ফুল ফুটুক আর না ফুটুক

‘ঠাস্ ঠাস্ দ্রুম্ দ্রাম্, শুনে লাগে খট্​কা—/ ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পট্​কা!’ লিখেছিলেন সুকুমার রায়। দ্রুম্ দ্রাম্​ করে ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো গত বুধবার সরব হয়েছিল বসন্তবরণ উৎসবে। কেমন ছিল দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসের বসন্ত উৎসবের আয়োজন?

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি

ক্লাস, পরীক্ষার মধ্যেও উচ্ছ্বাস অমলিন

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে বসন্তের ছোঁয়া লাগে পয়লা ফাল্গুনেরও আরও আগে থেকেই। ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই যখন একদল ছেলেমেয়ে কাগজ, রং, বাঁশ, স্কচটেপ ইত্যাদি নিয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন, কাউকে বলে দিতে হয় না, তারা নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের (এনএসইউএসএস) সদস্য। উৎসব তো কেবল একটা দিন, কিন্তু এই মহাযজ্ঞ আয়োজন করতে প্রায় এক মাস আগে থেকে শুরু হয়ে যায় এনএসইউএসএসের পরিকল্পনা। শুধু তো উৎসবের পরিকল্পনা করলেই হয় না, সাজাতে হয় পুরো ক্যাম্পাস!

এবার পয়লা ফাল্গুনের আগেই প্লাজায় চোখে পড়ছিল বিশাল এক জিরাফ, রঙিন একটি ট্রাক। সবই ছাত্রছাত্রীদের হাতে বানানো। অবশেষে ১৩ ফেব্রুয়ারি যখন এল কাঙ্ক্ষিত দিন, দলে দলে ছাত্রছাত্রীরা আসতে শুরু করলেন সকালবেলায়। একদিকে চলছিল ক্লাস, পরীক্ষা, অন্যদিকে নাচ, গান, শোভাযাত্রা, যাত্রা...! ছিল পিঠা, ফুল, আরও নানান কিছুর স্টল।

আয়োজক এনএসইউএসএসের সভাপতি ফারহান মোরশেদ খান বলেন, ‘এটা আমাদের কাছে শুধু একটা উৎসব নয়, বাংলা সংস্কৃতিচর্চার উপলক্ষও।’

শাহরিয়ার শুভ্র

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

উৎসব-আনন্দে বসন্তবরণ

সকাল থেকে হলুদ ও বাসন্তী রঙের পোশাক পরে তরুণ-তরুণীরা ক্যাম্পাসে আসতে থাকেন। তরুণীদের কারও মাথায় ছিল পলাশ ফুল ও টায়রা। সকালে মানুষ কম থাকলেও বিকেল থেকে যেন ক্যাম্পাসে মানুষের ঢল নামে। বিশ্ববিদ্যালয়সহ শহর থেকে আগত অনেকে ভিড় জমান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনীয় স্থানগুলোতে।

বরাবরের মতো বসন্তবরণ উত্সবে সবার চোখ ছিল চারুকলা অনুষদে। আয়োজনের অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষদ প্রাঙ্গণ থেকে শোভাযাত্রা বের করা হয়। এটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা পুরোনো কাঁথা পুড়িয়ে প্রতীকীভাবে শীতকালকে বিদায় জানান।

বিকেলে অনুষদের মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বসন্তবরণ উৎসব ছাড়াও ছিল পিঠা উৎসব ও চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। বিভিন্ন ধরনের পিঠা দেখতে ও স্বাদ নিতে পিঠার স্টলগুলোয় সকাল থেকেই ছিল দর্শনার্থীদের আনাগোনা। অনুষদের শিক্ষার্থীদের চিত্রকর্ম নিয়ে আয়োজিত প্রদর্শনীও আগ্রহ নিয়ে ঘুরে দেখছিলেন দর্শনার্থীরা।

বসন্তবরণের আয়োজন সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেন, বেলা তিনটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত খুবই উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল। শিক্ষার্থীরা দিনভর নেচে–গেয়ে বসন্তকে বরণ করেছেন। বিশেষ করে নবীন শিক্ষার্থীদের উৎসাহ ছিল বেশি।

আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ