নীতিমালার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন ঢাবি

অভিবাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক নীতিমালা প্রণয়ন নামের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই দল
অভিবাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক নীতিমালা প্রণয়ন নামের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই দল

‘তা বলুন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনুভূতি কেমন?’
‘ভালো। কিন্তু অনেক ঝামেলা!’
মোস্তফা হাসান অনুভূতি জানালেন। দলের অন্য সদস্যরা শুরু করলেন চেঁচামেচি।
‘তোর শাসনামল ভালো ছিল না।’
‘আমার শাসনামল ভালো ছিল।’
লেগে গেল বিতর্ক। কেউ কাউকে ছাড় দেবে না। ওদিকে ওয়াসেক বিল্লাহ চুপচাপ। তাঁর যে প্রধানমন্ত্রী হওয়াই হলো না! অবশ্য তাঁর ভাষায়, তিনি প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও একটা ভালো পদ পেয়েছিলেন—আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি। যাই হোক, অবশেষে পাঁচজনের দলগত সিদ্ধান্তে জানা গেল, মারিয়ার শাসনামলই ছিল সবচেয়ে ভালো। কী সেই শাসনামল? কখন, কোথায় তাঁরা প্রধানমন্ত্রী হলেন?
চলুন, গল্প শুরু করা যাক। মোস্তফা হাসান, মারিয়া মারজুকা, সায়মা রহমান, ওয়াসেক বিল্লাহ ও রবিউল ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। সম্প্রতি তাঁরা ‘অভিবাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক নীতিমালা প্রণয়ন’ শীর্ষক এক প্রতিযোগিতায় চার দেশের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এটি ছিল রিজিওনাল বা আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন। এখন গ্লোবাল, অর্থাৎ বৈশ্বিক পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন এবং সেই স্বপ্ন পূরণের অপেক্ষা! নেটওয়ার্ক অব স্কুলস অব পাবলিক পলিসি, অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ন্যাসপা) এবং ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার ফ্রাঙ্ক ব্যাটেন স্কুলের যৌথ আয়োজনে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়; যা রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয়েছিল। পৃথিবীর ১১টি ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ প্রতিযোগিতায় রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি পদে (প্রধানমন্ত্রী, শ্রম, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি) অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তিনটি পর্ব ছিল। প্রতি পর্বে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের হয়ে কাজ করতে হয়েছে। তিনজন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেই শাসনামল নিয়েই বিতর্ক হচ্ছিল।
প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণ করার বিষয়টাও মজার। সায়মা রহমানের মুঠোফোনে একটি কল এল। পরের ঘটনা তাঁর মুখ থেকেই শোনা যাক। ‘আমাকে বলল, আপনি সায়মা রহমান? আমি বললাম, হ্যাঁ। আসলে আয়োজকেরা কল করেছিল। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না—কোন প্রতিযোগিতা, কিসের আয়োজক!’
সায়মার কথা টেনে নিয়ে মোস্তফা হাসান বললেন, ‘আসলে কাউকে জানানোই হয়নি! মোবাশ্বের স্যার কল করে বললেন পাঁচজনের একটা দল গঠন করে নাম দিয়ে দিতে। আমিও দিলাম। কিন্তু দলের বাকি সদস্যদের জানানোর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম!’
এ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার আটটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংশ নেয় আটটি দল। প্রত্যেক দলে ৫ জন করে মোট ৪০ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দলটির পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলেন তাঁদের বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম এবং দায়িত্বে ছিলেন সৈয়দা লাসনা কবির।
কথার ফাঁকে মারিয়া মারজুকা চূড়ান্ত প্রেজেন্টেশনের দিনে চলে গেলেন। হাত নেড়ে বলছিলেন, ‘প্রথম তিনটা গ্রুপ প্রেজেন্টেশন দিল। আমরা ভাবলাম, ওকে ফাইন। এখনো আমাদের সুযোগ আছে। এর চেয়ে আমাদেরটা ভালো হবে। ভারতীয় দলের প্রেজেন্টেশনের সময় আমরা একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছিলাম। মনে মনে বলছিলাম, সব জলে গেল! চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। বাড়ি চলো।’
‘সেটাই। তাঁদের সঙ্গেই আমাদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ছিল’, যোগ করলেন ওয়াসেক বিল্লাহ।
রবিউল ইসলামের ভাগ্যেও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ জোটেনি! রবিউলের কাছে কিছু জানতে চাওয়া হলে বাকিরা একজোট হয়ে বলেন, ‘আমরা বলছি। ওয়েইট। ও কিছু বলতে শুরু করলে আর থামবে না!’ হেসে উঠলেন বন্ধুদের সবাই।
মোস্তফা বলতে শুরু করলেন, ‘রবিউল হচ্ছে আমাদের লেট লতিফ। সবকিছুতেই তার দেরি। ২৩ ফেব্রুয়ারি আমাদের ফাইনাল। ১৯ তারিখ সে বলে, দোস্ত দেখ না আমার জায়গায় অন্য কাউকে নেওয়া যায় কি না। বোঝেন অবস্থা!’
‘ফাইনালের দিন কিন্তু সবার আগে আমি গেছি!’ রবিউল আত্মপক্ষ সমর্থন করে পাল্টা আক্রমণে মন দিলেন, ‘আর তুমি? তোমাকে যে সবাই এখন মিস্টার ওয়ার্ল্ডওয়াইড ডাকে? নেপালি দলের মেয়েটার সঙ্গে তো তোমর খুব খাতির! চ্যাম্পিয়ন হলাম আমরা সবাই, আর মেয়েটা এসে শুধু মোস্তফাকে খোঁজে। বুঝি না কেন?’
বন্ধুদের খুনসুটি চলতে থাকে। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার জন্য শুভকামনা জানিয়ে আমরা বিদায় নিই।

কোথায় কী সুযোগ
সভা, সম্মেলন ও উৎসব
* ২৯ থেকে ৩০ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি অন ফিউচার অব হায়ার স্টাডি শীর্ষক একটি সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। বিস্তারিত: bit.do/eKFHQ
* ২৮ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে টেকসই ব্লু ইকোনমি বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। টেকসই উন্নয়নের বিভিন্ন ভাবনা নিয়ে দেশ–বিদেশের গবেষক ও শিক্ষার্থীরা এ সম্মেলনে অংশ নেবেন। বিস্তারিত: bit.do/eKFJ3
* ১৪ মার্চ পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের আয়োজনে চলবে নাট্যপার্বণ-২০১৯ নামের একটি সাংস্কৃতিক আয়োজন। আয়োজনে শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় বিভিন্ন নাটক প্রদর্শিত হচ্ছে। বিস্তারিত: bit.do/eKFLw
* ১৭ মার্চ শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রতি আগ্রহী ও দক্ষ করে তুলতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপো ২০১৯ আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ই-কমার্স ও এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ক্লাবের আয়োজনে এই এক্সপোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবেন। বিস্তারিত: bit.do/eKFSh
* ১৪ থেকে ১৬ মার্চ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে এনার্জি ও পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। পাওয়ার ফর প্রোগ্রেস উপপাদ্য সামনে রেখে এই আয়োজনে দেশ–বিদেশের গবেষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেবেন। বিস্তারিত: bit.do/eKFWq