এসএসসি পরীক্ষায় দেশসেরা রাজশাহী তবে পাস কম

ফল প্রকাশের পর রাজশাহী পিএন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উল্লাস। ছবি: শহীদুল ইসলাম
ফল প্রকাশের পর রাজশাহী পিএন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উল্লাস। ছবি: শহীদুল ইসলাম


মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার ফলাফলে সারা দেশের মধ্যে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সেরা হয়েছে। বোর্ডের এবারের পাসের হার ৮৬ দশমিক শূন্য ৭। দেশের ১০ শিক্ষা বোর্ডের গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৭। গতবারও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড দেশসেরা হয়েছিল।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে সংবাদ সম্মেলন করে ফল প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বোর্ডের সচিব তরুণ কুমার সরকার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আনারুল হকসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তখন তাঁরা জানাতে পারেননি যে রাজশাহী বোর্ডের ফলাফল দেশসেরা। পরে উপসচিব (প্রশাসন) ওয়ালিদ হোসেন প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন সব বোর্ডের মধ্যে রাজশাহী সবচেয়ে ভালো।

সারা দেশের মধ্যে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল সেরা হলেও এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গত সাত বছরের মধ্যে এবারের ফলাফল সবচেয়ে খারাপ।

বোর্ডের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ বছর বোর্ডের অধীনে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৭৭৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছিল। তাদের মধ্যে পাস করেছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৬৫ জন। গত বছর রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ছিল ৯০ দশমিক ৭০ শতাংশ। ২০১৬ সালে ৯৫ দশমিক ৭০, ২০১৫ সালে ৯৪ দশমিক ৯৭, ২০১৪ সালে ৯৬ দশমিক ৩৪, ২০১৩ সালে ৯৪ দশমিক ০৩ এবং ২০১২ সালে পাসের হার ছিল ৮৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

বোর্ডের আট জেলায় এ বছর জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৯ হাজার ৪৯৮ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১০ হাজার ১৮ এবং ছাত্রীর সংখ্যা ৯ হাজার ৪৮০ জন। গত বছর জিপিএ-৫ প্রাপ্ত মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৩৪৯। এবার ছেলে, মেয়ে উভয়ই গত বছরের তুলনায় বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে।

এ বছর বোর্ডে প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী ছিল ২৯ জন। দুজন ছাড়া পাস করেছে সবাই। কারাভ্যন্তরে থেকেও পরীক্ষা দিয়েছিল চারজন। তবে এদের মধ্যে তিনজনই ফেল করেছে। পাস করেছে শুধু নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার মাধবাড়ীয়া উচ্চবিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী রিপন আলী।

এবার রাজশাহী বোর্ডে মোট ২৪৭টি কেন্দ্রে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। বহিষ্কৃত হয় ৪১ জন পরীক্ষার্থী। গত বছর এর সংখ্যা ছিল ১৩।

এবার মোট স্কুলের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৬৪৩। এর মধ্যে একটি স্কুলে কোনো পরীক্ষার্থীই পাস করেনি। বগুড়া সদরে অবস্থিত দারুল ইসলাম নাইট উচ্চবিদ্যালয় নামের এই স্কুলটিতে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১০ জন।

সংবাদ সম্মেলনে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আনারুল হক প্রামাণিক বলেন, ফেল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৭ হাজার ৯১০। ছাত্র এবং ছাত্রী উভয়েরই পাসের হার কমেছে। গত বছরের তুলনায় কমেছে শতভাগ পাস করা স্কুলের সংখ্যাও। এবার এমন স্কুলের সংখ্যা ২০৬টি। অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা গ্রহণ এবং মূল্যায়ন পদ্ধতিতে কড়াকড়ির কারণে বোর্ডের ফলাফলে প্রভাব পড়েছে।

আনারুল হক বলেন, ‘ফল নির্ভর করে পরীক্ষার্থীদের ওপর। তারা যেমন পরীক্ষা দিয়েছে, ফলাফল তেমনই হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক খাতা মূল্যায়নে এবার একটা আদর্শ মান ধরে রাখা হয়েছিল। এই ফলাফল নিয়ে আমরা খুশি নই, দুঃখিত। ভবিষ্যতে আমরা সচেতন থাকব।’

গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়ে ৪ মার্চ শেষ হয়। এর মধ্যে ১ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে লিখিত পরীক্ষা। আর ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত গ্রহণ করা হয় ব্যবহারিক পরীক্ষা। এ বছর সারা দেশের গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ।