তামান্নাকে নিয়ে বড় আশা

>

এক পা দিয়ে কলম ধরে পরীক্ষা দিচ্ছে তামান্না আক্তার।  ছবি: প্রথম আলো
এক পা দিয়ে কলম ধরে পরীক্ষা দিচ্ছে তামান্না আক্তার। ছবি: প্রথম আলো

পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পেয়েছে। গতকাল এসএসসির প্রথম পরীক্ষাও ভালো হয়েছে।

জন্ম থেকে দুটি হাত নেই। নেই ডান পা। যে একটি পা আছে, তা দিয়ে লিখেই সে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। গতকাল শনিবার শুরু হওয়া এসএসসির বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসেই পরীক্ষা দিয়েছে মেয়েটি।

তার নাম তামান্না আক্তার। সে ঝিকরগাছার পানিসারা গ্রামের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন দম্পতির মেয়ে। তামান্না বাঁকড়া জনাব আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।

রওশন আলী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। খাদিজা পারভীন গৃহিণী। তাঁদের তিন ছেলেমেয়ে। তামান্না সবার বড়। ছোট মেয়ে মুমতাহিনা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ছেলে মুহিবুল্লার বয়স চার বছর।

তামান্নার ইচ্ছা, মানুষ হওয়ার। সে জন্য সে চিকিৎসক হতে চায়। মানুষের সেবা করতে চাই। সে জানায়, তার পথচলায় মা-বাবা ছাড়াও স্কুলের শিক্ষক ও বন্ধুরা তাকে সহযোগিতা করে।

তামান্নার মা জানান, ২০০৩ সালের ১২ ডিসেম্বর তামান্নার জন্ম। মেয়ের জন্মের পর কষ্ট পেয়েছিলেন। পরে ভেবেছেন, ওকে কারও বোঝা হতে দেওয়া ঠিক হবে না। ছয় বছর বয়সে ওর পায়ে কাঠি দিয়ে লেখানোর চেষ্টা করলেন। কলম দিলেন। কাজ হলো না। পরে মুখে কলম দিলেন। তাতেও কাজ হলো না। পরে সিদ্ধান্ত নিলেন, ওকে পা দিয়েই লেখাতে হবে। এরপর বাঁকড়া আজমাইন এডাস স্কুলে ভর্তি করলেন। মাত্র দুই মাসের মাথায় তামান্না পা দিয়ে লিখতে শুরু করল। ধীরে ধীরে ছবি আঁকা শুরু করল।

খাদিজা পারভীন জানান, ২০১৩ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) জিপিএ-৫ পায় তামান্না। বৃত্তিও পায়। এরপর জেএসসি পরীক্ষাতেও সে জিপিএ-৫ পায়। এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘তামান্না এবারও পরীক্ষায় ভালো করবে। ওকে নিয়ে আমি আশাবাদী।’

তামান্নার বাবা রওশন আলী বলেন, তামান্নার জন্মের পর থেকে নানা প্রতিকূলতার মোকাবিলা করতে হয়েছে। তারপরও হাল ছাড়েননি। মেয়েটার জন্য কোনো কাজ করতে পারেন না। সারাক্ষণ খেয়াল রাখতে হয়। শরীরে একটা মশা পড়লেও তাড়াতে পারে না। প্রতিদিন তিনি ও তাঁর স্ত্রী ভাগাভাগি করে মেয়েকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে স্কুলে দিয়ে আসতেন আবার ছুটি শেষে বাড়িতে নিয়ে আসতেন। তামান্নার শ্রবণ ও মেধাশক্তি খুব ভালো। এবারও পরীক্ষায় সে ভালো ফল করবে বলে তাঁর প্রত্যাশা।

বাঁকড়া জনাব আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হেলাল উদ্দীন বলেন, তামান্না প্রতিবন্ধী। সে অত্যন্ত মেধাবী। পা দিয়ে লেখে।
ওর লেখা স্পষ্ট, দৃষ্টিনন্দন। তামান্নার জন্য একটি ছোট চৌকি তৈরি করা হয়েছে। সেই চৌকিতে বসে সে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। প্রথম পরীক্ষা সে ভালো দিয়েছে।