প্রাণোচ্ছল এক ক্যাম্পাস

বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার একটা সুন্দর পরিবেশ আছে এই ক্যাম্পাসে। ছবি: খালেদ সরকার
বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার একটা সুন্দর পরিবেশ আছে এই ক্যাম্পাসে। ছবি: খালেদ সরকার

কয়েক সপ্তাহ পর একটি ‘আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক ধারণা’ বিষয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হবে। সেই প্রতিযোগিতায় কোন ‘আইডিয়া’ নিয়ে লড়াই করা যায়, কয়েক দিন ধরে সেটাই ভাবছেন এ এইচ এম মশিউর রহমান, মাহবুবুর রহমান এবং মো. নাসির উদ্দিন। কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের এই তিন শিক্ষার্থীর ব্যস্ত সময় কাটছে এখন। একদিকে ক্লাস আর অন্যদিকে সামাজিক ব্যবসার একটি চমকপ্রদ ধারণা উপস্থাপন—দুটোর সমন্বয় করতে গিয়ে মোটামুটি হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। মশিউর বলছিলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষকেরা আমাদের তৈরি করছেন। যেন বিশ্ববিদ্যালয়জীবন থেকেই পেশাজীবনের জন্য আমরা প্রস্তুত হতে পারি।’

গত বুধবার ঘুরে দেখছিলাম বনানীতে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে আমরা পা রাখি একটি ক্লাসরুমে। অর্থনীতির কঠিন সব বিষয় পড়ছিলেন শিক্ষার্থীরা। ক্লাস শেষে কথা হয় শিক্ষার্থী তাসফিয়া ইসলাম, রাসেল খান ও আরিফ আবরারের সঙ্গে। তাসফিয়া বলেন, ‘ক্লাসরুমে টিচাররা তাত্ত্বিক পড়াশোনার সঙ্গে বাস্তব উদাহরণ দিয়ে পড়ান। কখনো ইতিহাস আবার কখনো অলিম্পিক আর ফিফা বিশ্বকাপের ব্যবসায়িক দিক নিয়েও পড়ি আমরা।’ ক্যাম্পাসের আনাচকানাচে ঘুরতে ঘুরতে পা রাখি বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাঘরে। সেখানে টেবিল টেনিস খেলায় ব্যস্ত একদল শিক্ষার্থী।

ল্যাবে চলছে ক্লাস
ল্যাবে চলছে ক্লাস

শুধু বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই নন, কয়েকজন বিদেশি শিক্ষার্থীর সঙ্গেও দেখা হলো এই ক্যাম্পাসে। সোমালিয়া থেকে এসেছেন সাঈদ মোহাম্মদ হারশি ও রামলা মুহাম্মদ, পড়ছেন বিবিএতে। রামলা বললেন, ‘আমি আন্তর্জাতিক সেবা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চাই। দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ অনেক সাফল্য অর্জন করেছে। সেই দেশেরই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দিত। এখানে হাতে-কলমে ব্যবহারিক অনেক কিছুই শিখতে পারছি।’

বিবিএর ছাত্রী মাহপারা লামিয়া জানালেন, নিয়মিত শিক্ষকদের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত অভিজ্ঞজনেরাও অতিথি হয়ে এখানে ক্লাস নিতে আসেন। স্কুল অব বিজনেস, স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং স্কুল অব লিবারেল আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স—এই তিন স্কুলের অধীনে শিক্ষার্থীরা পড়ছেন। ক্লাসের বাইরেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সূত্রে ভিন্ন ভিন্ন বিভাগে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও বন্ধুত্ব হয়ে যায় ঠিকই।

২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে তিনটি স্কুলের অধীনে আটটি প্রোগ্রামে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী পড়ছেন। বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে কেমন চলছে পড়ালেখা? জানালেন কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশলের ছাত্র কবির হোসেন। ‘টিচার খুব আগ্রহ নিয়ে হাতে-কলমে আমাদের শেখানোর চেষ্টা করেন। হার্ডওয়্যার, ডেটাবেইস, অ্যালগরিদম অ্যানালাইসিস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিকসসহ সময়োপযোগী সব বিষয় সম্পর্কেই আমরা জানতে চেষ্টা করছি।’

কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের পাঠাগার
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের পাঠাগার

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানাল, পড়াশোনায় উৎসাহ দিতে শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে বৃত্তির সুযোগ আছে। ‘ইনফরমেশন সিস্টেমস অডিট অ্যান্ড কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশন’সহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের। এ ছাড়া কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুসারে সাজানো হয়েছে পাঠ্যক্রম। শিক্ষার্থীরা যেন ইন্টার্নির মাধ্যমে সরাসরি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পায়, সে চেষ্টা থাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।

কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রায় সব শিক্ষার্থীই এখানকার আটটি সংগঠনের সদস্য। বিজনেস ক্লাব, ইংলিশ ক্লাব, ল ক্লাবের মধ্য সংগঠনগুলো সারা বছর মাতিয়ে রাখে ক্যাম্পাস।

>
ড. মুহাম্মদ মাহ্ফুজুল ইসলাম
ড. মুহাম্মদ মাহ্ফুজুল ইসলাম
যোগ্য নাগরিক গড়ে তুলতে চাই
ড. মুহাম্মদ মাহ্ফুজুল ইসলাম
উপাচার্য
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

আমাদের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে শিক্ষার্থীদের বাস্তবধর্মী ও প্রায়োগিক জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করা। দক্ষতা ও জ্ঞান এই দুইয়ের সমন্বয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সুশিক্ষা দেওয়ার জন্য যা যা করা দরকার, এই বিশ্ববিদ্যালয় সে কাজগুলো করছে। শিক্ষার্থীদের জন্য কীভাবে আরও বেশি কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করা যায়, আমরা প্রতিনিয়ত সেই চেষ্টা করছি। এখানে অভিজ্ঞ ও যোগত্যাসম্পন্ন শিক্ষকেরা রয়েছেন। তাঁরা নিজ নিজ কর্মস্থানে পরীক্ষিত। সুযোগ ও সময় অনুযায়ী আমরা বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে একাডেমিক বিষয়ে আলোচনা করি, পরামর্শ নিই। গবেষণার জন্যও আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে।