মাধ্যমিকে ছেলেদের ঝরে পড়া বেড়েছে

মাধ্যমিকে সার্বিকভাবে ঝরে পড়ার হার কমলেও এখনো ৩৭ দশমিক ৬২ শতাংশ শিক্ষার্থী দশম শ্রেণি শেষ করার আগেই ঝরে পড়ছে। এর মধ্যে আবার এক বছরের ব্যবধানে ছেলেদের ঝরে পড়ার হার আড়াই শতাংশ বেড়েছে।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ‘বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য-২০১৮’–এর প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। নতুন তথ্য বলছে, এখন মাধ্যমিকে ছেলেদের ঝরে পড়ার হার ৩৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ; যা আগের বছর ছিল ৩৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ছাত্রীদের ঝরে পড়ার হার ১ শতাংশের কিছু বেশি কমলেও এখনো সেই হার ৪০ দশমিক ১৯ শতাংশ।

গতকাল রোববার রাজধানীর নীলক্ষেত-পলাশীর মাঝামাঝিতে অবস্থিত ব্যানবেইস ভবনে আয়োজিত কর্মশালায় দেশের শিক্ষা খাতের সংখ্যাগত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়।

তবে কী কারণে এবার ছাত্রদের ঝরে পড়ার হার বেড়েছে, এ তথ্য উল্লেখ নেই ব্যানবেইসের প্রতিবেদনে। ব্যানবেইসের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, এ প্রতিবেদনে শুধু শিক্ষার সংখ্যাগত তথ্যই তুলে ধরা হয়।

অবশ্য এর আগে ২০১১ সালে মাধ্যমিকে ঝরে পড়ার কারণ জানতে একটি জরিপ করেছিল ব্যানবেইস। তাতে দেখা গিয়েছিল, অভিভাবকদের নিম্ন আয়, বাল্যবিবাহ ও দারিদ্র্যই এর অন্যতম কারণ। অল্প বয়সে যেসব মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়, তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশই ঝরে পড়ে। এর আগে এ প্রতিবেদকও বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গিয়ে ঘুরে এসব কারণের কথাই জানতে পারেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মাধ্যমিকে ছেলেদের ঝরে পড়ার বড় একটি কারণ হলো জীবিকায় প্রবেশ করা। তাঁরা গবেষণায় দেখেছেন, এই বয়সী ছেলেরা এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়ে যায়। যেমন নরসিংদী এলাকায় মাধ্যমিক পড়ুয়া অনেক ছেলে তাঁতের কাজে যুক্ত হয়। আবার চা-বাগান এলাকায় অনেকে চা তোলার কাজে, কোথাও ধান কাটার মৌসুমে ধান কাটায় যুক্ত হয়। এভাবে বিদ্যালয়ে না যেতে যেতে ঝরে পড়ার দিকে যায়।

আর মেয়েদের ঝরে পড়ার বড় কারণ হলো চলাফেরায় নিরাপত্তাহীনতা, বাল্যবিবাহ, পর্যাপ্ত স্যানিটেশনের অভাব ইত্যাদি। এ জন্য সুষম পরিকল্পনা করতে হবে অর্থাৎ কোন এলাকায় কী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তা–ই করতে হবে।

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

মাদ্রাসায় ছাত্রীদের হার সবচেয়ে বেশি

শিক্ষা তথ্য-২০১৮ প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষায় মোট শিক্ষার্থী প্রায় পৌনে দুই কোটি। এর মধ্যে ছাত্রী ৫০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মাধ্যমিক স্তরের ২০ হাজার ৪৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রী প্রায় ১ কোটি পৌনে ৫ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ৫৪ শতাংশ ছাত্রী। কলেজেও এখন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে প্রায় সমতা অর্জন হতে চলেছে। নতুন তথ্য বলছে, কলেজে এখন ছাত্রীদের হার ৪৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। তবে মাদ্রাসায় ছাত্রীদের অংশগ্রহণ আরও বেশি। বর্তমানে ৯ হাজার ২৯৪টি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী পৌনে ২৪ লাখ। এর মধ্যে ৫৫ দশমিক ২৬ শতাংশ ছাত্রী।

কর্মশালায় প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন ব্যানবেইসের বিশেষজ্ঞ শেখ মো. আলমগীর। ব্যানবেইসের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে অনলাইনে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরে আবার সেগুলো যাচাই করা হয়। এ কর্মশালার আলোচনার পর চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে।

প্রশিক্ষিত শিক্ষকের ঘাটতি

মাধ্যমিকের মোট শিক্ষকের ৬৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রশিক্ষিত। গতবারের চেয়ে প্রশিক্ষিত শিক্ষক প্রায় ৩ শতাংশ বেড়েছে। তবে ৩৩ শতাংশ শিক্ষকের প্রশিক্ষণ নেই। অথচ গুণগত শিক্ষার জন্য গুণগত মানের শিক্ষক সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিও মানসম্মত শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘যত কিছুই লক্ষ্য ঠিক করি, তার মূলে রয়েছে মানসম্মত শিক্ষা। আর যখন মানসম্মত শিক্ষা বলব, তখন পড়াশোনার বাইরেও আরও অনেকগুলো দিক রয়েছে। সেটি যদি হতে হয়, তাহলে মানসম্মত শিক্ষক প্রয়োজন।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদ্রাসাশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর প্রমুখ।