স্বপ্নিল শুভ্র

রায়হান ইসলাম শুভ্র
রায়হান ইসলাম শুভ্র

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর স্থায়ী ক্যাম্পাসের মঞ্চে তখন অনুষ্ঠান চলছে। একেকজন শিল্পী একেক পরিবেশনা নিয়ে হাজির হচ্ছেন। একসময় গিটার কাঁধে নিয়ে মঞ্চে উঠতে দেখা গেল একজনকে। অগোছালো দাড়ি-গোঁফ আর মাথায় ঝাঁকড়া চুলের মিশেলে তাঁর চেহারায় বেশ একটা ‘রকস্টার’ ভাব! দুর্দান্ত গিটারের সঙ্গে একটু-আধটু গান গেয়ে মঞ্চের মানুষটি প্রমাণ করে ফেললেন তিনি সত্যিই রকস্টার! বিশ্ববিদ্যালয়ে তো বটেই, আরও বহুবার বহু অনুষ্ঠানে এভাবে মঞ্চ মাতিয়েছেন রায়হান ইসলাম। বন্ধুরা চেনেন শুভ্র নামে। কখনো ক্যানটিনে, কখনোবা ক্যাম্পাসের পাশের ফুটপাতে বসে গিটার হাতে টুংটাং করতে করতেই ইউল্যাবের পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন তিনি।
শুভ্রর গানের জগতে আসাটা বলতে গেলে একদম হুট করেই। ছোটবেলায় বাবার কিনে আনা ক্যাসেটে গান শুনতে শুনতে সংগীতের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। বড় হয়ে শিল্পী হতে হবে, এমন চিন্তা তখনো ছিল না। ২০০৭ সালের ঘটনা। মাত্র নবম শ্রেণিতে পড়ছেন। মায়ের চাকরির সুবাদে বগুড়ায় থাকতেন তখন। শুভ্র সেবার বাণিজ্য মেলায় গিয়ে দেখলেন, একটা ব্যান্ড পারফর্ম করছে। দেখে মনে হলো, কয়েকজন বন্ধু মিলে একটা ব্যান্ড তো করাই যায়। যেই ভাবা সেই কাজ। ছেলের আগ্রহ দেখে মা কিনে দিলেন একটা দেশি গিটার। ওটা দিয়েই হাতেখড়ি। বগুড়ার উপশহর বাজারে অগ্রপথিক নামে স্থানীয় একটা ব্যান্ড গানবাজনা করত। তাদের কাছে গিয়ে গিটার শেখা শুরু। এরপর মায়ের বদলির কারণে পরের বছরই চলে যেতে হয় চট্টগ্রামে। কিন্তু তাতে থামেনি গিটারের টুংটাং।
গিটার বাজানোর সঙ্গে গানও গাওয়া শুরু করলেন টুকটাক। সেখান থেকেই আজকের অবস্থানে আসা। নিজে ভালো গান গাইতে পারেন, তা অবশ্য মানতে নারাজ শুভ্র। ‘সেভাবে গান গাওয়া শুরু করিনি কখনো। আমার শুরু থেকেই গিটার শেখার ইচ্ছা ছিল। এরপর গাইতে গাইতে গায়েন।’ মুচকি হেসে জানালেন তিনি। নিজের একটা ইউটিউব চ্যানেল আছে। বিভিন্ন গান ও গানের গিটার সলোর কভার ভিডিও নিয়মিত আপলোড করেন সেখানে। আগ্রহী গিটারবাদকদের কাছে তাঁর চ্যানেলের ভিডিওগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এখন মোট সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা প্রায় হাজার ছুঁইছুঁই।
শুভ্র শুধু নিজ ইউটিউব চ্যানেলের জন্য কাজ করছেন, ব্যাপারটা এমন নয়। ছোটবেলার ইচ্ছাটা ধরে রেখেছেন আজ অবধি। এখন তাঁর নিজের একটা ব্যান্ড আছে। নাম সার্কেল। এ ছাড়া শিল্পী ও সংগীত পরিচালক অদিতের সঙ্গেও বিভিন্ন কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছেন তিনি। জানালেন অদিতের স্টুডিও ‘ফ্যাটম্যান ফিল্মস’-এ ‘কো-প্রডিউসার অব মিউজিক’ আর ‘সেশন গিটার প্লেয়ার’ হিসেবে দিন-রাত কাজ করছেন।
পরিশ্রমের ফল পাওয়া শুরু করেছেন এরই মধ্যে। বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনের মিউজিক করেছেন। এরই মধ্যে সেগুলো টিভিতে প্রচারিত হওয়া শুরু হয়েছে। শাহতাজ ও বাম্মির আলোচিত গান ‘উড়ে যাই’-এর মিউজিক ভিডিওতেও ঝাঁকড়া চুলের শুভ্রর দেখা পাবেন। অদিতের সঙ্গে গানটির মিউজিকের কাজ করেছেন তিনি। এই ঈদে নিজের একটা গান বেরোতে পারে বলে আশা করছেন।
নিজের এত ব্যস্ততার পাশাপাশি শুভ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বড় ক্লাব ইউল্যাব সংস্কৃতি সংসদের সভাপতি। ক্লাবের কথায় উচ্ছ্বসিত হয়ে জানালেন, বর্তমান সদস্যরা বেশির ভাগই দেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে সরাসরি কাজ করছেন। দল বেঁধেই তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন।
কোন স্বপ্ন শুভ্রকে জাগিয়ে রাখে? বলছিলেন, ভবিষ্যতে মানুষকে ভালো কাজের দিকে প্রভাবিত করবে, এমন একজন সংগীতশিল্পী হওয়াই তাঁর ইচ্ছা।