আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্যারিয়ারের পথ

এ লেভেল কিংবা উচ্চমাধ্যমিক পাস করে বছরের যেকোনো সময় একজন শিক্ষার্থী ফাউন্ডেশন ডিপ্লোমার মাধ্যমে এসিসিএ শুরু করতে পারেন। ছবি: খালেদ সরকার
এ লেভেল কিংবা উচ্চমাধ্যমিক পাস করে বছরের যেকোনো সময় একজন শিক্ষার্থী ফাউন্ডেশন ডিপ্লোমার মাধ্যমে এসিসিএ শুরু করতে পারেন। ছবি: খালেদ সরকার

‘আপনার স্বপ্ন কী?’
এই প্রশ্নে অনেকেই ভাবনায় পড়ে যান। সিরাজগঞ্জের মেয়ে উম্মেল ফাতেমা অবশ্য উত্তর দিতে একটুও সময় নিলেন না। ঝটপট বললেন, ‘আমি একটা বহুজাতিক মোবাইল ফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে চাই।’ লক্ষ্য ঠিক রেখে সেই পথে এগোচ্ছেন তিনি। উচ্চমাধ্যমিক পেরিয়ে চলে এসেছেন ঢাকায়। এখন এসিসিএ করছেন। পড়ছেন এসিসিএ অনুমোদিত ঢাকার একটি ইনস্টিটিউটে। সেই ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাসে বসেই কথা হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে।

এসিসিএ কী

‘অ্যাসোসিয়েশন অব চার্টার্ড সার্টিফায়েড অ্যাকাউন্ট্যান্টস’–এর সংক্ষিপ্ত রূপ হলো এসিসিএ। এটি একটি যুক্তরাজ্যভিত্তিক পেশাদারি প্রতিষ্ঠান, যা ১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ফিন্যান্স ও অ্যাকাউন্ট্যান্সি খাতে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে বিশ্বব্যাপী কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এসিসিএ বাংলাদেশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৮০টি দেশে সব মিলিয়ে ২ লাখ ৮ হাজার এসিসিএর সদস্য আছেন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ ৮৩ হাজার। বাংলাদেশেও এসিসিএর ৩০০–র বেশি সদস্য এবং ৫০০০ শিক্ষার্থী আছেন।

স্নাতক বা স্নাতকোত্তরের মতো এসিসিএ কোনো একাডেমিক ডিগ্রি নয়। এটি একটি পেশাগত দক্ষতার সনদ। এ লেভেল কিংবা উচ্চমাধ্যমিক পাস করে বছরের যেকোনো সময় একজন শিক্ষার্থী ফাউন্ডেশন ডিপ্লোমার মাধ্যমে এসিসিএ শুরু করতে পারেন। অনেক পেশাজীবী কর্মজীবনের পাশাপাশিও বাড়তি দক্ষতা অর্জনের জন্য এসিসিএ করেন। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকলে ফাউন্ডেশন ডিপ্লোমা ছাড়াই সরাসরি এসিসিএতে ভর্তি হওয়া যায়। বিশ্বের অনেক দেশে এটি স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য একটি পেশাগত দক্ষতার সনদ। বিশেষ করে হিসাববিজ্ঞান, ফিন্যান্স বা ব্যবস্থাপনা খাতে যাঁরা সফল ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাঁরা লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য এসিসিএ বেছে নিতে পারেন।

পড়ালেখার নিয়মকানুন

উচ্চমাধ্যমিক বা এ লেভেল পাস করে এসিসিএ শেষ করতে হলে একজন শিক্ষার্থীকে ‘ফাউন্ডেশন ডিপ্লোমা’ দিয়ে শুরু করতে হয়। তারপর অ্যাপ্লাইড স্কিলস লেভেলে এসে একজন শিক্ষার্থী চাইলে স্নাতকের সনদ নিতে পারেন। এই পর্যায়ে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ব্রুকস ইউনিভার্সিটিতে একটি থিসিস এবং আইইএলটিএস স্কোর জমা দিলে, যাচাই–বাছাইয়ের পর এই বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকের সনদ দিয়ে থাকে। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে পারে দেশে বসেই। অনলাইনের মাধ্যমে অক্সফোর্ড ব্রুকস ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী ‘অ্যাপ্লাইড অ্যাকাউন্টিং গ্র্যাজুয়েট’ হিসেবে বিবেচিত হবেন।

এই ধাপ পেরোনোর পর আসে কর্মক্ষেত্রে কাজের অভিজ্ঞতা নেওয়ার পালা। অধিকাংশ শিক্ষার্থী তখন তাঁর কর্মক্ষেত্র বেছে নেন। হাতে-কলমে এই অভিজ্ঞতা জরুরি বলেই এসিসিএকে পেশাগত দক্ষতার সনদ বলা হয়। সব শেষ ধাপটিকে বলা হয় ‘স্ট্র্যাটেজিক প্রফেশনাল’। এই ধাপের জন্য মোট পাঁচটি ‘প্রফেশনাল পেপার’ শেষ করতে হয়। সঙ্গে দরকার হয় ৩৬ মাস, অর্থাৎ ৩ বছর কাজের অভিজ্ঞতা। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই পর্যায়ে এসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও নেওয়া যায়। পুরো প্রক্রিয়ায় বেশির ভাগ পরীক্ষাই সম্পন্ন হয় অনলাইনে, এসিসিএর ‘এক্সাম পার্টনার’ ব্রিটিশ কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে।

চাইলে কোনো শিক্ষার্থী ঘরে বসেই প্রস্তুতি নিয়ে, এসিসিএ বাংলাদেশের মাধ্যমে নাম নিবন্ধন করে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন। চাইলে এসিসিএ অনুমোদিত ইনস্টিটিউট যেমন এলসিবিএস ঢাকা, এডবেজ প্রফেশনালস, বিজ সলিউশনস, স্টেলার স্কুল অব প্রফেশনাল অ্যাকাউন্টিংয়ের একটিতে ভর্তি হয়েও প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারেন। এসিসিএর প্ল্যাটিনাম স্ট্যাটাসপ্রাপ্ত ইনস্টিটিউট এলসিবিএস ঢাকার প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মীর আবদুল্লাহ আল আমিন বললেন, ‘পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে সাধারণত একজন শিক্ষার্থীর ৪ থেকে সাড়ে ৪ বছর সময় লাগে। আমাদের এখানে যাঁরা পড়ছেন, টিউশন ফি, পরীক্ষার ফিসহ সব মিলিয়ে তাঁদের খরচ হবে চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা।’ এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার্থে আছে ‘এসিসিএ প্রফেশনাল ইনসাইটস’ নামের একটি অ্যাপ। এই অ্যাপ থেকেও ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন সহায়তা পাবেন।

২০০৮ সালে ও লেভেল শেষ করে এসিসিএ শুরু করেছিলেন ইউশা আল খন্দকার। এসিসিএর সদস্য হয়েছেন ২০১৪ সালে। এখন তিনি একটি বহুজাতিক মোবাইল ফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠানে ‘ইন্টারনাল অডিট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিশেষজ্ঞ’ হিসেবে কর্মরত আছেন। বলছিলেন, ‘ও লেভেল শেষ করার পর আমার একটা ভিন্ন কিছু করার ইচ্ছে ছিল। যেহেতু এ লেভেল, ও লেভেলে যুক্তরাজ্য পরিচালিত একটি পরীক্ষা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে একাডেমিক সনদ পেয়েছি, তাই পেশাগত দক্ষতার সনদের ক্ষেত্রেও এ ধরনের একটি প্রক্রিয়ার ওপর বিশ্বাস ছিল।’

ইউশার মতো সফল পেশাজীবীদের সামনে রেখেই স্বপ্ন দেখছেন উম্মেল ফাতেমার মতো আরও বহু তরুণ।

এসিসিএ সম্পর্কিত আরও তথ্য জানতে ভিজিট করতে পারেন তাদের ওয়েবসাইট (www.accaglobal.com) অথবা সরাসরি এসিসিএ বাংলাদেশ অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। ঠিকানা: এসিসিএ বাংলাদেশ, ৩৫৫, গুলশান ভবন (৩য় তলা), বীর উত্তম এ কে খন্দকার সড়ক, মহাখালী, ঢাকা ১২১২। ই–মেইল: [email protected]

ফোন: ৯৮৪৪৬৭২, ৯৮৪৪৯৩০