অ র্থ নী তি ২ য় প ত্র

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 
প্রিয় পরীক্ষার্থীরা, আজ অর্থনীতি ২য় পত্র থেকে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের ওপর আলোচনা করা হচ্ছে।

প্রশ্ন: অর্থ কাকে বলে?
উত্তর: সাধারণত বিনিময়ের মাধ্যমকেই অর্থ বলা হয়। অর্থ একটি বিনিময়ের মাধ্যম, যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, যা দ্বারা দ্রব্য ও সেবা ক্রয়-বিক্রয় এবং সব ধরনের লেনদেন সম্পাদন করা যায়। মোটকথা যা বিনিময়ের মাধ্যম, সঞ্চয়ের ভান্ডার, মূল্যের পরিমাপক হিসেবে কাজ করে, তাকেই অর্থ বলে। বিভিন্ন দেশে অর্থকে বিভিন্ন নামে অবহিত করা হয়। যেমন বাংলাদেশে টাকা, জাপানে ইয়েন, যুক্তরাষ্ট্রে ডলার ইত্যাদি।
অর্থনীতিবিদ কোলের ভাষায়, ‘অর্থ এমন একটি জিনিস, যা সবাই সাধারণভাবে দেনা-পাওনা মেটাতে এবং ঋণ পরিশোধ করতে ব্যবহার করে।’ অর্থনীতিবিদ ওয়াকারের মতে, ‘অর্থের কাজ দ্বারাই অর্থের পরিচয় পাওয়া যায়।’
সুতরাং যে বস্তু বিনিময়ের মাধ্যম ও দেনা-পাওনা মেটানোর উপায় হিসেবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং যা মূল্যের পরিমাপক ও সঞ্চয়ের বাহন হিসেবে কাজ করে, তাকেই অর্থ বলা হয়।
প্রশ্ন: জাতীয় আয় কাকে বলে?
উত্তর: কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক বছরে কোনো দেশে যে পরিমাণ চূড়ান্ত পর্যায়ের দ্রব্য ও সেবা উৎপন্ন হয়, তার আর্থিক মূল্যেও সমষ্টিকে জাতীয় আয় বলে। বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে জাতীয় আয়ের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।
অধ্যাপক পি এ স্যামুয়েলসন জাতীয় আয়কে একটি প্রবহমান ধারা হিসেবে অবহিত করেন। তাঁর মতে, ‘একটি দেশের উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্মের বার্ষিক সর্বমোট প্রবাহের আর্থিক পরিমাপ হলো জাতীয় আয়।’
এ সি পিগু জাতীয় আয়কে খাজনা, মজুরি, সুদ ও মুনাফার সমষ্টি হিসেহে অবহিত করেছেন।
অধ্যাপক হ্যানসনের ভাষায়, ‘জাতীয় আয় হচ্ছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে সংগৃহীত সব ব্যক্তিগত আয়ের সমষ্টি।’
সুতরাং, কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো দেশের জনগণের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ফলে মোট যে পরিমাণ বস্তুগত ও অবস্তুগত দ্রব্যসামগ্রী এবং সেবাকর্ম উৎপাদিত হয়, তার আর্থিক মূল্যকে জাতীয় আয় বলে।
প্রশ্ন: অর্থের গুরুত্ব বর্ণনা করো।
উত্তর: অর্থ যে কেবল বিনিময় প্রথার অসুবিধা দূর করেছে তা নয়, বরং সমাজের উৎপাদন, সঞ্চয়, ভোগ, বণ্টন—সব ক্ষেত্রেই অর্থ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ‘অর্থের ব্যবহার ছাড়া আধুনিক সভ্যতার কথা চিন্তাও করা যায় না।
অধ্যাপক মার্শালের মতে, ‘অর্থকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক জগৎ আবর্তিত হয়।’ আধুনিক অর্থনীতি, সমাজ, রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি এবং আর্থসামাজিক কাঠামোয় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে অর্থ। আধুনিক অর্থনীতিতে বিনিময়, মূল্য পরিমাপ, মূল্য স্থানান্তর প্রভৃতি ক্ষেত্রে অর্থের ভূমিকা অসীম। ক্রাউথার যথার্থই বলেছেন, ‘অর্থনীতিতে, সমাজজীবনে, বাণিজ্যসংক্রান্ত কার্যাবলির ক্ষেত্রে অর্থ একটি অনবদ্য আবিষ্কার, যাকে কেন্দ্র করে বাকি সবকিছুই প্রতিষ্ঠিত।’
সুতরাং, আধুনিক অর্থনীতিতে অর্থের গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রশ্ন: অর্থ সরবরাহের উপাদানগুলো কী কী?
উত্তর: অর্থের সরবরাহ ধারণাটি নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। অর্থের সরবরাহকে কেউ সংকীর্ণ পরিসরে বিবেচনা করেছেন আবার কেউ বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গিতে অর্থের জোগানের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। সহজ কথায় সরকার কর্তৃক ছাপাকৃত নোট ও কয়েন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক ছাপাকৃত নোটের সমষ্টি যা অনুমোদিত আকারে অর্থনীতিতে বিরাজমান, তাকেই অর্থের জোগান বলে। অর্থাৎ, অর্থের জোগানের মধ্যে প্রচলিত মুদ্রা ও চাহিদা আমানত অন্তর্ভুক্ত। এদিক থেকে অর্থের সরবরাহ বলতে নিচে বর্ণিত দুটি উপাদানের সমষ্টিকে বোঝায়:
MS = CU + DD………..(1)
এখানে, MS = অর্থের সরবরাহ।
CU = জনগণের হাতের মুদ্রা।
DD = চাহিদা আমানত।
ওপরের সূত্র অনুযায়ী অর্থের সরবরাহ বলতে জনগণের হাতের মুদ্রা, ব্যাংকে রক্ষিত চাহিদা আমানতের সমষ্টিকে বোঝায়। অধ্যাপক মিল্টন ফ্রিডম্যান ও তার অনুসারীরা অর্থ সরবরাহ বলতে জনগণের হাতের মুদ্রা ব্যাংকে রক্ষিত চাহিদা আমানত এবং মেয়াদি আমানতের সমষ্টিকে বোঝান।
MS = CU + DD + TD………..(2)
এখানে, TD = মেয়াদি আমানতের পরিমাণ।
# পরবর্তী অংশ ছাপা হবে আগামীকাল

 প্রভাষক. ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ, ফেনী