জাতিসংঘে শিক্ষানবিশ

জাতিসংঘের সদর দপ্তরে সহকর্মীদের সঙ্গে লেখক (মাঝে)
জাতিসংঘের সদর দপ্তরে সহকর্মীদের সঙ্গে লেখক (মাঝে)
>কমনওয়েলথ শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যে মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে পড়ছেন শাখাওয়াত শামীম। সম্প্রতি তিনি জেনেভায় জাতিসংঘের সদর দপ্তরে শিক্ষানবিশ হিসেবে চার সপ্তাহ কাজের সুযোগ পেয়েছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা ও জাতিসংঘের দপ্তরে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার প্রক্রিয়া লিখেছেন স্বপ্ন নিয়ের পাঠকদের জন্য।

আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান অনুষদে পড়া অনেক শিক্ষার্থীরই আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় বা জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রকল্পে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন থাকে। কারণ এই পেশ সম্মান ও সম্মানী দুটোই বেশ ভালো। কিন্তু মুশকিল হলো, এ ধরনের চাকরিতে পদসংখ্যা খুব সীমিত। তা ছাড়া চাকরির নিয়োগও হয় অস্থায়ী ভিত্তিতে, নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য। তীব্র প্রতিযোগিতামূলক এই চাকরির জন্য শিক্ষাগত অর্জনের পাশাপাশি বাড়তি কিছু যোগ্যতা থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রাবস্থায় কেউ যদি জাতিসংঘে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার সুযোগ পায়, প্রতিযোগিতায় নিশ্চয়ই সে অনেকটা এগিয়ে থাকবে।

জাতিসংঘের অফিসে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতে হলেও বেশ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা অনেকে জানেই না, এ রকম একটা সুযোগ আছে। সত্যি কথা বলতে, আমিও এ বিষয়ে প্রথম জেনেছি যুক্তরাজ্যে পড়তে এসে। এ বছর গোড়ার দিকে আইন বিভাগের নোটিশ বোর্ডে একটি প্রজ্ঞাপন দেখলাম, আগস্ট মাসে চার সপ্তাহের জন্য শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার সুযোগ আছে। অনলাইনে আবেদন করলাম। প্রাথমিক আবেদনের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্তের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হলো বিশদভাবে। নির্বাচিত হওয়ার জন্য এই উত্তরগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর আমাকে মৌখিক পরীক্ষা দিতে হলো। এই পরীক্ষা আমার কাছে খুব কঠিন কিছু মনে হয়নি। শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা কীভাবে আমার কর্মজীবনে ভূমিকা রাখবে, আমার ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা কী, এসবই তাঁরা জানতে চেয়েছেন। ইংরেজির পাশাপাশি ফরাসি ভাষা জানা থাকলে আবেদন আরও জোরালো হয়। তবে এটা বাধ্যতামূলক নয়।

সব শেষে এ বছরের মার্চ মাসে আমাকে চূড়ান্ত মনোনয়নের খবর জানানো হয়। জুনের মাঝামাঝি সময়ে আবার অনলাইনে নিবন্ধন করতে হয়, এরপর দেওয়া হয় জাতিসংঘের দপ্তরে প্রবেশের জন্য ডিজিটাল কার্ড।

জাতিসংঘে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতে চাইলে ভিসা-প্রক্রিয়ায় তেমন কোনো জটিলতার মধ্যে পড়তে হয় না। লাগে না কোনো ভিসা ফি আর ভিসা আবেদন করতে হয় সরাসরি দূতাবাসে। দুদিন পরই ওয়ার্ক পারমিট ভিসা দিয়ে দেয়। শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজের সুযোগ জেনেভার অফিস ছাড়াও নিউইয়র্ক ও অন্যান্য আঞ্চলিক অফিসেও থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষানবিশ নেওয়া হয় জেনেভায়।

এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো, জাতিসংঘে শিক্ষানবিশদের কোনো মাসিক সম্মানী দেওয়া হয় না। সেটা চার সপ্তাহ হোক, কিংবা সর্বোচ্চ ছয় মাসই হোক। তাই সুযোগ পেলেও শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার পুরোটা সময় জেনেভায় থাকতে হবে নিজের খরচে। জেনেভা ইউরোপের অন্যতম ব্যয়বহুল শহর। তবে ছাত্রদের জন্য কম খরচে থাকার হোস্টেল আছে, আছে কম খরচে খাবারের ব্যবস্থাও। ইউরোপ আর মার্কিন শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে আংশিক বা পুরো খরচ অনেকাংশে তাঁদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বহন করে। আমারও আংশিক খরচ আমার বিশ্ববিদ্যালয় বহন করেছে।

এটা সত্যি, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এই ব্যয়ভার বহন করা কষ্টসাধ্য হবে। তবে বাংলাদেশ থেকে কোনো শিক্ষার্থী এই সুযোগ পেলে তিনি নিশ্চয়ই আর্থিক অনুদানের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। ভারত থেকে অনেক শিক্ষার্থী অনুদান নিয়ে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতে আসেন, তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। তবে শিক্ষানবিশদের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা একেবারেই কম।

জাতিসংঘের যেহেতু অনেকগুলো অঙ্গ সংস্থা, তাই পড়াশোনার বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত সংস্থায় আবেদন করতে হয়। কাজের ধরনও নানা রকম। এখানে কাজ করার অভিজ্ঞতা এককথায় বৈশ্বিক। যে যেই সংস্থাতেই কাজ করুক না কেন তাকে কাজ করতে হবে, ভাবতে হবে সে বিষয়ের বৈশ্বিকতা নিয়ে। এই অভিজ্ঞতাই পরবর্তীকালে পেশাজীবনে খুব কাজে লাগে।

কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করার স্বপ্ন যাঁদের, তাঁদের অবশ্যই এই সুযোগের জন্য চেষ্টা করা উচিত। জাতিসংঘের শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতে চাইলে এ-সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য ও প্রজ্ঞাপন পাওয়া যাবে এই ওয়েব ঠিকানায়: goo.gl/RkZ226