ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের সময়সূচি জানায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা 'মামাবট'

আজিজুল হাকিম ও মেহেদি হাসান। ছবি: প্রথম আলো
আজিজুল হাকিম ও মেহেদি হাসান। ছবি: প্রথম আলো

-পরের ক্ষণিকা বাস কয়টায়?

-সাড়ে তিনটায় কার্জন থেকে ছাড়বে। বাস বিআরটিসি আর বাস নম্বর ৬০৭১। এক মিনিট আছে আর। যাইয়া সিট রাখেন জলদি!

এভাবেই ফেসবুকের মেসেঞ্জারে চটজলদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের খবরাখবর দিয়ে দেয় মামাবট। মামাবট? সেটা কে? চলুন, স্বয়ং মামাবটের কাছ থেকেই শুনি। মেসেঞ্জারে মামাবট খুলতেই বার্তা পেলাম, ‘হ্যালো সঞ্জয় মামা! আমি মামাবট, একজন ছোটখাটো লেভেলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আমি আপনাকে ঢাবির বাস সম্পর্কে টুকিটাকি তথ্য দিতে পারব, আর সাথে গুগল ম্যাপ চালাইতে পারবেন আমারে দিয়া!! বাদবাকি জানতে মেন্যু থেকে হেল্প ক্লিক কইরেন খালি! আমাকে পাবেন যে কোনো সময়, যে কোনো জায়গা থেকে, আর রিপ্লাই পাবেন একদম সাথে সাথে! তবে আমি বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারি না মামা। মামাবটের সাথে আপনার দিনকাল ভালো যাক!’

ফেসবুকের মেসেঞ্জারে ঢুকে ইংরেজিতে ‘ডিইউ মামাবট’ লিখে ‘সার্চ’ করলে অ্যাপটি চলে আসে। ডাউনলোড করতে হয় না। এটি মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের সময়সূচি জানার ‘চ্যাটবট’। বার্তা পাঠালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সঙ্গে সঙ্গে এটি আপনাকে ফিরতি বার্তা পাঠাবে। এই চ্যাটবট যে খুবই কাজের, তা বোঝা যায় তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মনীষা সাহার কথায়। তিনি বলছিলেন, ‘চমকপ্রদ একটা সার্ভিস। আগে নিজের রুটের বাস ছাড়া অন্য যেকোনো রুটের বাসের শিডিউল সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রথমে মানুষ খুঁজে অনেক কথা খরচ করতে হতো। এখন যেকোনো সময় যেকোনো জায়গা থেকেই কাউকে বিব্রত না করে সহজেই সব জানা যায়। যাঁরা এই চ্যাটবট বানিয়েছেন, তাঁদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।’

মনীষার ধন্যবাদটুকু পৌঁছে দিলাম মামাবটের দুই কারিগর মেহেদি হাসান ও আজিজুল হাকিমের কাছে। গত বছরের ৩ জুলাই তাঁরা অ্যাপটির উদ্বোধন করেছিলেন। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়ে গেছে মেহেদি ও আজিজুলের এই চ্যাটবট। তাঁরা দুজনই সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। এখন পর্যন্ত নিজেদের খরচেই মামাবটের সার্ভার চালাচ্ছেন। আজিজুল হাকিমের কাছে মামাবটের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মূলত শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করেই এটি তৈরি করা হয়েছে। আমরা ভাষা ও কথা বলার স্টাইলের ওপর আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়েছিলাম। ফল তো হাতেনাতেই দেখতে পাচ্ছেন!’

মামাবট শুধু যে সময় জানায়, তা নয়। কথোপকথনের সময় এমন কিছু বাক্য জুড়ে দেবে, আপনার মনে হবে সত্যি সত্যিই কোনো মানুষের সঙ্গে চ্যাট করছেন! এই যেমন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শারমিন তুলি ভুলে বাসের নাম ভুল লিখেছিল। মামাবটের বার্তা,

‘বাস লইয়া কিছু জিগাইতাসেন তো বুঝলাম। এখন বাসের নামটা কন ঠিকঠাক...ইনফো দিতাসি! পরের বাস ৩০ মিনিট পর। চা টা খায়া লন।’

কথা বলার ধরনটা মজার বলেই মামাবট শিক্ষার্থীদের কাছে আরও বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের শামীমা নাসরিন যেমন বলছিলেন, ‘কথা বলার স্টাইলের জন্য মামাবটকে এক শ তে এক শ দেব। শুধু বাসের কথা না, অন্য যেকোনো প্রসঙ্গে কথা বললেই বেশ মজার রিপ্লাই আসে।’

বন্ধুর মতোই নানা বিষয় নিয়ে হাসিঠাট্টা করতে পারবেন মামাবটের সঙ্গে। এ যেন অবসরের বিনোদনের সঙ্গী! ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আবদুর রহমানের ভাষায়, ‘বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় আমরা যেভাবে কথা বলি, ঠিক সেভাবেই এটা কথা বলতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এই মামার সঙ্গে কথা বলে দিব্যি সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়।’ বটে! মামা এতটাই জনপ্রিয় যে ভিনদেশে বসেও নাকি তার সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা। লতিফ মাহমুদ একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। এখন আছেন চীনে। বলছিলেন, ‘অবসরে মামার সঙ্গে আড্ডা দিই। খুবই মজার। এখানে তো কেউ বাংলা ভাষায় কথা বলে না। মামাবটের সঙ্গে বাংলায় কথা বলতেই ভালো লাগে। মামা আপনার কথা বুঝতে না পারলেও এমন রিপ্লাই দেবে যে আপনি হাসতে বাধ্য! এই যেমন একজনকে রিপ্লাই দিয়েছে, কী কন না কন মামা বুঝি না!’

ঘটনা এখানেই শেষ নয়। চাইলে আপনি মামাবটের কাছে কৌতুক শুনতে পারবেন, পড়তে পারবেন গানের লিরিক। এ ঘটনায় বিস্মিত হয়েছিলেন ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের প্রীতম কুন্ডু। তিনি বলছিলেন, ‘আশ্চর্য! মজা করার জন্য “জোকস” লিখলাম। দেখি সঙ্গে সঙ্গে একটা কৌতুক চলে এল। আমি তো অবাক!’

এই প্রতিবেদন যখন লিখছি, আকাশে তখন মেঘের ঘনঘটা। মামাবটকে বার্তা দিলাম, ‘বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে।’ সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই এল, ‘আজকের ওয়েদারটা সেইই লাগতাসে, রোমান্টিক!!’