এশিয়ায় সেরা হওয়ার লক্ষ্য

ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের পাঠাগার
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের পাঠাগার

ছোটবেলায় পাঠ্যবইয়ের ভেতর লুকিয়ে হ্যারি পটার পড়তেন বলে বহুবার বকুনি খেয়েছেন আফরোজা আকতার আর সুমাইয়া রাহমান। দুজনই এখন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী। এখন ক্লাসেই তাঁদের হ্যারি পটার পড়তে হয়। পড়তে হয় ইংরেজি সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য আরও নানা গল্প, উপন্যাস, কবিতা। আফরোজা, সুমাইয়া মাঝেমধ্যে অবাক হয়ে ভাবেন, ‘এমন একটা ক্লাসের স্বপ্নই তো দেখেছিলাম!’ রাজধানীর ফার্মগেটে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অনেক শিক্ষার্থীই খুঁজে পেয়েছেন তাঁদের স্বপ্নপূরণের পথ। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে এক দুপুরে হাজির হই আমরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লম্বা করিডর। গুরুগম্ভীর পরিবেশ। হুট করেই কানে এল গিটারের টুংটাং। সামনে এগিয়ে দেখা গেল, শিক্ষকের উপস্থিতিতেই ক্লাসে বসে গান গাইছেন একদল শিক্ষার্থী। ক্লাস শেষে কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশলের ছাত্রী রাবেয়া বশরী বলেন, ‘আজ ক্লাসের শেষ দিন ছিল। তাই গান গেয়ে টিচারকে বিদায় জানালাম আমরা। পুরো সেমিস্টার খুব ভালো গেছে। সব কোর্সের শিক্ষকদের সঙ্গেই আমাদের বোঝাপড়াটা ভালো।’ রাবেয়াকে সমর্থন জানিয়ে আফরিন লিঞ্জা বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়া তো আসলে খুব কঠিন। তারপরও শিক্ষকেরা যতটা সম্ভব আমাদের মজা করে পড়ানোর চেষ্টা করেন।’ সায় জানালেন এমিলুজ্জামান আর হাবিব প্রান্ত। আলাপ শেষে তাঁরা ছুটলেন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি ক্লাবের কাজে।
ইউএপিতে পা রাখলেই চোখে পড়ে মাথার ওপর বিশাল আকৃতির কাচের ছাদ। কাচ ভেদ করে সূর্যের আলো এসে পড়ে ক্যাম্পাসের করিডর আর ক্লাসরুমগুলোতে। একই ভবনে বিভিন্ন বিষয়ের পাঠদান চলে। ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থীর বন্ধু হয়তো স্থাপত্যে পড়ুয়া কেউ, আবার পুরকৌশলের শিক্ষার্থী হয়তো তাঁর ভাবনা ভাগাভাগি করে নেন ব্যবসায় প্রশাসনের বন্ধুর সঙ্গে। বহুমাত্রিক পরিবেশ আছে বলেই প্রকৌশলের ছাত্ররা যোগ দিচ্ছেন ড্রামা ক্লাবে, লিটারারি ক্লাবে যোগ দিয়ে বিবিএর ছাত্ররাও পড়ছেন নানা স্বাদের বই।

সিনিয়র, জুনিয়র কিংবা বিভাগে কিছু যায় আসে না। এখানে এক ছাদের নিচে শিক্ষার্থীরা সবাই সবার বন্ধু। ছবি: খালেদ সরকার
সিনিয়র, জুনিয়র কিংবা বিভাগে কিছু যায় আসে না। এখানে এক ছাদের নিচে শিক্ষার্থীরা সবাই সবার বন্ধু। ছবি: খালেদ সরকার

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য এম আর কবির বলেন, ‘ক্লাসরুমের বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য জোর দিই আমরা। সত্যিকার অর্থে “শিক্ষিত” করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। সে জন্য শুধু বইমুখী না করে আমরা সৃজনশীল কাজে সম্পৃক্ত করতে চেষ্টা করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি বিভাগের সামনেই দেখা যায় দেয়ালচিত্র, নানা বর্ণের দেয়ালিকার ছড়াছড়ি। ৭টি স্কুলের অধীনে ৯টি বিভাগে প্রায় ২৫০ জন শিক্ষক পড়াচ্ছেন ছেলেমেয়েদের। পড়ছেন প্রায় সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষার্থী।
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ফার্মাসি বিভাগের একটা আলাদা সুনাম আছে। এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন রিসার্চ পেপার আর গবেষণার খবর নিয়মিতই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে জানা গেল শুধু ফার্মাসিই নয়, পুরকৌশল আর স্থাপত্য বিভাগও এশিয়ার বড় বড় বিশ্ববিদ্যালেয়র সমকক্ষ হয়ে উঠতে চেষ্টা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের পাঠ্যক্রম, শিক্ষকদের শিক্ষা দানের দক্ষতা এবং শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ এমনভাবে তৈরি করেছি যেন আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের মানুষ জানতে পারে, ঢাকায় আন্তর্জাতিক মানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলেছি আমরা।’

স্থাপত্য বিভাগের স্টুডিওতে পেরিয়ে যায় সকাল থেকে সন্ধ্যা
স্থাপত্য বিভাগের স্টুডিওতে পেরিয়ে যায় সকাল থেকে সন্ধ্যা

স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থী সামিয়া শারমিন একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে এসে এখানে ভর্তি হয়েছেন। সামিয়ার ভাষ্য, ‘প্রথম দিকে একটু আক্ষেপ ছিল। এখন আমার ক্লাসরুম হচ্ছে বিশাল এক স্টুডিও! স্টুডিওতে ক্লাস করি, দিনের পুরোটাই কাটাকুটি আর নিজের প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করি। ভালোই লাগে।’ সামিয়ার স্টুডিওতে গিয়ে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে দেখা হলো। খুব সকালে স্টুডিওতে পা রাখেন তাঁরা, বাড়ি ফেরেন রাত ৮টায়। ওদিকে পুরকৌশল বিভাগের ছাত্ররা ব্যস্ত নিজেদের প্রকল্প নিয়ে। ঢাকার পানি কীভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে বিশুদ্ধ করা যায়, সেটা নিয়েই কাজ করছেন তাঁরা।
ইউএপির শিক্ষার্থীদের দাবি, তাঁরা শুধু ‘থিওরি’ পড়ার মধ্যে ডুবে থাকেন না। প্রতিদিনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে হাতে-কলমে শেখার চেষ্টা করেন। আর পড়তে পড়তে যখন একঘেয়েমি পেয়ে বসে, তখন রাশেদ কবীর, কৌশিক মিত্র, সামিয়া আর বন্ধুরা মিলে দল বেঁধে বেড়াতে যান, মঞ্চনাটক দেখতে যান। তাঁরা জানেন, জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টা চলে যাচ্ছে। সৃজনশীল কাজ বা নতুন কিছু শেখার মধ্য দিয়ে প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করতে চান এই তরুণেরা।

এশিয়া অঞ্চলে প্রভাব রাখব আমরা
জামিলুর রেজা চৌধুরী
উপাচার্য
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসেফিকের বয়স ২০ পেরিয়েছে। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে ​আছি প্রায় পাঁচ ​বছর হলো। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল মনন বিকাশের সব সুযোগই রাখার চেষ্টা করছি আমরা। শুধু পড়াশোনাই জীবনে সাফল্য আনে না। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা যেন সহ শিক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করে এবং কমপক্ষে একটি বা দুটি ক্লাবের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকে। শিক্ষার্থীদের মনন গবেষণামুখী করতে শিক্ষকেরা পরিশ্রম করছেন। আধুনিক প্রযুক্তি ও গবেষণাগারের মাধ্যমে আমরা সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছি। ​তরুণ মেধাবী শিক্ষক নিয়োগে আমরা সব সময় সচেষ্ট। আমাদেরই ছাত্রছাত্রীরা উচ্চশিক্ষা নিয়ে আমাদের এখানে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিচ্ছে। লক্ষ্য একটাই-আগামী কয়েক বছরের মধ্যে গবেষণা ও পড়াশোনার মানের দিক দিয়ে এশিয়ার শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি হওয়া।