যখন তাঁরা সেরা

শাহরিয়ার, ইমতিয়াজ ও নাফিস: চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী। ছবি: দোলন
শাহরিয়ার, ইমতিয়াজ ও নাফিস: চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী। ছবি: দোলন

কম্পিউটার প্রোগ্রামিং নিয়ে আইসিপিসি আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১০টি দলকে পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন হয় সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ‘সাস্ট আত্মপ্রত্যয়ী’। এ বছরের জুনে এই দলটি আইসিপিসি-তে অংশ নিতে যাবে রাশিয়ার।
মনের ভাব প্রকাশ করতে ভাষার সাহায্য নিই আমরা। মানুষের যেমন ভাষা আছে, তেমনি আছে কম্পিউটারেরও। এই ভাষা বা ল্যাঙ্গুয়েজকে বলা হয় ‘প্রোগ্রামিং’। আমাদের মুখের ভাষার মতোই প্রোগ্রামিংয়েরও আছে প্রকারভেদ। একটু বুদ্ধি খাটিয়ে কতগুলো শর্ত জুড়ে দিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সমীকরণ সাজিয়ে একটি জাল তৈরি করে দিলেই হয়, বাকি কাজটা কম্পিউটারই করে ফেলে। যার ফলে বাঁচে সময় ও শ্রম, সমাধানটাও হয় প্রায় নির্ভুল।
কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের ওপর পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাকর প্রতিযোগিতাটির নাম ‘ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট (আইসিপিসি)’।
এই প্রতিযোগিতার এবারের বাংলাদেশ তথা ঢাকা অঞ্চলের প্রতিযোগিতাটি আয়োজিত হয় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুয়েট, চুয়েট, শাবিপ্রবিসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোট ১১০টি দল অংশ নেয়। চূড়ান্ত পর্যায়ে পাঁচ ঘণ্টার প্রতিযোগিতায় মোট ১১টি সমস্যার মধ্যে সাতটির সমাধান করে বিজয়ী হয় শাবিপ্রবির দল ‘সাস্ট আত্মপ্রত্যয়ী’। রানার আপ হয় দল বুয়েট ম্যাক্স+৭।
বিজয়ী ‘সাস্ট আত্মপ্রত্যয়ী’ দলের সদস্যরা হলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দ শাহরিয়ার মঞ্জুর, ইমতিয়াজ শাকিল ছিদ্দিকী এবং দলনেতা নাফিস আহমেদ। এই দলের প্রশিক্ষক ছিলেন একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেবাকর সামন্ত।
দলনেতা নাফিস বলেন, ‘চার বছর যেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য পরিশ্রম করেছি, তা সার্থক হয়েছে। এখন আমরা ওয়ার্ল্ড ফাইনালসে ভালো করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ দলের অপর দুই সদস্য শাহরিয়ার ও ইমতিয়াজও রাশিয়াতে গিয়ে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন। রাশিয়ার উরাল ফেডারেশন ইউনিভার্সিটিতে এ বছর ২২ থেকে ২৬ জুন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতায় রাশিয়া, আমেরিকা, চীনসহ বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশের ১১০টির মতো দল অংশ নেবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছে চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ দল।
দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে রাশিয়ায় যাওয়া নিয়ে চ্যাম্পিয়ন দলটি বেশ আশাবাদী। দলের সদস্য শাহরিয়ার জানালেন, ‘আসলে একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করাটা সব সময়েই গর্বের বিষয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাতে জয়লাভ করতে পারি, সে জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছি। দেশের সুনাম বয়ে আনতে পারলে ভালো লাগবে।’
এবার দলের সদস্যদের ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা শোনা যাক। নাফিস জানালেন, বিশ্বসেরা আইটি কোম্পানিগুলোর একটিতে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে চান তিনি। সে অভিজ্ঞতা দেশের আইটি খাতে কাজে লাগানোর ইচ্ছা আছে তাঁর। আর শাহরিয়ার ও ইমতিয়াজের ইচ্ছা, প্রথমে দেশের বাইরে গিয়ে পিএইচডি করার। এরপর অভিজ্ঞতা অর্জন করে দেশে এসে দেশের জন্য কিছু করার।