'এ' পেয়েছে সেই রফিকুল

রফিকুল ইসলাম।  প্রথম আলো
রফিকুল ইসলাম। প্রথম আলো

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে মুখ দিয়ে লিখে পরীক্ষা দেওয়া দুই হাতবিহীন সেই রফিকুল ইসলাম প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় ‘এ গ্রেড’ পেয়েছে। গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) ভাটিয়ারী হাজী টিএসি উচ্চবিদ্যালয়কেন্দ্রে সে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। রফিকুল ইসলাম ভাটিয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। গত সোমবার প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল ঘোষিত হয়।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে ভাটিয়ারী ইউনিয়নের পূর্ব হাসনাবাদ গ্রামের বালুর রাস্তা এলাকায় রফিকুলে বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, ১০ বর্গফুটের একটি ঝুপড়ি কক্ষে তিন ভাইবোন ও বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে সে। ওই এক কক্ষের ঘরটিতে থাকতে দিয়েছেন রফিকুলের নানি। নানির সঙ্গে রফিকুল বাড়ির সামনেই ছিল। বাবা বজুলর রহমান ও তার মা রোজী আকতার দুজনেই কাজে গিয়েছেন।

কথা হয় রফিকুলের সঙ্গে। সে জানায়, তার গ্রেডিং পয়েন্ট ৪ দশমিক ৮৩। তাতে সে খুশি। জানুয়ারিতে সে ভাটিয়ারী টিএসি উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায়।

রফিকুলের বাবা বজলুর রহমান বলেন, দিনমজুরি করে সংসার চালান তিনি। ছেলের ফলাফলে অত্যন্ত খুশি তিনি। কিন্তু খুশির চেয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে বেশি। কারণ ছেলেকে কীভাবে পড়াবেন।

ভাটিয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, দুই হাত থাকলে নিশ্চিত সে জিপিএ-৫ পেত। দুই হাত নেই। অথচ মনোবল দৃঢ় থাকায় সে আজ এ ভালো ফলাফল করেছে।

এদিকে গত ১৯ নভেম্বর সকল বাধা তুচ্ছ করে শিরোনামে রফিকুলের পরীক্ষা দেওয়ার একটি সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয় প্রথম আলোতে। সংবাদটি পড়ে এক ব্যক্তি রফিকুলের জন্য দুটি স্কুল ড্রেস, খাতা-কলম কিনে দেন। এ ছাড়া জাহাজভাঙা শিল্প মালিক সিরাজদ্দৌলা তার পরবর্তী পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বজলুর রহমান।

২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর ভাটিয়ারী বাজার এলাকায় নির্মাণাধীন একটি পদচারী–সেতু পার হওয়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই হাত হারায় রফিকুল। ২ মাস ১৯ দিন চিকিৎসাধীন ছিল সে।