চট্টগ্রামের নাসিরাবাদের ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি: সবুজ ভুবনে শিক্ষার আলো

ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস দেখতে গেলে লাইব্রেরিতে একটা ঢুঁ না মারলে ভুল হবে। ছবি: সৌরভ দাশ
ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস দেখতে গেলে লাইব্রেরিতে একটা ঢুঁ না মারলে ভুল হবে। ছবি: সৌরভ দাশ

পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে গেছে পিচঢালা সড়ক। এ সড়ক দিয়ে যেতে যেতে চোখে পড়ে খোলা আকাশের নিচে সবুজ মাঠ আর গাছপালা। সঙ্গের দালানগুলোও আধুনিক স্থাপত্যের নিদর্শন। চট্টগ্রামের নাসিরাবাদের মোজাফ্ফরনগর এলাকায় প্রায় দুই একর জায়গার ওপর গড়ে উঠেছে ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে আনুষ্ঠানিকভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালে। সে সময় শিক্ষার্থী ছিল মাত্র ৫ জন। এখন সেটা দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই হাজারে। পূর্ণকালীন শিক্ষক আছেন ৮৮ জন। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছেন ইস্ট ডেল্টার প্রায় ১ হাজার ৩০০ স্নাতক। যাঁদের নিয়ে শিগগিরই সমাবর্তন আয়োজনের পরিকল্পনা চলছে বলে জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার ফারহানা আহমদ। ২০১৭ সাল থেকে সবুজ পাহাড়ের পাদদেশে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাত্রা শুরু করে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে তিনটি অনুষদে সাতটি বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। স্কুল অব বিজনেস অনুষদের অধীনে রয়েছে বিবিএ ও এমবিএ বিভাগ। স্কুল অব লিবারেল আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সের আওতায় শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ও অর্থনীতি বিভাগে পড়ছেন। স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধীনে কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল এবং ইলেকট্রনিক ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগে ভর্তির সুযোগ রয়েছে। প্রতিবছর তিন সেমিস্টারে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়।

প্রতিটি ক্লাসের আসন সংখ্যা ৩৫
প্রতিটি ক্লাসের আসন সংখ্যা ৩৫

গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় দেখা মেলে একদল শিক্ষার্থীর। তাঁদের সঙ্গে নিয়েই শুরু হয় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখার আয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় ভবনে ঢুকতেই হাতের ডানে চোখে পড়ে ক্যাফেটেরিয়া। সেখানে দলবেঁধে আড্ডা দিচ্ছিলেন শিক্ষার্থীরা, কেউ বা খাচ্ছিলেন নীরবে। ক্যাফেটেরিয়ায় কথা হয় বিবিএ পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নাহিয়ান ইসলাম ও সামরিন দোভাষের সঙ্গে। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ দেখিয়ে বললেন, খোলা আকাশের নিচে বসে এখানেই তাঁরা আড্ডা দেন। কখনো কখনো আড্ডা জমে ক্যাফেটেরিয়ায়।

‘আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে আমাদের এখানে প্রতিটি ক্লাসরুমে সর্বোচ্চ ৩৫ জন শিক্ষার্থীর আসনব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’ বলছিলেন অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী সায়মা আক্তার। একটি ক্লাসরুমে কথা হয় তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের ছাত্রী মাইশা আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রকৌশল বিভাগে পড়াশোনার অনেক চাপ। তবে শিক্ষকদের আন্তরিকতায় আমরা সেই চাপ অনায়াসেই সামলে নিই। উন্নত ল্যাব থাকায় আমাদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নেওয়াও সহজ হয়ে যায়।’

ঘুরতে ঘুরতে কথা হলো তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সায়ন্তা আনোয়ারের সঙ্গে। তিনি জানালেন, পড়তে পড়তে একঘেয়েমি চলে এলে মাঝেমধ্যে তাঁরা চলে যান শিক্ষার্থীদের কমনরুমে। সেখানে টেবিল টেনিসসহ নানা ধরনের ইনডোর গেমসের ব্যবস্থা আছে। কিছুক্ষণ খেলাধুলা করে মনটা চাঙা হলে আবার পড়ায় মন দেন সায়ন্তারা।

শিক্ষার্থীদের প্রিয় মুক্তমঞ্চ
শিক্ষার্থীদের প্রিয় মুক্তমঞ্চ

ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটিতে এসে বইয়ের দুনিয়ায় ঘুরে না গেলে নাকি ভারি অন্যায় হবে, এমনটাই বললেন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী অদিতি দাশ গুপ্তা। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতল লাইব্রেরিতে গিয়ে বোঝা গেল এমন মন্তব্যের কারণ। সারি সারি আলমারিতে থরে থরে সাজানো রয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার বই। প্রতিদিন সকাল সাড়ে নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই লাইব্রেরি। সহকারী লাইব্রেরিয়ান তাহমিনা আফ্রাদ বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি আমাদের এখানে বিভিন্ন দেশের ইউনিভার্সিটির জার্নাল আছে। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্লভ কিছু বই নিয়ে আছে অক্সফোর্ড কর্নার।’ পড়ালেখার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ধরনের সহ-শিক্ষা কার্যক্রমের কথা জানালেন বিবিএর শিক্ষার্থী আলী আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক ক্লাব, বিতর্ক ক্লাবসহ মোট আট ধরনের ক্লাব রয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীই কোনো না কোনো ক্লাবে যুক্ত আছে।’

বিবিএর ছাত্র আবু শাহেদ দিলেন নতুন তথ্য। তিনি মনে করেন, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটিতে পড়ার ফাঁকে কাজ করার বিষয়টি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে কথা হয় ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মুহাম্মদ সিকান্দার খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় উদ্বুদ্ধ করতে আমাদের রয়েছে চার ধরনের মেধাবৃত্তি। “ক্যাম্পাস জব” শিরোনামে আমরা নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। যার আওতায় ভালো ফল করা শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু শাখাতে সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। এতে তারা কাজের অভিজ্ঞতা যেমন পাচ্ছে, তেমনি পাচ্ছে কিছু সম্মানীও।’ ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার প্রত্যয় শোনা গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান সাঈদ আল নোমানের কণ্ঠেও। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেক শিক্ষার্থীই যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। আমরা তাদের সম্ভাবনার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় কাজ করছি। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে শিক্ষা বিনিময় চুক্তি, ক্যাম্পাস জব, সহ-শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাসহ নানা ধরনের কর্মসূচি আমরা হাতে নিচ্ছি। যেন ছেলেমেয়েরা তাদের সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে মেধা বিকাশ করতে পারে। আমরা বিশ্বাস করি, শিক্ষার্থীরা দক্ষ হয়ে উঠতে পারলেই তাদের হাত ধরে আসবে সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিবর্তন।’