সাগরের সাতকাহন

আবু সাঈদ আল সাগর
আবু সাঈদ আল সাগর

বন্ধুরা বলেন, মাইক্রোফোন হাতে নিলেই নাকি আবু সাঈদ আল সাগর ‘অন্য মানুষ’ হয়ে যান। তাঁর মুখে তখন কথার খই ফোটে, মাইক্রোফোন আর ছাড়তেই চান না। তবে হ্যাঁ, তাঁর কথা শুনে যে শ্রোতারা বিরক্ত হন, তা কিন্তু নয়। সবাই বরং মুগ্ধ হয়ে শোনেন আবু সাঈদ আল সাগরের গল্প। সাগর পড়ছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ বর্ষে, পরিসংখ্যান বিভাগে। পড়ালেখার বাইরে বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ।

যেখানেই কোনো প্রতিযোগিতা, সেখানেই তিনি আছেন। সাগরের ভাষায়, ‘প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পাওয়াই মুখ্য নয়। বরং সব প্রতিযোগিতাতেই আমি নতুন কিছু না কিছু শিখেছি।’ আর সেই শেখা কাজে লেগেছে গত বছর ব্র্যান্ড ফোরামের উদ্যোগে হয়ে যাওয়া ‘ইয়ুথ ফেস্ট ২০১৭’-তে। সারা দেশের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে সাগরদের দল সিঙ্গাপুরের ‘স্পাইকস এশিয়া’-তে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায়। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) আয়োজিত ইয়ুথ লিডারশিপ সামিটেও প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেন সাগর। সেখানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার বল উপস্থিত প্রায় ৪০০ অংশগ্রহণকারীর মধ্যে দুজনকে ‘লিডারশিপ কনসেপ্ট অ্যাওয়ার্ড’ দেন। এই দুজনের মধ্যে একজন ছিলেন সাগর। বর্তমানে ‘বিওয়াইএলসি গ্র্যাজুয়েট নেটওয়ার্ক’-এর রংপুর বিভাগের সহকারী বিভাগীয় সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এ ছাড়া সম্প্রতি দেশব্যাপী ব্র্যাক আয়োজিত আরবান ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায় ছিলেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর’।

তবে এসবের কোনোটাই নয়, সাগরের কাছে তাঁর সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো ক্রিয়েটিভ সোসাইটি। কাছের কিছু বন্ধুর সহযোগিতায় দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ক্রিয়েটিভ সোসাইটি’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বর্তমানে আছেন এই ক্লাবের সভাপতির দায়িত্বে। তিনি বলেন, ‘আমরা মূলত এই ক্লাবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কমিউনিকেশন স্কিল ও প্রেজেন্টেশন স্কিল শেখানোর চেষ্টা করছি। পাশাপাশি এটাকে অভিনব আইডিয়া তৈরির একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। আজ আমি যতটুকু সাফল্য পেয়েছি কিংবা সবার সামনে কথা বলতে পারছি, এর পেছনে মূল অবদান এই সংগঠনের।’ ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়েও সাগর বর্তমানে ‘ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ’-এর রংপুর জেলার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

পড়াশোনাতেও তিনি কম যান না। স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে মাধ্যমিকে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর ভর্তি হন রংপুর সরকারি কলেজে। সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে সাগরের ঠিকানা হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে।

পড়াশোনার পাশাপাশি এত সব কাজ কীভাবে সামাল দেন? সাগরের উত্তর, ‘আমি সব সময় নতুন কিছু শিখতে পছন্দ করি। আগ্রহ থাকে সব সময়। সঙ্গে বন্ধুবান্ধব, পরিবার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহযোগিতা, অনুপ্রেরণা তো আছেই।’ আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা? সাগর বলেন, ‘আমি বিভিন্ন ধরনের কাজে যুক্ত থাকি শুধু দেখার জন্য, শেখার জন্য। জানতে চেষ্টা করি, কীভাবে একটি সংস্থা পরিচালিত হয়? কীভাবে মানুষ তার স্বপ্নের পেছনে ছোটে? আমার স্বপ্ন সেদিন সত্যি হবে, যেদিন আমি একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব।’