ইস্ট ওয়েস্টের অ্যাডেল!

মীর বুশরা বিন্‌তে বাশার। ছবি: ইমরান
মীর বুশরা বিন্‌তে বাশার। ছবি: ইমরান

‘মীর বুশরা বিন্তে বাশার। জি, এই চারজনই আমি। হা হা হা!’ নিজের পরিচয়টা মজা করেই দিলেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির প্রিয় মুখ বুশরা। ওহ্হো, শুধু ‘বুশরা’ বললে তাঁর পরিচয়টা ঠিক পূর্ণ হলো না। বলতে হবে ‘অ্যাডেল বুশরা’! ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা তো তাঁকে এ নামেই চেনেন। কেন? বলছি।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বেরিয়ে ২০১৪ সালে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন তিনি। পরিচিতি পর্বের ক্লাসে অগ্রজদের কাছ থেকে জানতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাবগুলোর কথা। বুশরা বলছিলেন, ‘দুইটা ক্লাব আমার মনে ধরল। একটা ইংলিশ কনভারসেশন ক্লাব আরেকটা ক্লাব ফর পারফর্মিং আর্টস।’ প্রথম সেমিস্টারেই তিনি যোগ দেন ইংলিশ কনভারসেশন ক্লাবে। সংগঠনটির অবস্থা তখন খুব একটা ভালো না। তেমন কোনো কার্যক্রম নেই, সদস্যরাও খুব একটা সক্রিয় নন। বুশরার মনে হলো, কিছু একটা করা দরকার। নানা রকম কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্লাবটাকে সচল রাখতে উঠেপড়ে লাগলেন তিনি। ব্যস, সংগঠনের ছোট মানুষটার কাঁধেই বড় বড় দায়িত্ব পড়তে লাগল। দুই বছর পর বুশরা হয়ে গেলেন ক্লাবের প্রেসিডেন্ট। জনপ্রিয় করে তুললেন ইংলিশ কনভারসেশন ক্লাবটিকে। যে ক্লাবের তেমন কোনো কার্যক্রম ছিল না, এখন সেই ক্লাবেরই সদস্য হতে শিক্ষার্থীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এটাই তাঁর বড় পাওয়া।
ও হ্যাঁ, ‘অ্যাডেল’ নামকরণের গল্পটা তো বলা হয়নি। বলি। বুশরা কিন্তু ‘ক্লাব ফর পারফর্মিং আর্টস’-এরও সদস্য। ক্লাবে যোগ দিতে অডিশনে গিয়ে নাকি প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন, তিনি গান গাইতে পারেন! এর আগে নিজের এই প্রতিভার কথা জানাই ছিল না। প্রথমবার মঞ্চে উঠে গেয়েছিলেন জেনিফার লোপেজের ‘গেট অন দ্য ফ্লোর’। তখনো বুশরাকে কেউ চিনত না। এরপর এক অনুষ্ঠানে অ্যাডেলের ‘রোলিং ইন দ্য ডিপ’ গেয়ে হঠাৎ করেই পুরো ক্যাম্পাসে পরিচিতি পেয়ে গেলেন। শুধু কি অ্যাডেলের গান? মাইকেল জ্যাকসনের ‘বিট ইট’, বন জোভির ‘ইটস মাই লাইফ’, ইভানেসেন্সের ‘ব্রিং মি টু লাইফ’, আর্বোভাইরাসের ‘অমানুষ’, জলের গানের ‘পাতার গান’, এমনকি লালনের গানেও মঞ্চ মাতিয়েছেন বুশরা। তবে সেই যে রোলিং ইন দ্য ডিপ গেয়েছিলেন, এরপর থেকেই তাঁর পরিচয় ‘অ্যাডেল বুশরা’। এখন আবার মাথায় চেপেছে ছবি তোলার ভূত। যোগ দিয়েছেন ফটোগ্রাফি ক্লাবে।
স্কুল-কলেজে পড়ার সময় সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। ‘ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন’-এর সঙ্গে দুই বছর কাজ করেছেন। পড়ালেখার পাশাপাশি এসবের সঙ্গে থাকার মাঝেই আনন্দ খুঁজে পান। আর ভালো লাগে ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাস। তাই সংগঠনের কাজের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকার পরও বুশরার সিজিপিএটা মন্দ না।
সহযোগী সারাহ এলমাকে সঙ্গে নিয়ে পাঁচ মাস খেটেখুটে তৈরি করেছেন একটি গবেষণাপত্র। বিষয়: চলচ্চিত্রের দুনিয়ায় নারীর উপস্থাপন। গত ১৮ মে ব্র্যাকের একটি সম্মেলনে গবেষণাটি উপস্থাপনের সুযোগ পেয়েছিলেন। কাজ এখনো বাকি আছে। তবে জানালেন, এই গবেষণা তাঁর ঝুলিতে যোগ করেছে দারুণ কিছু অভিজ্ঞতা।
আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা? প্রশ্ন শুনে বুশরা দিলেন অবাক করা উত্তর। ‘নেই।’ উত্তরটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বললেন, ‘আমি বর্তমানে বাস করতে পছন্দ করি। যখন যে চ্যালেঞ্জ সামনে আসবে, সেটাই উপভোগ করব। আমি চাই সারা পৃথিবীর মানুষ আমার কাজ দিয়ে আমাকে চিনুক। সুযোগ পেলে পৃথিবীর আনাচকানাচে ঘুরে বেড়াতে চাই।’ বুশরার সব কাজের স্পৃহা তাঁর ভাই মীর ফারহান ইবন বাসার। সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে বসে ছোট বোনকে অনুপ্রেরণা দেন তিনি।