সনেট কথন

হামুদী হাসান
হামুদী হাসান

২০১৪ সালের ঘটনা। হামুদী হাসান তখন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) কম্পিউটারকৌশল বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। ক্লাসের চুপচাপ, শান্ত ছেলেটাই একটা একাডেমিক প্রকল্পে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলেন! শিক্ষকও অবাক। সি ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে ভিন্নধর্মী এক গেম বানিয়েছিলেন হামুদী আর তাঁর বন্ধুরা। সামনেই ছিল বেসিস আয়োজিত ‘সফট এক্সপো-২০১৪’। ক্লাসের সেই শিক্ষক তখন এই আয়োজনে পাঠিয়ে দেন হামুদী হাসানকে। সেই থেকে শুরু। এরপর রোবোটিকসসহ বিভিন্ন সৃষ্টিশীল আয়োজনে অংশ নেওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল তাঁর জন্য। শান্ত, চুপচাপ ছেলেটাই এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম পরিচিত মুখ। পড়ছেন শেষ বর্ষে। বন্ধুরা তাঁকে ডাকেন ‘সনেট’ নামে।

‘বেসিসের ওই প্রোগ্রামে গিয়ে সবার আগ্রহ দেখে অনেক বেশি ভালো লেগেছিল। তারপর থেকে যখন যেখানেই কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি, অংশ নিয়েছি।’ বলছিলেন সনেট। সে সময়ই তিনি ভালোবাসতে শুরু করেছিলেন রোবোটিকস। আগ্রহ আর ভালোবাসা, এই দুইয়ের সমন্বয়ে প্রতিযোগিতাগুলো থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়নি সনেটকে। প্রথম বর্ষে পড়ার সময়ই ক্যাম্পাসের ‘ইন্ট্রা ইউনিভার্সিটি প্রোজেক্ট শো’তে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন। আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল আরও। এরপর থেকে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া ন্যাশনাল হ্যাকাথনে দ্বিতীয় পুরস্কার, একই বছর আই ট্রিপলইর ‘বিডিএস হিউম্যানিটারিয়ান আইডিয়া অ্যান্ড অ্যাপ কনটেস্ট’-এ দ্বিতীয় পুরস্কার, ব্র্যাকাথনে প্রথম স্থান তাঁর অর্জনের ঝুলিকে সমৃদ্ধ করেছে প্রতিনিয়ত। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় সুযোগ পান সম্প্রতি হয়ে যাওয়া ‘ন্যাশনাল পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি হ্যাকাথন’-এ। তবে সেটা প্রতিযোগী হিসেবে নয়; বরং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আসা তরুণদের ‘মেন্টর’ হিসেবে। ‘যেই প্রতিযোগিতাগুলোতে এত দিন নিজে অংশ নিয়ে আসছি, সে রকম একটি প্রতিযোগিতায় মেন্টরিংয়ের সুযোগ পাওয়া আমার জন্য অবশ্যই অনেক বড় একটা গর্বের বিষয় ছিল।’ সনেটের চোখেমুখে তৃপ্তির আভা।

রোবোটিকসের প্রতি এত ভালোবাসা যাঁর, নিজ ক্যাম্পাসে তা নিয়ে একটি ক্লাব না খুলে কি থাকা যায়? সনেট তাই আর দেরি করেননি। ২০১৬ সালেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও সাত বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে খুলে বসেন রোবোটিকস ক্লাব। রোবোটিকসের ওপর আলোচনা, গবেষণা, কর্মশালা ইত্যাদির আয়োজন করা এই ক্লাবের কাজ বলে জানালেন তিনি। বর্তমানে সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন সনেট। পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এসাব) ইউআইইউ ইউনিট ফেসের সহকারী সমন্বয়কের দায়িত্বও তাঁর। মাঝে বেশ কিছু দিন যুক্ত ছিলেন ইউআইইউ কম্পিউটার ক্লাবের সঙ্গে। স্বেচ্ছাসেবী কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গেও কাজ করেছেন তিনি।

বেড়ে ওঠা ফরিদপুরে। বাবা কামরুল হাসান এবং মা মহিমা হাসানের সন্তান সনেটের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক কেটেছে ফরিদপুর জিলা স্কুল ও ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে। ছোটবেলা থেকেই শান্ত স্বভাবের সনেটের ফুটবলের প্রতি ছিল আলাদা ভালো লাগা। বার্সেলোনা তাঁর প্রিয় দল। এই ফুটবল এবং প্রিয় খেলোয়াড় মেসিকে নিয়ে একটা মজার ঘটনার কথা শোনালেন তিনি।

গত বিশ্বকাপের আগে ‘টিম মেসি’ ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে ‘হ্যাশট্যাগ ভ্যামোস লিও’ লিখে মেসিভক্তরা মেসিকে নিয়ে নানা রকম আঁকিবুঁকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে প্রকাশ করেছিলেন। মেসিভক্ত সনেটও একটা আঁকিবুঁকি আপলোড করেছিলেন ফেসবুকে। কদিন পর মেসির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর ভক্তদের কর্মকাণ্ড নিয়ে তৈরি একটি ছোট্ট ভিডিওচিত্র। তারপর? ‘সেখানে আমার ছবি, আমার পোস্ট করা ছবি দেখে খুব অবাক হয়েছিলাম। এটা হয়তো তেমন কিছু না, কিন্তু ভীষণ ভালো লেগেছিল।’ সনেট বলছিলেন।

সবশেষে জানতে চাই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। বললেন, বাংলাদেশকে গবেষণায় আরও এগিয়ে নিতে চান তিনি।