গান আর এক কাপ চা

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত সংগঠন ভৈরবীর সদস্যরা। ছবি: সিফাত আলম
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত সংগঠন ভৈরবীর সদস্যরা। ছবি: সিফাত আলম

আড্ডা হোক বা গান, সঙ্গী হিসেবে চায়ের বিকল্প নেই বললেই চলে। আর জায়গাটা যদি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া, তাহলে তো জমেই গেল! ঘণ্টাখানেক সময় চোখের পলকেই কেটে যায়। পড়াশোনার ফাঁকে কিছু অবসর চুরি করতেই ক্যাফেটেরিয়ায় আড্ডা ও গানের সমন্বয় ঘটায় এক কাপ চা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) সংগীত সংগঠন ভৈরবী ৬ সেপ্টেম্বর আয়োজন করেছিল এক সংগীত সন্ধ্যার। অনুষ্ঠানের নাম? এক কাপ চা!

সেদিন গানের সঙ্গে জমেছিল আড্ডাও। ভৈরবীর সদস্য, পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের কৌশিক আহমেদ সুরে সুরে বলেন, ‘এক কাপ চায়ে চুমুক দিয়ে যাই, ক্লান্তি অবসাদের অবসান চাই। আড্ডায় গানে গানে সুরের খেলায়, এসো সবাই মিলে এক সুরে গান গেয়ে যাই।’

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে ভৈরবীর সদস্যরা গানের সুরে মাতিয়ে রাখেন ক্যাফে ও তার চারপাশ। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামে, তবু যেন গানের আশ মেটে না। বাড়িয়ে বলা হচ্ছে বলে মনে হতে পারে, তবে রাত পর্যন্ত টইটম্বুর ক্যাফে দেখে কিন্তু মোটেও কারও তেমনটা মনে হয়নি। শিক্ষার্থীদের ভিড় আর তুমুল উৎসাহ দেখে বোঝা গেল, বহুদিন পর প্রতীক্ষিত এক সন্ধ্যা পেল গোটা ক্যাম্পাস।

প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে চলল গান। গান শুনিয়েছেন খুবির বিভিন্ন বর্ষে পড়ুয়া ভৈরবীর সদস্য ও শিক্ষকেরা। গানের সঙ্গেই তাল মিলিয়ে চলে আড্ডা। শিক্ষক ও ভৈরবীর সাবেক সদস্যরা স্মৃতিচারণা করেন, বলেন ভৈরবীর সঙ্গে তাঁদের আবেগ জড়ানো মুহূর্তগুলোর গল্প। ভৈরবীর পাঁচ প্রজন্মের এই মিলনমেলায় সাধারণ একটা সন্ধ্যাও উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।

এগারো বছর ধরে খুবি প্রাঙ্গণকে বাংলা গানের সুরে বেঁধে রাখার দায়িত্বে আছে খুবির সংগঠন ভৈরবী, গানের শুদ্ধ চর্চা যার লক্ষ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশনের পালা এলেই অন্যান্য গানের সংগঠনের সঙ্গে ভৈরবী থাকবেই। একক অনুষ্ঠানেও কম যায় না। ৩৫ জন সক্রিয় সদস্য ও শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত ভৈরবীর উপদেষ্টামণ্ডলী ক্যাম্পাসকে সংস্কৃতির রঙে রাঙিয়ে তোলেন বারবার। ভৈরবী সম্পর্কে এর সাবেক প্রধান সমন্বয়ক স্থাপত্য বিভাগের ১১তম ব্যাচের অরূপ কুমার নাগ বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর ভৈরবী এখন মনে হয় অন্যতম ভালো সময় কাটাচ্ছে। আর তার প্রমাণ পাওয়া যায় ‘এক কাপ চা’–এর মতো উৎসবমুখর আয়োজনে।

গান ও আড্ডার ফাঁকে ভৈরবীর নতুন কমিটিও ঘোষণা করা হয়, বরণ করে নেওয়া হয় নবীন এক তরুণ দলকে। সামনের দিনগুলোতে তাঁরাই ভৈরবীর নেতৃত্ব দেবেন। অনুষ্ঠান কতটুকু সফল হলো, সে প্রসঙ্গে ভৈরবীর সদ্য সাবেক হওয়া প্রধান সমন্বয়ক ভাস্কর্য বিভাগের রূপক কুমার সাহা বলেন, ‘আয়োজনটা অনেক দিন ধরেই করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু নানা বাধাবিপত্তির জন্য হয়ে উঠছিল না। অবশেষে অল্প সময়ের প্রস্তুতিতে বেশ সফলভাবেই সেটা করতে পেরেছি মনে হচ্ছে। প্রোগ্রাম চলাকাল থেকেই অনেকে অভিনন্দন জানাতে শুরু করেন সুন্দর একটি সন্ধ্যা উপহার দেওয়ার জন্য। যেমনটা চেয়েছিলাম, সেভাবেই আয়োজন করতে পেরেছি।’ একই সুরে ভৈরবীর সদস্য ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের পম্পি পাল বলেন, ‘আমাদের ভৈরবী পরিবারের অনুষ্ঠান সবার এত ভালোবাসা পাবে ভাবতেই পারিনি। প্রত্যেক সদস্য মনপ্রাণ দিয়ে একটা ভালো আয়োজন করতে চেয়েছিলেন দেখেই এটা সম্ভব হয়েছে।’