ছবিতে ছবিতে ২০ বছর

বুয়েট ফটোগ্রাফি সোসাইটির সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত
বুয়েট ফটোগ্রাফি সোসাইটির সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

‘সন্ধ্যায় সবাইকে ফোন করে বললাম, তাড়াতাড়ি আর্কিটেকচারের মাঠে চলে আয়। আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি। গিয়ে দেখি সবাই শাবল, কোদাল নিয়ে তৈরি। তারপর কাজে নেমে পড়লাম।’ কথা হচ্ছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটোগ্রাফিক সোসাইটির (বুয়েট পিএস) প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম তাহমিদের সঙ্গে। কদিন আগে সংগঠনটি ২০ বছরে পা রাখল। এ উপলক্ষে বুয়েটে তারা আয়োজন করেছিল ‘বেয়ন্ড’ শিরোনামে উন্মুক্ত চিত্র প্রদর্শনী। প্রদর্শনীটি শুধু যে সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল তা নয়, আয়োজনটাও করা হয়েছিল উন্মুক্ত স্থানে, স্থাপত্য বিভাগের পাশের মাঠে। সে গল্পই শোনাচ্ছিলেন ইব্রাহিম।

বুয়েট পিএসের সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদের কাছে জানতে চাইলাম, খোলা মাঠে এই আয়োজন করার পেছনের ভাবনা কী ছিল? বললেন, ‘আমরা একটা বদ্ধ ঘরে আয়োজন করতে চাইনি। আমাদের চোখের সামনে যা ভাসে, সেটাই ক্যামেরায় ধারণ করে মানুষকে দেখাতে চেয়েছি।’ প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে যাঁরা দেশের স্বনামধন্য এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পা রেখেছিলেন, তাঁদের মাথায় হঠাৎ আলোকচিত্রের ভূত চাপল কেন? হাসান মাহমুদ মনে করিয়ে দিলেন দেশ-বিদেশে আয়োজিত বিভিন্ন আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার কথা। সঙ্গে যোগ করলেন, ‘আমি যখন প্রথম বুয়েটে আসি, তখন ফটোগ্রাফি সম্পর্কে কিচ্ছু জানতাম না। ক্যামেরাও ছিল না। এখানে এসে সিনিয়রদের দেখে আগ্রহ জাগল। এখন ফটোগ্রাফি আমার “প্যাশন” হয়ে গেছে।’ বুয়েট পিএসের সহসভাপতি বদরুল হাসানের ভাষ্যও তা-ই, ‘নতুনদের কীভাবে আমাদের সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায়, এ ব্যাপারেই আমরা সবচেয়ে বেশি জোর দিই। ফটোগ্রাফির বিষয়ে যে যত বেশি অজ্ঞ, বুয়েট পিএসের দরজা তাঁর জন্য তত বড় করে খোলা!’

নতুনদের জন্য পাকা আলোকচিত্রী হয়ে ওঠার সুযোগ আছে এখানে। সেটাও ব্যাখ্যা করলেন তিনি, ‘নতুনদের নিয়ে প্রথমেই আমরা “লুপ” নামের দুই সপ্তাহের একটি কর্মশালার আয়োজন করি। সেখানে থাকে “ডিস্কভারিং স্ট্রিটস” নামের একটি ফটোওয়াকের আয়োজন। রাস্তায় হেঁটে হেঁটে আমরা ছবি তুলি নিজেদের ইচ্ছামতো।’ ছবি তোলার পাশাপাশি আড্ডাবাজিও জমে এই কর্মশালায়। নতুনদের সঙ্গে পুরোনোদের সখ্য গড়ে ওঠে দ্রুত। তাই বলে আলোকচিত্রের অ-আ-ক-খ শিখে ফেলা যে খুব সহজ, তা নয়। বুয়েট পিএসের সদস্যদের সঙ্গে যখন গল্প করছি, পাশেই ছিলেন নাইমুল। ক্যাম্পাসে মাত্র এক বছর পার করেছেন তিনি। বললেন, ‘প্রথম প্রথম একটা ছবি তুলেই ভাবতাম, অনেক ভালো ছবি তুলে ফেলেছি। কিন্তু সেটা ভাইদের দেখানোর পর সে কী ঝাড়ি! তবে ঝাড়িগুলো কাজে দিয়েছে। এক বছর পর নিজের ছবি তোলার হাত আগের চাইতে একটু হলেও পরিণত মনে হয়।’

প্রকৌশলের মতো কঠিন বিষয়ে পড়তে এসে আলোকচিত্রের মায়ায় জড়িয়ে গেলেন, ভবিষ্যতে কি আলোকচিত্রী হওয়ার ইচ্ছা আছে? হাসান মাহমুদ বলেন, ‘ফটোগ্রাফি আমার নেশা, পেশাগতভাবে হয়তো প্রকৌশলীই থাকব। তবে সময়-সুযোগমতো ফটোগ্রাফিতেও একটা ডিগ্রি নেওয়ার ইচ্ছা আছে। একসময় হয়তো পেশা আর নেশা দুটোই এক হয়ে যাবে।’ প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম অবশ্য এ নিয়ে একটু মুশকিলেই আছেন। মাথা চুলকে বললেন, ‘কম্পিউটার প্রকৌশলে পড়ছি। ফটোগ্রাফি আর কোডিং দুটোই আমার নেশা। কী করব বুঝতে পারছি না।’

২০ বছর ধরে গড়ে উঠেছে যে সংগঠন, তাদের যাত্রাটা সহজ ছিল না। অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। গল্প করতে করতে ২০ বছর আগে যাঁরা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই সংগঠন, তাঁদের প্রসঙ্গও এল। প্রতিষ্ঠাতাদের একজন শাহরিয়ার ইকবাল এখন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক। মুঠোফোনের মাধ্যমে তিনি আমাদের আড্ডায় অংশ নিলেন। জানতে চাইলাম, ‘২০ বছর আগে যখন ক্লাবটা খুলেছিলেন তখন মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?’ শাহরিয়ার ইকবাল বলেন, ‘১৯৯৭ সালের দিকে ছবি তোলার ব্যাপারটার তেমন চল ছিল না। সবার হাতে হাতে ক্যামেরাও ছিল না। ফটোগ্রাফির সঙ্গে আমরা স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাই জড়িত ছিলাম। ভাবলাম, ছবি তোলার আগ্রহ সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়া উচিত। সেই ভাবনা থেকেই ক্লাবটা খুলেছিলাম। এখন তো ২০ বছর হয়ে গেল, অনেকেই দেখছি ভালো কাজ করছে। এসব দেখলে নিজেকে এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ভাবতে সত্যিই খুব ভালো লাগে।’