের ফাইযা এবং ইসিইর সাইদুর রহমান।

ইউল্যাবের ‘রেডিও ক্যাম্পবাজ’ এর আছে নিজস্ব স্টুডিও
ইউল্যাবের ‘রেডিও ক্যাম্পবাজ’ এর আছে নিজস্ব স্টুডিও

ইউল্যাব রেডিও ক্যাম্পবাজ
অন্যান্য ক্যাম্পাসের তুলনায় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) ‘রেডিও ক্যাম্পবাজ’ একটু আলাদা। ২০১১ সালে এখানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অধীনেই ক্যাম্পাস রেডিও চালু হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে কাজ শেখানোর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেও, অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও এই রেডিওর সঙ্গে কাজ করছেন। মুঠোফোনে কথা হলো রেডিও ক্যাম্পবাজের বাংলা নিউজ প্রোডিউসার মেহেদী হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রতি রবি থেকে বুধবার টানা চার দিন দুই ঘণ্টা করে চলে আমাদের প্রোগ্রাম।’

ক্যাম্পাস রেডিও চালু করতে
নিজ ক্যাম্পাসে রেডিও চালু করতে চাইলে করণীয় কী? বুয়েট রেডিওর পার্থ প্রতীম দাস বললেন, ‘খুব সহজ। প্রথমে আপনাকে অনলাইনে একটি ব্রডকাস্টিং সার্ভার কিনতে হবে। লিসেনটুরেডিও, রেডিওনোমি, শাউটকাস্ট নামের বেশ কিছু ওয়েবসাইটে এ ধরনের সার্ভার পাওয়া যায়।’ একটু দম নিয়ে পার্থ আবার শুরু করলেন, ‘পরের কাজ সার্ভার সেটআপ; এর জন্য একটা জুতসই উইন্যাম্প বা স্যাম সফটওয়্যার ডাউনলোড করতে হবে। এরপর মিডিয়া প্লেয়ার তৈরি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে webplayershoutcast.com-এ ঢুঁ মারতে পারেন। এখানে তৈরি করা মিডিয়া প্লেয়ারের কোড আপনার ওয়েবসাইটে দিলেই মিডিয়া প্লেয়ারটি এম্বেড হয়ে যাবে। উইন্যাম্প থেকে সংযোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ ওই ওয়েবসাইটে ঢুকে আপনার রেডিওর কার্যক্রম শুনতে পারবেন।’