ভূমির আইন নিয়ে পড়ালেখা

>

গতানুগতিক বিষয়গুলোর বাইরেও শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের বিষয় পড়ছেন, নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন। দেশ-বিদেশে তৈরি হচ্ছে কাজের আরও নানা ক্ষেত্র। প্রিয় পাঠক, আপনিও যদি আপনার পড়ার বিষয় সম্পর্কে জানাতে চান, লিখতে পারেন স্বপ্ন নিয়ের ঠিকানায়: স্বপ্ন নিয়ে, প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। ফেসবুক: facebook. com/swapno. nie। ই–মেইল: swapno@prothom-alo. info। লেখার সঙ্গে আপনার পুরো নাম, ঠিকানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম ও ফোন নম্বর উল্লেখ করতে হবে।

রিদওয়ান অনিন্দ্য
রিদওয়ান অনিন্দ্য

৪.০৮। আমার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল। প্রকৌশলে পড়ার খুব ঝোঁক ছিল ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু স্বপ্নের বুয়েটে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগই পেলাম না। কীভাবে, কেন, জানি না; সায়েন্সে পড়ার ইচ্ছাটাই চলে গেল। বিষয় পরিবর্তন করতে চাইলাম। আমার মতো মফস্বল এলাকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে উচ্চমাধ্যমিকের পর ঢাকায় পড়তে যাওয়ার একটা হিড়িক পড়ে যায়। মনে হয় যেন ঢাকা শহরে না পড়লে এলাকায় আর মুখ দেখানো যাবে না! আমারও একই অবস্থা হয়েছিল। আমি রাজশাহী যেতে চাইনি। যা-ই হোক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বি ইউনিট, অর্থাৎ আইন অনুষদের ফরম তোলা হয়েছিল। পরীক্ষা দিলাম। খুব যে আগ্রহ ছিল তা না।

কিন্তু পরীক্ষা দেওয়ার পর সবার মুখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের প্রশংসা শুনে শুনে নিজের মনের মধ্যেও সেখানে পড়ার একটা ইচ্ছা তৈরি হলো। ভাইভার ফল প্রকাশের পর দেখলাম, আমি সুযোগ পেয়েছি একটা নতুন বিভাগে—আইন ও ভূমি প্রশাসন। শুরুতে মনটাই খারাপ হয়ে গেল। ভাবলাম এখানে তো নিশ্চয়ই শুধু ভূমি নিয়ে পড়ানো হবে। আমার বোধ হয় আর বিচারক হওয়া হবে না।

ভুল ভাঙল প্রথম ক্লাসের পরই।

আইন অনুষদে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে নতুন এই বিভাগ খোলা হয়েছে, যার নাম ‘আইন ও ভূমি প্রশাসন’। যত দূর জানি, আমাদের দেশে জুডিশিয়াল সেকশনে যেসব মামলা হয়ে থাকে তার মধ্যে শতকরা ৮৫ ভাগই হয় জমিজমা-সংক্রান্ত। এটি মাথায় রেখেই ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগটি খোলা হয়। শুধু একাডেমিক পড়াশোনাই নয়, বিভিন্ন আইনের ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনের জন্য আমরা কমিউনিটি রিসার্চও করে থাকি। এটি আমাদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয়, উপভোগ্যও বটে। এর ফলে আমরা বিভিন্ন আইনের খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানতে পারছি, পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের দক্ষতাও বাড়ছে। আমরা তাঁদের আইন সম্পর্কে সচেতন করতে পারছি।

একটা নতুন বিভাগের পথচলা শুরুর দিকে মসৃণ হয় না। কিন্তু আমরা ভাগ্যবান যে ভীষণ আন্তরিক শিক্ষক পেয়েছি। শুধু পড়াশোনার ক্ষেত্রেই নয়, বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে তাঁরা যেভাবে আমাদের উৎসাহিত করেন, সেটা অনেক বড় পাওয়া। আমাদের যেভাবে পড়ানো হয়েছে, আমার বিশ্বাস, আমাদের ব্যাচের ছেলেমেয়েরা পাস করে বের হয়ে দেশের আইন সমাজে একটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে।

আমরা ছিলাম আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচ। এবার চতুর্থ ব্যাচে ভর্তি হবে আরও কিছু নতুন মুখ (আসনসংখ্যা মাত্র ৫০)। নতুনদের জন্য শুভকামনা রইল।

রিদওয়ান অনিন্দ্য

আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়