একজন সৃজন

সৃজন ঘোষ
সৃজন ঘোষ

সৃজন তখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। পড়তেন ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুলে। ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবস। এ দিনে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে নানা ধরনের আয়োজন থাকে। তার মধ্যে নির্ধারিত বক্তৃতা একটি। বাবা শম্ভুনাথ ঘোষ সৃজনকে এই অনুষ্ঠানে নিয়ে যান। ইচ্ছা, ছেলেকে নির্ধারিত বক্তৃতায় অংশগ্রহণ করাবেন। ছেলে ছোট। তাই বক্তব্যটা বাবাই লিখে দিলেন। বিষয়: বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ। সৃজন এই বিষয়ের ওপর বক্তৃতা করে প্রথম হলেন। তারপর এই আয়োজন আঞ্চলিক পর্যায়ে হলো। সেখানে চ্যাম্পিয়ন হলেন। জাতীয় পর্যায়ে আয়োজন হলো। সেখানেও চ্যাম্পিয়ন সৃজন। ব্যস, বাবার হাত ধরেই বক্তা থেকে বিতার্কিক হয়ে ওঠার পথে যাত্রা শুরু হলো তাঁর।

বাবার মাথায় অবশ্য তখনো ছেলেকে বিতার্কিক বানানোর ভাবনা ছিল না। কিন্তু মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিয়েই সৃজন বুঝে ফেললেন, গুছিয়ে কথা বলার মধ্যে এক ধরনের আনন্দ আছে।

বিতর্কের হাতেখড়ি হয় ষষ্ঠ শ্রেণিতে। স্কুলে প্রতিবছর বিতর্ক প্রতিযোগিতা হতো। সেবার প্রায় ১৬-১৭টি দল অংশগ্রহণ করে। চ্যাম্পিয়ন হয় সৃজনের দল। স্কুলে পড়ার সময়েই সৃজনদের বিতর্কের দলটি জয় করে নেয় ৮টি চ্যাম্পিয়ন ট্রফি। ব্যক্তিগত অর্জনও আছে। ২০১২ সালে হয়েছেন বিটিভির স্কুল পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ বিতার্কিক।

এসএসসি পাস করে নটর ডেম কলেজে ভর্তি হলেন। নটর ডেম গোল্ডের বিতার্কিক ছিলেন। পড়ালেখার চাপে কলেজ পর্যায়ে বিতর্কে ভাটা পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে শুরু হয় আবার। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপ অব ডিবেটরসের (জিওডি) সদস্য। এর আগে গ্রেগরিয়ান ডিবেটিং ক্লাব এবং নটর ডেম ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি ছিলেন।

সৃজন বললেন, ‘এ বছর নটর ডেম ডিবেটরস লিগে আমাদের দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সর্বশেষ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতাতেও আমরা চ্যাম্পিয়ন।’

যুক্তি-তর্কের সঙ্গে যাঁর আড্ডা, তাঁর লক্ষ্যটা কিন্তু একটু অন্যরকম। সেটা অবশ্য তাঁর পড়ার বিষয়টা থেকে আঁচ করা যায়। সৃজনের মুখ থেকেই শুনুন, ‘ইচ্ছে আছে সিনেমা বানাব। সিনেমা নিয়েই তো পড়ছি। এ ছাড়া আমি সিনেমাবিষয়ক কয়েকটা কোর্স করছি। একটা স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি বানিয়েছি। দেখা যাক কী হয়।’

লক্ষ্যের ব্যাপারেও সৃজনের কণ্ঠে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রত্যয়।